Bangla Golpo [গল্পটা পুরোপুরি কাল্পনিক,এর সাথে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই] আমাদের পৃথিবী(Earth) ছাড়াও কি অন্য কোনো সৌরজগৎ বা গ্রহে প্রাণ থাক...
Stories _Unknown
2021-11-21
Bangla Golpo
[গল্পটা পুরোপুরি কাল্পনিক,এর সাথে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই]
আমাদের পৃথিবী(Earth) ছাড়াও কি অন্য কোনো সৌরজগৎ বা গ্রহে প্রাণ থাকতে পারে? বা পৃথিবীর মতো অন্য কোন গ্রহ থাকতে পারে? অথবা আপনার বা আমার মতো একদম হুবহু দেখতে মানুষ কি অন্য কোন এক সৌর জগতে বসবাস করছে? এটাও কি সম্ভব? বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, এটা সম্ভব।আর এই ধারনা থেকেই আসে প্যারালাল ওয়ার্ল্ড বা প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরি।অবশ্য এই থিওরির বীপরিতে অনেকের মতবাদ আছে।
নির্দিষ্ট সংখ্যার প্যারালাল ইউনিভার্সকে মাল্টিভার্স বলা হয়।বিগ ব্যাং থিওরির পর থেকেই প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের জানার আগ্রহ বেড়ে যায়।অনেকের মতে,এই মহাবিশ্বে আমাদের সৌরজগৎ বা পৃথিবী গ্রহের মতো হুবহু আরও অনেক সৌরজগত এবং গ্রহ রয়েছে।প্যারালাল ইউনিভার্সের ধারণা অনুযায়ী, হয়তো এই গ্রহে আপনি একজন ডাক্তার হলে অন্য প্যারালাল বিশ্বের গ্রহে আপনি একজন ক্রিকেটার হতে পারেন।আবার আমারা যা কল্পনা করি তা হতে পারে অন্য কোন মাল্টিভার্স-এর রিয়ালিটি।
প্যারালাল ইউনভার্স সম্পর্কে অনেকর দ্বিমত পোষণ থাকলেও অনেকেই এটা নিয়ে গবেষণা করে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।তেমনি একজন সফল গবেষক বাংলাদেশের আনোয়ার হোসেন।আনোয়ার হোসেনের বয়স প্রায় ৬৫ ছুইছুই,পরিবার বলতে তার শুধু রয়েছে ছোট ৬ বছরের একটা নাতিন নাম হিমেল।আজ দাদু নাতিন মিলে আনোয়ার হোসেনের ল্যাবে এসছে।ল্যাবে আজ কেউ নেউ,ল্যাবের অন্যনো সহকর্মিকে আজ ছুটি দিয়েছেন আনোয়ার হোসেন।
ল্যাবে এসেই ছোট হিমেল হা করে আছে,তার দাদু আনোয়ার হোসেন তার নাতির এভাবে হা করা দেখে একহাত দিয়ে মুখটা বন্ধ করে দিল আর বলল...
দাদুভাই আমি জানি আজ তুমি এখানে প্রথম তবে এভাবে থাকলে যে মুখে মশা ডুকবে আর মশা পেটে গেলে আর মারতে পারবা না ভিতর থেকেই মশা কামরাবে (আনোয়ার হোসেন)
দাদুর কথা শুনে চোখ বড়বড় এবার নিজের মুখ নিজেই চাপ দিয়ে ধরল হিমেল আর আশপাশটা দেখতে লাগল।তার দাদু একটু মুচকি হাসল আর দেখতে লাগল কি করে তার নাতি।
হিমেল একটু পরপর একেকটা জিনিস তার দাদুর কাছে জিজ্ঞাস করছে আর তার দাদু খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিচ্ছে।যদিও প্রায় সব কিছুই হিমেলের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
একটু পর হিমেল ল্যাবের এক কোণে এসে পৌছায় আর দেখে একটা বৄত্তাকার মেশিনের মত কিছু একটা।কৌতহলী মনে দাদুর দিকে চাওয়ার পর দাদু বলে উঠে ...
এটাই সেই কাঙ্খিত জিনিস যার ফলে আমরা অন্য মাল্টিভার্সে যেতে পারব,তবে এটা এখনো সম্পূর্ণ নয় দাদুভাই(আনোয়ার হোসেন)
দাদুর কথা তেমন না বুঝলেও মেশিনটির দিকে তাকিয়ে হিমেলের চোখ ছলছল করে ওঠে।হঠাৎ হিমেল মেশিনটির একবারে কাছে চলে যায় আর কাছে থেকে মেশনটির বৃত্ত মত জিনিসটা ধরে দেখতে থাকে।তার দাদুও পিছে পিছে ধরতে আসে কিন্তু মেশিনের কাছে যাওয়ার আগে নিচে পরে থাকা একটা তারের সাথে হোচট খায়।তারটি ছিলো একটি লাইন বোর্ডের তার,হ্যাচকা তারে টান লাগতেই লাইনবোর্ডের ইলেকট্রিকাল সটসার্কিট হয়।লাইনবোর্ডের একটি লাইন সেই মেশিনটাতেও গেছে।কিন্তু মেশিনটা সর্টসাকিটে খারাপ হওয়ার বদলে মেশিনের সেই বৃত্তের মধ্যে কালো একটা কিছু তৈরি হয় পুরোটা জুরে।যা বৃত্তর উভয় পাশ থাকে প্রচন্ড গতিতে সব কিছু টানতে থাকে।মুহূতেই যেন ল্যাবের মধ্যে ঝর সৃষ্টি হয়।ছোট হিমেল কোন মত বৃত্তের বাইরে হাত দিয়ে আকড়ে ধরে কিন্তু এতে যেন কোন কাজ হচ্ছেনা।হিমেলের অর্ধেক শরীর বৃত্তের ভিতরে চলে গেছে ।তার দাদু কোনমতে একটা শক্ত টেবিল ধরে আর তার নাতির দিকে একনজর তাকিয়ে এই ঝড়ের মধ্যে ও চেষ্টা করতে থাকে মেইনসুইচ বন্ধ করার।ঠিক সেই মহূর্তে কোথাথেকে যেন একটা বক্স উরে আসে আর হিমেলের কাধে লেগে।ছোট শরির ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে আর হাত ছেড়ে দেয় ।মহূর্তে হারিয়ে যায় বৃত্তের দেই অন্ধকারে ছোট শরীর।
আনোয়ার হোসেন তার নাতির অবস্থা দেখে একটা জোরে চিৎকার দেয়,কিন্তু আনোয়ার হোসেনর চিৎকার শেষ হওয়ার আগেই একটা বিস্ফোরন হয় ল্যাবের মধ্যে।মহূর্তেই হারিয়ে যায় দুটি প্রাণ......
(এটা আমার লেখা সর্বপ্রথম গল্প,জানিনা কেমন হল।চেষ্টা করব প্রতিদিন পর্ব দেওয়ার,লেখায় ভুলগলো দয়া করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
#পার্ট:1
#writer:হিমেল
Unknown
Bangla Golpo পুত্র: বাবা, আমি বিয়ে করতে চাই।💏 পিতা: স্যরি বল্।🤨 পুত্র: কেন!🤔 পিতা: স্যরি বল্।🤨 পুত্র: কিন্তু কেন?🤔 পিতা: আগে স্যরি বল্।...
আমি বিয়ে করতে চাই
2021-11-21
Bangla Golpo
পুত্র: বাবা, আমি বিয়ে করতে চাই।💏
পিতা: স্যরি বল্।🤨
পুত্র: কেন!🤔
পিতা: স্যরি বল্।🤨
পুত্র: কিন্তু কেন?🤔
পিতা: আগে স্যরি বল্।😤
পুত্র: কিন্তু আমার ভুলটা কোথায়?🤔
পিতা: তুই আগে স্যরি বল্।😠
পুত্র: অন্তত কারণটা তো বলো!🧐
পিতা: আগে স্যরি বল্।😬
পুত্র: ঠিকাছে বাবা! স্যরি। 🙏আমি দুঃখিত।🙏
পিতা: এইমাত্র তুই বিয়ের যোগ্য হয়ে উঠলি ব্যাটা। 😎দোষ না-করেও স্যরি বলা শিখে গেছিস তুই।😇 তোর ট্রেইনিং কমপ্লিট। 🤷
অভিনন্দন! 🎉🎈🎊
যা, এবার বিয়ে কর্.....😃😃
ফানি গল্প
Bangla Golpo দারুন একটা গল্প আগে সম্পর্ন গল্পটি পড়ুন। --এই চলো না আমরাবিয়ে করে ফেলি? --কাকে বিয়ে করব? --কাকে বিয়ে করবামানে?আমাকে বিয়ে করবি? ...
গল্পটির নামঃ-বিয়ে পাগলের পাগলি
2021-11-21
Bangla Golpo
দারুন একটা গল্প আগে সম্পর্ন গল্পটি পড়ুন।
--এই চলো না আমরাবিয়ে করে ফেলি?
--কাকে বিয়ে করব?
--কাকে বিয়ে করবামানে?আমাকে বিয়ে
করবি?
--কেনো তোমাকে বিয়ে করব?
--মানে কী?তুমি আমাকে ভালবাসো
না?
--হুম ভালবাসলেই বিয়ে করতে হবে নাকি?
--হুম সবাই তো তাই করে প্রেমের পরে বিয়ে?
--সবাই করে করুক,আমি সবার মত না,কবিগন বলে গেছে, যাদের সাথে প্রেম করবে তাকে কখনোই বিয়ে করবে না।
--কী বলছো এসব?
--হুম ঠিকই বলছি।দাঁত উঠছে?
--কার?
--তোমার?
--মানে?
--মানে তুমি যে বিয়ে করবা তোমার দাঁত উঠছে?
---বিয়ে করার সাথে দাঁতের সম্পর্ক কী?
--আছে সম্পর্ক, আক্কেল মাড়ি উঠছে?
--না মানে সেটা কী?
--থাক,তাহলে আমি বেআক্কেলে মেয়ে বিয়ে করতে পারবো না।
--এই দেখো আমি কিন্তু কেঁদে দিবো?
--এই নাও?
--এটা দিয়ে কী করব?
--যখন কাঁদবে তখন এই টিসু দিয়ে চোখ মুছবে।
.
>যা মেয়েটা সত্যি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।পাগলী একটা বোঝেও না ওকে ছাড়া আমার একমুহূর্ত চলে না।আসলে নাদিয়া যখন বিয়ের কথা বলে তখন আমি ওকে এভাবেই রাগিয়ে দিই, যার ফলে দুই - তিন
দিন কথা বন্ধ।আমাকেই আবার তার অভিমান ভাঙাতে হয়। আজকে মনে হয় একটু বেশীই কষ্ট পেয়েছে। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে বিয়ে করলে তো হয় না,ছোট একটা জব করি কোনরকম মা আর বোন কে নিয়ে
সংসার চলে।মা'র ও শরীর টা তেমন ভাল যাচ্ছে না।
.
--ডাক্তার সাহেব মা"র কী হইছে?
--হার্টের সমস্যা,৩ দিনের মধ্যে অপারেশন করাতে হবে না হলে কোন অঘটন ঘটতে
পারে।
<কথাটা শুনেই বুকের
মধ্যে হু হু করে কেঁদে উঠল,কোন মতে
নিজেকে সামলিয়ে নিলাম।
--কত টাকা লাগবে ডাক্তার সাহেব?
--সব কিছু দিয়ে ৩০ হাজার হলে হয়ে যাবে।
.
কথাটা শুনেই যেনো বাজ পড়ল মাথায়। এত্তগুলা টাকা কোথায় পাবো বুঝতেছি না। গতরাতে একটুও ঘুম হয়নি টাকার টেনশনে।ফোনটাও হারামি করছে
আমার সাথে।না আছে ব্যালেন্স না আছে
চার্জ। নাদিয়া আবার না জানি টেনশন করে
বসে। এমনি তে সেদিন অভিমান করছে।।।
আসলে নাদিয়ার সাথে কথা বলার পর,
বাড়ীতে এসেই দেখি মা অসুস্হ হয়ে
গেছে যার ফলে মা এখন বি- বাড়ীয়া সদর
হসপিটালে ভর্তি
.
অফিসের বসের কাছ থেকে যে টাকা
নিবো তারও উপায় নেই,মাসও পুজতে এখনো দশদিন বাকি।
টাকাতো দিবে না বরং কথা শোনাবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে
বাসায় চলে এসেছি বুঝতে পারিনি।
--ভাইয়া মার কী হইছে?
--তেমন কিছু নারে, সব ঠিক হয়ে যাবে।
--আমি মার কাছে যাবো।
--সন্ধ্যা বেলা এসে আমি তোকে নিয়ে
যাবো।
--ঠিক আছে ভাই,হাতমুখ ধুয়ে আয়খেতে দিই।
>নাহ খেতে ইচ্ছা করছে না,টাকার খোজে
আবার বেরিয়ে পড়লাম। যত সমস্যা কী এই মধ্যবিত্তদেরই হয়,জীবন টা বড়ই কঠিন এই মধ্যবিত্তদের জন্য, নূন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্হা।
.
.
সারাদিন কারো কাছে গিয়েও টাকা পেলাম না।সবাই কোন না কোন অজুহাত দিলো হয়তো ভাবে যদি টাকা ফেরত দিতে না পারি।আসলে বিপদে পড়লে বন্ধু চেনা যায়। নাহ বাড়ীতে আর যেতে ইচ্ছা করছে না। বাড়ীতে গেলেই ছুটকি আবার বায়না ধরবে মার কাছে যেতে। নাহ আজ আর বাড়ীতে
যেতে ইচ্ছা করছে না
.
--কোনমতে পার্কের বেঞ্চেই শুয়েই রাতটা কাটিয়ে দিলাম।
>কাল সারাদিন মাকে দেখতেই যায় নি।
আজ একটু দেখে আসি। নার্সরা এখন আর টাকা না দিলে রোগীর খেয়াল কম রাখে। সব এখন টাকার খেলা। টাকা থাকলে বাঘের চোখও মেলে এখন।টাকা যেখান থেকেই হোক জোগাড় করতে হবে সেটা ডাকাতি কিংবা চুরি করে।
.
>হসপিটালে ঢুকতেই ডাক্তার সাহেবের সাথে দেখ্খা।
--ডাক্তারসাহেব,,,মা,কেমমমমমম,,,?(কথাটাশেষ নাকরতেই,ডাক্তারসাহেববলতে লাগল)
---আরে আবির সাহেব যে,আপনার মা সুস্হ আছে। কোন সমস্যা নাই কিছুদিন পরেই আপনার মা কে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
--মা সুস্হ, অপারেশন কীভাবে কিছুই তো
বুঝতেছি না।আমি তো টাকা দেয়নি।
--আপনার স্ত্রী এসেই তো গতরাতে টাকা
জমা দিলো।তাই দেরি না করে গতরাতেই অপারেশন করে দিলাম।
--আমার স্ত্রী মা,মা,মানে,,,?
---আরে আবির সাহেব আর মানে মানে করা লাগবে না।যান মায়ের কাছে যান।
>কিছুই মাথায় ঢুকতেছে না।কিভাবে কী
হলো।
--ভাইয়া তুই এসেছিস,
--ছুটকি তুই এখানে,?মা কেমন আছো তুমি?
--এইতো বাবা ভাল আছি।কি অবস্হা করেছিস শরীরের তুই।
--না মা এইতো ঠিক আছি।
--ছুটকি এদিক আয় তো, কি হয়েছে বলতো
আমাকে।
-- গতরাতে ভাবি নিয়ে এসেছে।
--ভাবি মানে?
--তুই সকালে বেরিয়ে যাওয়ার পর নাদিয়া ভাবি আসছিলো তোর কাছে।তুই নাকি
দুদিন ধরে ফোন বন্ধ রেখেছিস।আর
আমার কাছ থেকে সব শুনে বলল রাতে এসে আমাকে নিয়ে যাবে। তারপরই তো সব হলো।
--হুম বুঝলাম
--ভাইয়া ভাবি টা অনেক সুন্দর।কবে বিয়ে করলিরে, এতো সুন্দর ভাবিকে রাখবি কোথায়।
--এতো বুঝে তোর কাজ নেই।
--ভাইয়া শোন আসল কথা বলতেই তো ভুলে
গেছি,ভাবি তোকে বিকাল ৪ টাই দেখা করতে বলেছে।
--আচ্ছা তুই মা"র কাছে থাক, আমি তোর ভাবির সাথে দেখা করে আসি।
.
>মাথা থেকে যেনো কত বড় একটা
বোঝা নেমে গেলো।যদি কোন ভালবাসার বোঝাটা নামিয়ে দেয় তাহলে তার
সুখরে অনুভূতিটা অন্যরকম।এসব মেয়েকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। আর দৌড়াতে দৌড়াতে বিয়া করা
যায়।
.
বিকাল ৪ টা,,,,, দুজনের মুখে কোন কথা নেই।জানি নাদিয়া কথা বলবে না।তাই আমাকে শুরু করতে হবে,
--নাদিয়া টাকা টা আমি শোধ করে
দিবো আস্তে আস্তে মাসের বেতন পেলে।
--তোমাকে টাকা শোধ করার কথা বলার জন্য এখানে ডাকেনি। (রাগান্বিত কন্ঠে)
--না মানে,
--আমাকে বিয়ে করবা কবে বলো?
--আসলে তোমার টাকাটা শোধ করেনি
তারপরে চিন্তা করব,
--টাকা শোধ করতে পারলে বিয়ে করবা তো?
--হ্যা,না মানে,,,,?
--ঠিকআছে,,,মনে করো ঐ টাকা শশুর বাড়ী থেকে যৌতুক নিছো।
--না আমি যৌতুক নিবো না।
--তাহলে মনে করো ঐ টাকা তোমার শশুর
আমাকে দিছিলো।আর আমি আমার স্বামীকে দিছি।এবার হইছে তো।
--আসলে,,,?
--আসলে তুমি যে কতটা পর ভাবো আমাকে সেটা বোঝা হয়ে গেছে।
তোমার মা"র এই অবস্হা একবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করলে না আমাকে।
--জানই তো ফোনটা বন্ধ ছিলো।
টেনশনে কিছুই মাথায় আসেনা।
--হইছে আর অজুহাত দেখানো লাগবে না।
চলো,,,,,
--কোথায়?
--বিয়ে করতে,,?
--এখন মানে কীভাবে,তোমার বাবা- মা
জানলে,,,?
--যেভাবে আছি সেভাবে।আর বাবা-মা সব জানে।তারা তার মেয়ের সুখের জন্য সব
করতে পারে সেটা তুমি ভালই জানে।
--এভাবে বিয়ে করবা?
--তোমার তো টাকা নেই তাই এভাবেই বিয়ে করব।টাকা যখন হবে তখন ধূমধাম করে করবে,,,
সমাপ্ত গল্প
--কেমন হয়েছে অবশ্য জানাবেন সবাই __
Bangla Golpo #লেখনীতেঃ কথা চৌধুরী❤ কত করে বললাম যে, আমি এই কোচিং-এ যাবো না। তাও আব্বু আমাকে জোর করে ভর্তি করিয়েছেন। আব্বুর বন্ধুর কোচিং সেন্...
গল্প___আই লাভ ইউ টু❤❤
2021-11-21
#লেখনীতেঃ কথা চৌধুরী❤
কত করে বললাম যে, আমি এই কোচিং-এ যাবো না। তাও আব্বু আমাকে জোর করে ভর্তি করিয়েছেন। আব্বুর বন্ধুর কোচিং সেন্টার তাই আমি মানা করা সত্ত্বেও আমাকে জোর করে ভর্তি করলেন। কী আর করার? আব্বুর কথা তো আর অমান্য করতে পারবো না। তাই ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে লাগলাম।
এখন শীতকাল। অতিরিক্ত শীতে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি ক্লাসরুমে। শুনলাম আজকে না-কি আমাদের ট্রায়াল ক্লাস হবে। নতুন টিচার ক্লাস নিবেন। হঠাৎ ক্লাসে স্যার ঢুকলেন। আমি তো পুরো থ হয়ে গেলাম স্যারকে দেখে। পরনে একটা ইয়োলো কালারের জ্যাকেট আর জিন্স সেই সাথে চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। কী যে হ্যান্ডসাম লাগছে উনাকে সেটা প্রকাশ করার মতো ভাষা জানা নেই আমার। আর উনার এলোমেলো চুলগুলো আমার মনকেও খানিকটা এলোমেলো করে দিলো।
ক্লাসে এসে চোখ বুলিয়ে, নিজের সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন। উনার নাম ইয়াসির। উনার মতো উনার নামটাও বেশ সুন্দর। বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক উনি। নিজের পরিচয় দেওয়া শেষ করে পড়াতে লাগলেন। আমি অনেক মনোযোগ দিয়ে উনার ক্লাস করতে লাগলাম। শুধু ক্লাস করলাম বললে ভুল হবে, উনার দিকেও তাকিয়ে ছিলাম। দেখতে যেমন সুন্দর উনার পড়ানোর পদ্ধতিও অনেক সুন্দর। আমি তো পুরো ফিদা হয়ে গেলাম। অনেক ভালো পড়াতে পারেন উনি, একটা ক্লাস করে যা বুঝতে পারলাম।
অনেকদিন হলো উনার ক্লাস করছি। অন্যসব ক্লাসের জন্য একজন ক্যাপ্টেন আর শুধু মাত্র উনার ক্লাসে আমাকে ক্যাপ্টেন করলেন উনি। আমি কৌতুহল নিয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, "স্যার, একজন ক্যাপ্টেন থাকা সত্ত্বেও আপনার ক্লাসে আমাকে কেন ক্যাপ্টেন করলেন?"
একটা হাসি দিয়ে উনি বললেন, "সোনিয়া, তুমি ক্লাসে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। তাই আমার ক্লাসে তুমিই ক্যাপ্টেন।"
উনি যে আমাকে পছন্দ করেন বলে ক্যাপ্টেন করেছেন, সেটা আমি বুঝতেও পারলাম না। উনি যে সুযোগ খোঁজেন আমার সাথে কথা বলার জন্য এটাও আমি ধরতে পারলাম না।
তিন দিনের জন্য আমি নানুর বাসায় বেড়াতে এলাম। সবাই মিলে অনেক মজা করলাম তিন দিন। বেড়ানো শেষ করে বাসায় ফিরে এলাম। কারণ কালকে কোচিং-এ সাপ্তাহিক পরীক্ষা আছে।
পরীক্ষা চলছে আর হলে গার্ড দিচ্ছেন আমার মাস্টার মশাই। আমি মনে মনে উনাকে 'মাস্টার মশাই' বলে ডাকি। আমি আমার মতো পরীক্ষা দিচ্ছি কিন্তু উনি আমার সাথে আজকে একটা কথাও বলছেন না। অথচ যেইভাবেই হোক না কেন আমার সাথে কথা বলার সুযোগ খোঁজেন আর আজকে কোনো কথাই বলছেন না। অদ্ভুদ ব্যাপার? আমি আর কিছু না ভেবে পরীক্ষা দিতে লাগলাম। পরীক্ষা শেষ করতেই আমার বান্ধবীরা আমায় চেপে ধরে বলতে লাগলো, "ঐ সোনিয়া, ইয়াসির স্যারের সাথে তোর কি চলে রে ভাই?"
শয়তান গুলার কথা শুনে আমি তো পুরো হতবাক হয়ে গেলাম। অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কী বলছিস তোরা এসব?"
"আরে, তুই যে তিনদিন আসিসনি স্যার তোর কথা অনেক বার জিজ্ঞেস করেছেন। কেন আসিসনি? কোনো সমস্যা হয়েছে না কি? কবে আসবি? আবলাআবলা।"
ওদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম মাস্টার মশাইকে বলে যাইনি বলে আমার উপর অভিমান করেছেন। আর তাই আজকে কোনো কথাও বলেননি আমার সাথে। এসব ভাবতেই ঠোঁটে আমার লাজুক হাসি ফুটে উঠলো।
আমি তো এবার নবম শ্রেনীতে তারপর বিজ্ঞান শাখায় তাই আম্মুকে বলে উনাকে প্রাইভেট টিউটর করলাম। কারন উনি বিজ্ঞানের বিষয়গুলো অনেক ভালো পড়ান। কিন্তু একবারের জন্যও আমি বুঝতে পারলাম না যে আমার কাছাকাছি আসার সুযোগটা আমি নিজেই করে দিলাম উনাকে।
উনি আমাকে দুপুরের দিকে পড়াতে লাগলেন। আর আমার কোচিং বিকাল ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত। সব সময়ই উনি বই খাতার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাকে অংক করতে দিয়ে ঠিকই চুপিচুপি আমাকে তাকিয়ে দেখেন। আমি যেনো বুঝতে না পারি তাই অংক করতে দিয়ে তাকিয়ে থাকেন।
মাত্র একমাস পড়িয়ে তিনি আর পড়ালেন না আমাকে।কোনো একটা জরুরি কাজে ঢাকায় চলে গেলেন। উনি চলে যাওয়াতে অনেক কষ্ট লাগলো আমার। তবে উনার সাথে ফেইসবুকে কথা হয় মাঝে মাঝে। ইদানীং উনি ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে কী যেন বলতে চান আমায়। আমি সব না বুঝলেও একটু একটু বুঝতে পারলাম যে উনি আমায় পছন্দ করেন। আর মনের কথা সোজাসুজি বলতে পারছেন না। তাই ঘুড়িয়ে পেচিয়ে বলার চেষ্টা করছেন। আমি বুঝে বুঝে শুধু মুচকি মুচকি হাসি আর ভাবি আমার মাস্টার মশাই আমাকে পছন্দ করেন। ইশ, ভাবা যায় এটা? অনেক দিন হয়ে গেলো কিন্তু তাও উনি বলতে পারছেন না। আমার খুব রাগ লাগছে যে ভালোবাসে কিন্তু কেন বলে না?
শেষ মেশ আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পারলাম না। ভাবলাম উনার আশায় যদি বসে থাকি তাহলে এই জন্মেও আর মাস্টার মশাইকে ভালোবাসা হবে না। তাই আজকেই ফেইসবুকে প্রপোজ করবো বলে ঠিক করলাম। যেই ভাবা সেই কাজ, "আপনাকে একটা কথা বলবো?"
"হ্যাঁ, বলো।"
"আই লাভ ইউ।"
অপেক্ষা করছি ফোন হাতে নিয়ে কিন্তু উনার কোনো উত্তরই আসছে না। হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসলো, "আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও।"
"ঠিক আছে।"
আমাকে গুনে গুণে তেরোটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। আমিও সবগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারলাম। তারপর উনি আমাকে বললেন, "প্রশ্নের সঠিক উওর দেওয়ার জন্য পুরষ্কার স্বরূপ আই লাভ ইউ টু"
কী রকম সাংঘাতিক একটা লোক রে বাবা? এই জন্যই টিচারের প্রেমে পড়তে নেই। সবকিছুতেই শুধু প্রশ্ন করে। কিন্তু উনার উত্তর পেয়ে আমি যার পর নাই খুশি হয়েছি। আর লজ্জায় মুচকি মুচকি হাসছি। এভাবেই শুরু হলো আমার আর আমার মাস্টার মশাইয়ের নতুন পথচলা।
_________________ সমাপ্ত _______________________
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
Bangla Golpo #লেখনীতে_কথা_চৌধুরী❤ অন্য সবার মতো আমারও অনেক ইচ্ছে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করবো। আর ইচ্ছে পূরণ করতে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগও প...
Stories__ Don't Judge A Book By It's cover🙂
2021-11-21
Bangla Golpo
#লেখনীতে_কথা_চৌধুরী❤
অন্য সবার মতো আমারও অনেক ইচ্ছে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করবো। আর ইচ্ছে পূরণ করতে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগও পেয়ে গেলাম। আজকে ভার্সিটিতে আমার প্রথম ক্লাস। তাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে ভার্সিটিতে চলে এলাম।
ভার্সিটিতে ঢুকতেই অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করলো সাথে একটা চাপা ভয়ও লাগছে। কারণ আধুনিক এই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই বাহারি বাহারি পোশাক আর সাজসজ্জা করে এসেছে। এদিকে আমি সামান্য সুতি কাপড়ের থ্রিপিস, মাথায় হিজাব, চোখে কালো ফ্রেমের চমশা আর পায়ে নরমাল জুতো ছাড়া তেমন কিছুই পড়িনি। এছাড়া সাজসজ্জা থেকে আমি সবসময় দূরেই থেকেছি।
ক্লাস কোথায় খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু কাউকে জিজ্ঞেস করারও সাহস হচ্ছে না। গুটিগুটি পায়ে হেঁটে অনেক কষ্টে ক্লাস খুঁজে পেলাম। ক্লাসে ঢুকতেই কয়েকজন আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো। আমি বুঝতে পেরেছি আমার পোশাক-আশাকের জন্যই তারা আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে। আমি চুপচাপ দ্বিতীয় সারির তৃতীয় চেয়ারে বসে পড়লাম।
ক্লাস শুরু হয়ে গেল। সবাই ক্লাসে এসে পছন্দ মতো জায়গায় বসলো। কিন্তু আমার পাশে কেউ বসলো না। পুরো সারিতে আমি একাই বসে আছি। এটা আমার জন্য নতুন কিছু না। এসবে আমি অভ্যস্ত তাই একটু খারাপ লাগলেও তেমন কিছু মনে হয়নি আমার। এভাবেই একা একা দিন পার করতে লাগলাম।
ক্লাস টেস্ট নেওয়ার সময় চলে ঘনিয়ে এলো। ক্লাস টেস্ট দিয়ে দিলাম। তিনদিন পর স্যার ফলাফল জানালেন। যখন আমার ফলাফল জানানো হলো, তখন সবাই কিছুটা অবাক হলো। কারণ ক্লাস টেস্টে আমি প্রথম হয়েছি। এরপর থেকে দুই একজন আমার সাথে কথা বললেও আমার পাশে কেউ বসতে চাইতো না। আমি অবশ্য কাউকে আমার পাশে বসার জন্য কখনও বলতাম না। কারণ জানি বলেও কোনো লাভ হবে না। কিন্তু যখন মিড টার্ম পরীক্ষা দেওয়ার পর ফল প্রকাশ হলো, তখন তারা আরও অবাক হলো। কারণ এই পরীক্ষায়ও আমি প্রথম হয়েছি তাও সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে। এরপর থেকে অনেকেই আমার সাথে কথা বলতে লাগলো এবং আমার পাশে এসেও বসতে লাগলো।
ফাইনাল পরীক্ষার সময় তো সবাই মিলে আমাকে ডাকাডাকি করতে শুরু করলো। আমি যেন তাদের পাশে গিয়ে বসি। আমি ওদের কিছুই বললাম না শুধু চুপচাপ ওদের কথা শুনছি আর ভাবছি যে, একদিন কেউই আমার পাশে বসতে চায়নি আর আজ ওরা নিজে থেকেই আমাকে ডাকছে ওদের পাশে বসার জন্য। ওরা কখনও জানতেই পারেনি যে, আমি কোটিপতি বাবার একমাত্র মেয়ে। আমি আমার এই সাধারণ পোশাকের আড়ালে নিজের আসল পরিচয়টা সবসময় লুকিয়ে রাখতাম। কারণ আমি সবসময় চাইতাম সবাই আমাকে ভালোবাসুক আমার যোগ্যতায় আমার গুণে। আমার বাবার অর্থের জোরে নয়। আর পোশাক-আশাক দিয়ে মানুষকে যাচাই করা যায় না বা যাচাই করা উচিতও না।
সমাপ্ত
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)
Bangla Golpo লেখিকাঃতৃষ্ণা_জান্নাত ক্রাশের আগামী পরশু জন্মদিন। এই দিনটাকে যেভাবে হোক কাজে লাগাতেই হবে। অনেক অপেক্ষা করেছি এমন একটা দিনের জন্...
গল্পঃইম্প্রেস
2021-11-21
Bangla Golpo
লেখিকাঃতৃষ্ণা_জান্নাত
ক্রাশের আগামী পরশু জন্মদিন। এই দিনটাকে যেভাবে হোক কাজে লাগাতেই হবে। অনেক অপেক্ষা করেছি এমন একটা দিনের জন্য৷
অনেক কষ্টে তাকে রাজি করিয়েছি পরশু আমার সাথে দেখা করার জন্য। সে রাজি হয়েছে বলেছে তার বাসায় সন্ধ্যার বার্থডে পার্টিতে জয়েন করতে। তার ফ্যামিলি মেম্বার, বন্ধুরা সহ অনেকেই থাকবে। আমি এখন ভাবছি কিভাবে তাকেসহ তার ফ্যামিলিকে পটানো সম্ভব।
'উমমমম! তাকে একলা ছাদে ডেকে সামনে হাটু গেঁড়ে বসে গোলাপ দিয়ে বলব, আই লাভিউ নাকি রিং দিয়ে বলব উইল ইউ ম্যারি মি?'
-ধুর! এসবে কাজ হবে না। এগুলো করে তো ছেলেরা। আর কেউ যদি দেখে ফেলে তবে সর্বনাশ।
তাহলে গিয়ে হাত চেপে ধরে বলবো 'ভাই প্লিজ ফিরিয়ে দিয়েন না আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি আর অনেক ভালোবাসি'
-মাথা পুরাই গেছে। ভাই বললে সে তো বলবে আচ্ছা বোন আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
নাহ্! এভাবে হবে না। আর এতে তো ফ্যামিলির কেউ পটবে না উল্টো ছ্যাচড়া বলবে আমাকে।
কি করা যায়?
-গুগলে সার্চ করা যায়!
কিভাবে বাঙালি মেয়েরা তার পছন্দের মানুষের সাথে প্রথম দেখা করতে যায়, কিভাবে ইম্প্রেস করে তাদেরকে।
সার্চ করার রেজাল্ট তো দেখছি বাঙালি মেয়ে মানেই শাড়ি আরকি শাড়ি'তেই নারী। কিন্তু আমার তো শাড়ি নাই। তাছাড়া আমি শাড়ি পড়তেও পারিনা। আর হাতে একটা টাকাও নাই যে পার্লারে গিয়ে সেজেগুজে আসবো। তাছাড়া গিফ্ট কিনতেও তো কম হলে পাঁচ হাজার টাকা লাগবেই। কি করা যায়!
মা'কে শাড়ির কথা বললে দিবে ঝাটার বারি। একবার মায়ের শাড়ি পড়ে পিকনিকে গিয়েছিলাম বাসায় আসার পর দেখি শাড়ির প্রিন্টের থেকে আমার লাগানো দাগের প্রিন্ট'ই বেশি। সেবার থেকে মা বলেছে শাড়ির নাম বললেই খাবো ঝাটার বারি।
এখন কি করা যায় ভাবছি!
অতঃপর মাথায় দারুন একটা আইডিয়া এসেছে।
মা?
-কি বল?
''তুমি না বলেছিলে সেদিন, ভালো একটা পাত্র আছে। ছেলের বাবা-মা সহ কয়েকজন আসতে চায় আমাকে দেখতে''
-হ্যাঁ বলেছিলাম তো। তুই তো সেটা শুনেই রাগারাগি করে ফ্রিজে, প্রত্যেকটা বাথরুমে, কিচেনসহ সব আলমারিগুলোতে তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে নিজের রুমটাও বন্ধ করে দিলি। বললি যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা তোকে কথা দিচ্ছি যে তোর বিয়ের কথা আমরা তোর পারমিশন ছাড়া ভাববো না ততক্ষণ তুই তোর রুমও খুলবি না আর চাবিও দিবিনা কোনো কিছুর। তারপর থেকে তো আমরা তোর বিয়ের কথা ছেড়েই দিয়েছি ভাবা।
"হ্যাঁ সেটা আমি বলেছিলাম। কিন্তু মা এখন আমি তোমাদেরকে পারমিশন দিচ্ছি যে ছেলেপক্ষকে আসার জন্য আমাকে দেখতে।"
-ওরে বাবা! হঠাৎ কি এমন হলো শুনি যে আপনি যেচে পড়ে এসে বিয়ের কথা বলছেন?
"মা! তুমি কি চাও আমি আজীবন তোমাদের বোঝা হয়ে থাকি? পাড়াপ্রতিবেশি তোমাদের কথা শুনাক?"
-অবশ্যই চাই না। আর তুই তো আমাদের কাছে বোঝা না। সন্তান কখনও বোঝা হয়।
"হ্যাঁ তা ঠিক। তবে তোমাদেরও তো বয়স হয়েছে জামাইয়ের মুখ দেখতে তো ইচ্ছে করে। তাই বলছিলাম যে তোমারা তাদেরকে পরশু সকালেই আসতে বলো।"
-পরশু? পরশু সকালেই কেন? তাদের সময়ের বিষয় আছে না!
"তাদেরকে তো পরশু বলবে না। তাদেরকে এখন কল করে বলবে যে পরশু বিকেলে আসতে। তাহলে তারা পরশু ফ্রী হয়ে থাকবে।"
-পরশুই কেন তাদের আসতে হবে। পরে আসলে সমস্যা কি?
"না মা পরশুই লাগবে৷ তারপর হলে কিন্তু আমি পারবো না।"
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখতেছি।
"আর একটা কথা!"
-বল?
"আমি কিন্তু ঐদিন তোমার একটা শাড়ি পড়বো আর পার্লারে গিয়ে সাজবো। টাকা কিন্তু তুমি দিবে।"
-আচ্ছা ঠিক আছে।
অবশেষে পার্লারে এলাম।
বিউটিশিয়ান আপু জিজ্ঞেস করলেন "আপু কিভাবে সাঁজতে চান?"
আমি বললাম 'সিম্পলের ভিতরে অল্প একটু গর্জিয়াস আরকি আপু যেভাবে সাঁজলে কেউ চোখ ফেরাতে পারবে না বাংলা নাটক-সিনেমার মত দেখলেই দু'চোখে তাক লেগে যাবে'
আপু আমার কথা শুনে হাহা করে হেসে উঠলেন।
সাঁজা শেষে আমি আয়নায় তাকাতেই আপুকে বললাম "আপু আপনি কি আমাকে সাঁজানোর বদলে প্লাসটিক সার্জারী করে দিয়েছেন নাকি?
আপু আবারও হাহা করে হেসে উঠলেন।
আমি বাসায় ফিরলাম। গিয়ে দেখি ছেলেপক্ষ অলরেডি আমার জন্য ওয়েট করছে৷ আমি যেতেই মা বললো আয় মা বসতো এখানে।
আমি মাথায় কাপড় দিয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে বসলাম। আমি বসতেই পাশের বাসার আন্টি আমার প্রশংসা জুড়ে দিলেন তাদের কাছে। আমি নাকি সকাল থেকে এসব নাস্তা বানিয়েছি, পিঠা বানিয়েছি, পায়েস রেঁধেছি। তারপর নাকি পাশেই একটা বান্ধবীর বাসায় গিয়েছি শাড়ি পড়তে।
অথচ আমি এখনও লবন আর চিনির পার্থক্য মুখে না দিয়ে বুঝতেই পারিনা। রান্না তো দূরের।
যাই হোক ছেলেপক্ষ এবার আমাকে প্রশ্ন করা শুরু-
"কি নাম তোমার মা?"
-তৃষ্ণা।
"কিসে পড় তুমি?"
-অনার্স তৃতীয় বর্ষ।
"কোন সাবজেক্ট?"
-ইংরেজি।
"বাহ্ ভালো সাবজেক্ট তো। তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
-আপাতত ইম্প্রেস করা।
" মানে?"
-ওহ্ স্যরি আরকি ইস্টাব্লিশ্ড হওয়া।
"ওহ্ আচ্ছা। কি কি রান্না জানো তুমি?"
-অনেক কিছুই।
ছেলের ছোট ভাই বললো "আপু আপনার প্রিয় একটা রান্নার রেসিপি বলেন তো?"
-পরিমান মত চাল ভালো ভাবে ধুয়ে তাতে পরিমাণ মত পানি দিয়ে রাইচ কুকারে বসিয়ে দিলেই কিছুক্ষণ পরে ভাত রান্না হয়ে যাবে।
আমার এমন কথায় আমার বাবা-মা আত্মীয় স্বজনসহ ছেলেপক্ষ সবাই হতভম্ব হয়ে গেলেন।
হতভম্ব কাটিয়ে ওঠার জন্য একজন বললো 'মা একটু হেটে দেখাও তো!"
-আন্টি দরজা দিয়ে আমি হুইল চেয়ারে এখানে আসিনি যদিও। তারপরেও যখন বলছেন দেখাচ্ছি।
আমার এমন কথার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। ছেলের খালা উঠে বললেন আচ্ছা মা তোমার চুলগুলো দেখি তো একটু মাথার কাপড়টা সরাও।
আমি চুল দেখাতেই তিনি বললেন "বাহ্ মাশাল্লাহ! আচ্ছা মা শাড়ি পড়তে পারো না তাইনা?"
-পারলে কি আর পার্লারে যাই বলেন। কতগুলো টাকা দিয়ে আসলাম এই সাজগোছের জন্যে।
তার হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো আমার এমন উত্তরে।
সবাই চুপচাপ। আমি বললাম "আচ্ছা আপনাদের ছেলে আসে নি কেন?"
ছেলের মা বললো "আসলে আজ ওর একটা বিশেষ দিন তো তাই একটু বিজি আছে৷ আমরা এখান থেকে গেলেই ও............"
কথা শেষ করার আগেই বললাম "ওহ্ আচ্ছা। সমস্যা নেই। ছেলে আসেনি তো কি হয়েছে আপনারা তো এসেছেন। আমরাও একদিন বিশেষহীন দিনে গিয়ে আপনার ছেলেকে দেখে আসবো। তাকে সাঁজিয়ে গুজিয়ে রাখবেন।"
আমি কিছু বললেই পরিবেশটা একদম শান্ত হয়ে যায় দেখছি! পরিবেশে একটু হৈ চৈ আনার জন্য বললাম "আচ্ছা চুল দেখালাম, হেটে দেখালাম এবার খেয়ে দেখাই?"
বলেই সামনে সাজানো খাবারগুলো খাওয়া শুরু করলাম। পেটে খুব ক্ষুধা। সকালে উঠেই পার্লারে গিয়ে বসে আছি। খিদা তো লাগারই কথা। অবশ্য আমার সকাল মানে ১২ টা।
খেতে খেতে পাশের বাসার আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম "খুব ভালো হয়েছে আন্টি। এগুলো নিশ্চয়ই আপনি বানিয়েছেন!"
ছেলেপক্ষকে বললাম "নিন! লজ্জা করছেন কেন? খুব মজা হয়েছে। তাছাড়া আপনাদের জন্যই এগুলো করা হয়েছে।"
পরিবেশটাতে এবার সত্যিই হৈচৈ লেগে গেছে। ছেলেপক্ষ উঠে চলে যাবার উপক্রম।
আমি তখন বললাম "কি ব্যাপার আপনারা মেয়ে দেখে কোনো টাকা-পয়সা না দিয়ে চলে যাচ্ছেন কেন? আমি বিভিন্ন মেয়েদের গ্রুপে দেখেছি মেয়ে দেখে ছেলেপক্ষরা দশ হাজার, পনের হাজার করে টাকা দেয়। আপনাদের যেহেতু মেয়ে পছন্দ হয়নি সেহেতু পাঁচ হাজার টাকা তো দিবেন"
আমার কথা শেষ করে আমার পক্ষের দিকে তাকাতেই দেখি সবার চোখ কপালে উঠে ডিম হয়ে রয়েছে। একটুপরেই অমলেট হয়ে যাবে তাপে।
ছেলেপক্ষ থেকে ছেলের বাবা এসে হাতে পাঁচ টা কচকচে এক হাজার টাকার নোট দিয়ে বললেন দুঃখিত আমাদের মনে ছিলো না।
আমি হাসি দিয়ে বললাম "নাহ্ ঠিক আছে আমি এখন আর কিছু মনে করবো না। ধন্যবাদ আবার আসবেন।"
তারা বের হওয়ার পরই আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। মা'কে দেখেছি ঝাটা খুঁজতে গেছেন। বাবা মা'কে হেল্প করার জন্য সাথেই গিয়েছে। ছোট বোনটাকে দায়িত্ব দিয়েছে দরজা বন্ধ করার। আমি ওকে বললাম "যেতে দে বইন। আসার সময় এক বক্স চকোলেট আর সাথে করে তোর দুলাভাই নিয়ে আসবো চিন্তা করিস না।"
বের হয়ে সোজা ক্রাশের জন্য গিফ্ট কিনে তার সঙ্গে দেখা করতে চলে গেলাম তার বাসায়।
নায়িকাদের মত স্লো মোশনে হেঁটে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে কলিংবেল বাজাতেই দেখি ক্রাশ দরজা খুলে দিলো।
আমি মিষ্টি হাসি দিয়ে হ্যাপি বার্থ ডে বলে গিফ্ট টা আগাতেই এক মহিলা "কে এসেছে রে?" বলতে বলতে দরজার কাছেই চলে এলেন।
আমি তার দিকে তাকাতেই ক্রাশ পরিচায় করিয়ে দিলেন "ইনি তার মা"
আমি তাড়াহুড়ো করে গিফ্ট টা ক্রাশের মায়ের হাতে দিয়ে বললাম এটার দাম পাঁচ হাজার টাকা আন্টি। রেখে দিন।
-বলেই দিলাম দৌড়।
এক দৌড়ে নিচে নেমে এসে দম নিচ্ছিলাম আর ভাবলাম যাক বেঁচে গেছি ভাগ্যিস ক্রাশ খবরটা আমি যাওয়ার আগে জানেনি। তাহলে আমার খবর ছিলো। কিন্তু এখন তো সে জেনে গেছে যে তার জন্যই আজ আমাকে তার বাবা মা দেখতে গিয়েছিলেন। ভাবতেই হঠাৎ দেখি পিছনে ক্রাশ চিৎকার করে বলছে "ঐ মেয়ে দাড়া। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।"
আমি তাড়াতাড়ি একটা রিক্সায় উঠে পড়লাম আর চিৎকার করে বললাম "ভাই আমি কি কাউরে গালি দিছি? আমি তো ইম্প্রেস করার জন্য পাঁচ হাজার টাকাই দিয়া গেলাম। একটাও টাকা রাখিনি""
সমাপ্ত
Bangla Golpo লেখাঃ- মোঃ আবীদ আবরার। নাদিয়া আমার ছাত্রী। আজকে পড়ানোর সময় দেখি তার বইয়ের ভাঁজে রঙিন একটা চিরকুটে লেখা " বড্ড বেশি ভালোবাস...
গল্পঃ- নাদিয়া
2021-11-21
Bangla Golpo
লেখাঃ- মোঃ আবীদ আবরার।
নাদিয়া আমার ছাত্রী। আজকে পড়ানোর সময় দেখি তার বইয়ের ভাঁজে রঙিন একটা চিরকুটে লেখা " বড্ড বেশি ভালোবাসি স্যার "।
আমি তো রীতিমতো অবাক হবার চরম পর্যায়ে, তবে এমন কিছু একটা আগেই ভেবেছিলাম। কিছুদিন ধরে নাদিয়ার আচরণ একটু অস্বাভাবিক মনে হতো।
চিরকুটটা নিজের কাছে রেখে স্বাভাবিক ভাবেই পড়ানো শেষ করলাম। তারপর নির্দিষ্ট সময় শেষে যখন ওর রুম থেকে বের হচ্ছিলাম তখন নাদিয়া বললো,
-- স্যার কিছু বললেন না?
-- কোন বিষয়?
-- আপনাকে যে চিরকুট দিলাম।
-- সেখানে তো কোনো উত্তর দেবার মতো কিছু পেলাম না। তুমি তোমার নিজের কিছু কথা লিখে দিয়েছ, সবসময় সব জিনিসের উত্তর হয় না।
-- কিন্তু আমার তো উত্তর চাই।
- অপেক্ষা করো, পেয়ে যাবে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম, এটাই হয়তো আমার শেষ যাওয়া। আর এ বাড়িতে পা রাখা যাবে না, সদ্য বেড়ে ওঠা নাদিয়ার আচরণ প্রশ্রয় দেওয়া যায় না।
নাদিয়াদের বাসা থেকে বেরিয়ে আমি সরাসরি আঙ্কেলের অফিসে চলে এলাম। আঙ্কেল আমাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়েছে নিশ্চয়ই কেননা এখনো মাস শেষ হয়নি।
মাস শেষে টিউশনির বেতনটা আঙ্কেলের অফিসে এসে আমাকে নিতে হয়। প্রতি মাসের এক তারিখ টিউশনি শেষ করে অফিসে যাবার নিয়ম সেই শুরু থেকে।
-- কি ব্যাপার রাফসান? কেমন আছো?
-- আলহামদুলিল্লাহ আঙ্কেল, আপনি কেমন আছেন?
-- এইতো চলছে।
-- আমি একটা কথা বলতে এসেছি আঙ্কেল।
-- বলো।
-- আমি নাদিয়াকে আর পড়াতে পারবো না। তাই ওর জন্য নতুন শিক্ষক রাখার ব্যবস্থা করেন।
-- চাকরি হয়ে গেছে?
-- না আঙ্কেল, অন্য কারণ।
-- আমাকে বলা যাবে?
-- আঙ্কেল, নাদিয়া আমাকে প্রপোজ করেছে। সে হয়তো আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে তাই আমি চাইনা এটা আর সামনে বাড়ুক।
-- হুম বুঝলাম।
- আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি চাই নাদিয়া অনেক বড় হোক। নাদিয়া বেশ মেধাবী, তার মতো ছাত্রী আমি কখনো পাইনি। তাই তার সেই মেধাকে আমি প্রেমের ফাঁদে ফেলতে চাই না।
-- তুমি তার থেকে আলাদা হলে সে কি স্বাভাবিক থাকবে বলে মনে হয়?
-- নাদিয়া সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে, এটা তার ভুল করার সময়। আপনি আজকে বাসায় গিয়ে তাকে যথেষ্ট বোঝাবেন। তাকে আমার কথা বলবেন।
-- কি বলবো?
-- বলবেন যে আমি বলেছি, তাকে ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে দেশের ভালো কোনো ভার্সিটিতে তাকে ভর্তি হতে হবে। যদি সে পারে তাহলে একদিন আমি তার সামনে আসবো। তার সফলতা একদিন আমাকে তার কাছে নিয়ে আসবে।
-- সত্যি সত্যি যদি সে অপেক্ষা করে?
-- করবে না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ, মানুষ, প্রকৃতি, সবকিছু বদলে যায়। ২/১ বছর গেলে সে এমনিতেই আমাকে ভুলে যাবে।
-- ঠিক আছে আমি তাই বলবো।
-- আজকে থেকে আপনি একটু বেশি সময় দিবেন তাকে। তবে আমাকে প্রপোজ করার জন্য তাকে মোটেই বকাবকি করার দরকার নেই। তাকে ভালোবাসা দিয়ে বোঝাবেন, সে বুঝতে পারবে।
-- চা খাবে?
-- না আঙ্কেল।
-- একটা প্রশ্ন করি?
-- জ্বি আঙ্কেল, করেন।
-- নাদিয়া আমার একমাত্র সন্তান, যথেষ্ট মেধাবী শিক্ষার্থী সেটা তুমি নিজেই স্বীকার করেছো।
-- হ্যাঁ সত্যি বলছি।
-- সৌন্দর্যের দিক থেকেও নাদিয়া কিন্তু কোনো অংশে কম নয়, তাই না রাফসান?
-- জ্বি এটাও সত্যি, নাদিয়া অনেক সুন্দরী।
-- একটা মেয়ের এতগুলো ভালো দিক থাকার পরও সে নিজে থেকে তোমাকে প্রপোজ করেছে। কিন্তু তুমি তাকে গ্রহণ না করে, রিজেক্ট করে কেন এড়িয়ে যেতে চাইছো? নাদিয়াকে তোমার পছন্দ নয় তাই না?
-- আঙ্কেল আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। অনেক বেশি সেই ভালোবাসা, তাই আমার কাছে পৃথিবীতে সে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।
-- সে মেয়ে কি করে? পড়াশোনা?
-- আমার চেয়ে এক বছরের জুনিয়র ছিল, গত তিনমাস আগে তার বিয়ে হয়ে গেছে।
-- মানে?
-- জ্বি, পরিবার থেকে ভালো পাত্র পেয়ে তাকে বিয়ে দিয়েছে। চাইলে পালিয়ে বিয়ে করতে পারতাম কিন্তু সে আমি দুজনের কেউ সেটা চাইনি এটা।
-- মাঝে মাঝে অফিসে এসো, দেখা করে যেও।
-- কথা দিতে পারছি না, তবে আপনার দাওয়াত আমার স্মরণ থাকবে।
এটাই আঙ্কেলের সঙ্গে আমার শেষ দেখা।
রাত দশটার মতো বেজে গেল তবুও মেসে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। দুই মাসের বাসা ভাড়া বাকি হয়ে গেছে, গত মাসে যেদিন আঙ্কেলের অফিস থেকে টাকা নিয়ে বের হলাম। তার ঠিক ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে পকেট ফাঁকা করে রাজধানীর কোনো এক পকেটমার তার পকেট ভারি করেছে।
আজকে দুপুরে মেস থেকে বের হবার সময় মেসের ম্যানেজার কড়া করে কথা বলে দিয়েছে। দরকার হলে মোবাইল বিক্রি করে দিয়ে তারপর যেন বাসা ভাড়া দেই এমন কথা বলেছে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্লান্ত হয়ে সাড়ে দশটার দিকে মেসে ফিরে গেলাম। আমার একমাত্র রুমমেট সাদ্দাম, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, পোশাক পাল্টাতে ইচ্ছে করছে না।
একটু পরে সাদ্দাম বললো,
-- সন্ধ্যা থেকে কোই ছিলেন রাফসান ভাই? আর মোবাইল বন্ধ কেন? আফরিন আপু এসেছিল।
আমি চমকে উঠলাম। বিয়ের পরে আফরিনের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি আমার। আজকে হঠাৎ করে মেসে চলে এসেছে, ঘটনা কি?
-- কখন এসেছিল?
-- বিকেলে এসেছিল, ঘন্টা দুই অপেক্ষা করে চলে গেছে।
-- ওহ্।
-- আপনার দু মাসের বাসা ভাড়া দিয়ে গেছে আর একটা চিঠি রেখে গেছে। চিঠিটা আপনার টেবিলে "আরণ্যক" উপন্যাসের মধ্যে আছে।
-- আচ্ছা ঠিক আছে।
ক্লান্ত শরীরে সেভাবেই ঘুমিয়ে গেছিলাম। রাত তিনটার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল, সাদ্দাম বই পড়ছে এখনো। এই ছেলেটা অনেক মেধাবী, ঠিক নাদিয়ার মতো বলা যায়। নাদিয়া যেকোনো পড়া সহজেই আয়ত্ত করতে পারে। আর সবসময়ই সে নতুন করে প্রশ্নের উত্তর সাজিয়ে বের করে। এতে করে শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ বেশি হবে বলেই আমার ধারণা।
মাথা নাড়া দিলাম, মাথার মধ্যে নাদিয়া ঘুরঘুর করতে শুরু করেছে। তার চিন্তা মাথা থেকে বের করে দিতে হবে, আর সেজন্য এখন আফরিনের রেখে যাওয়া চিঠিটা পড়া যেতে পারে।
আমি বিভূতিভূষণের "আরণ্যক" উপন্যাসের মধ্য থেকে চিঠিটা বের করলাম। আফরিন জানে এটা আমার প্রিয় একটা উপন্যাস।
কেমন আছো?
তোমার কথা মতো মা-বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করলাম। সত্যি বলছি, হাসবেন্ড হিসেবে সে অনেক ভালো। আমি তোমার সঙ্গে কাউকে তুলনা করতে চাই না তাই করলাম না। নাহলে সবদিক দিয়ে সে প্রায় তোমার মতো।
সপ্তাহ খানিকের মধ্যে আমরা দেশ ছাড়ছি। চলে যাবো ইউরোপের কোনো এক উন্নত ব্যস্ত শহরে। তোমার সঙ্গে দেখা করার অনেক ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তোমার মোবাইল বন্ধ। বাসা ভাড়া দিয়ে গেলাম, তবে আমার মন বলছে আগামী মাসের মধ্যে তুমি ভালো একটা চাকরি পাবে। তুমি তো জানো আমি মাঝে মাঝে যা বলি তাই হয়ে যায়, এবার যদি হয় তাহলে আমি হ্যাপি।
ভালো থাকার চেষ্টা করবে, কত বছর পরে আর দেশে ফিরবো জানি না। তবে বাংলাদেশে ফিরে আমি তোমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করবো। আশা করি সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করবে না।
আফরিন...
তিনবার পড়লাম। তারপর ভাজ করে সেভাবেই রেখে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে হলাম। রাতে কিছু খাওয়া হয়নি তাই ক্ষুধাটা বড্ড জ্বালাতন শুরু করেছে।
★★
ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। অফিসে বসে বসে সেই চিঠিটা একটু আগে আবার পড়লাম। আফরিন কিংবা নাদিয়ার পরিবারের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। অবশ্য ঢাকা শহর ছেড়ে আমি সেই সময়ই চট্টগ্রামে চলে এসেছিলাম। এরপর আর কোনদিন ঢাকা শহরে যাইনি তাই কারো সঙ্গে যোগাযোগ হবার সুযোগ ছিল না।
ব্যবহৃত সিম আর ফেসবুক আইডি সবকিছু শেষ করে দিয়ে নতুন জগৎ তৈরি করলাম। এখনো ব্যাচেলর বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করি, সকাল বেলা অফিসে নাস্তা করি। দুপুরে অফিস থেকেই লাঞ্চ করা হয়, আর রাতে হালকা কিছু খাওয়া।
এইতো জীবন।
সপ্তাহ খানিক পরের ঘটনা। অফিস স্টাফদের নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঘুরে এলাম গতকাল। চট্টগ্রাম থেকে খুব কাছেই, বৃহস্পতিবার রাতে গিয়ে আবার শুক্রবার রাতে ফিরে এসেছি। তার পরে গতকাল শনিবার পেরিয়ে আজ রোববার।
রিসিপশন থেকে কল দিয়ে বললো আমার সঙ্গে একটা মেয়ে দেখা করতে এসেছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই সে বললো মেয়েটার নাম নাদিয়া।
আমি চমকে গেলাম, সরাসরি নিজেই ওয়েটিং রুমের মধ্যে গিয়ে দেখি সোফায় কালো শাড়ি পরে বসে আছে এক তরুণী। মেয়েটা সেই নাদিয়া এটা চিনতে একটুও ভুল হলো না, আমাকে দেখে সে নিজেও তাকিয়ে আছে।
আমি নাদিয়াকে নিয়ে অফিস থেকে বের হলাম। আগ্রাবাদের কাছেই একটা পার্ক আছে সেখানে চলে গেলাম দুজনেই। এরমধ্যে আমাদের কোনো কথা হলো না। পার্কে গিয়ে আমিই প্রথম জিজ্ঞেস করলাম,
-- বাদাম খাবে?
-- হুম।
-- কেমন আছো তুমি?
-- ভালো, আপনি কেমন আছেন স্যার?
-- আমিও ভালো আছি, এতদিন পরে কীভাবে খুঁজে পেলে আমাকে? সরাসরি অফিসে।
-- আপনি কি বিরক্ত হয়েছেন?
-- না তবে অবাক হয়েছি। আমি ধরেই নিয়েছি আমাদের আর কোনদিন দেখা হবে না। আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে?
-- তারাও ভালো আছে।
-- কীভাবে জানলে আমি এই অফিসে চাকরি করি?
-- আপনারা দুদিন আগে কক্সবাজার গিয়েছেন তাই না?
-- হ্যাঁ।
-- আপনারা যে গ্রুপের সঙ্গে গেছেন সেই গ্রুপের সঙ্গে আমি বেশ কয়েকবার ভ্রমণ করেছি। সাজেক বান্দরবান, রাঙামাটি, এমনকি কক্সবাজারও তাই ওই গ্রুপের সঙ্গে আমার এড আছে। কক্সবাজারে তোলা আপনাদের সবার কিছু গ্রুপ পিকচার সেই গ্রুপের মধ্যে আপলোড করা হয়েছে। আমি প্রথমে সেখানেই দেখেছি আপনাকে, এ ক'বছরে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি আপনার।
-- হুম বুঝলাম।
-- ওদের সঙ্গে অনেকবার ভ্রমণ করার কারণে তাদের সঙ্গে হালকা কথাবার্তার পরিচয় ছিল। তাই সেখানে জিজ্ঞেস করলাম, তারপর তারা বললো আপনারা একই অফিসের কিছু স্টাফ।
-- এতো কষ্ট করে খোঁজার কি দরকার ছিল?
নাদিয়া এবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর বললো,
-- দরকার নেই তাই না স্যার?
-- না মানে, এতদিনে তোমার বিয়ে সংসার সব হবার কথা। পরিবার থেকে নিশ্চয়ই ভালো কোনো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েছে।
-- যেখানে পরিবার নেই, সেখানে আমার বিয়ে?
-- মানে?
-- আপনি চলে আসার পরে তিনমাসের মধ্যে মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। দোষটা সম্পুর্ণ বাবা করেছেন, সেই কারণে মা ও তাড়াহুড়ো করে আলাদা হবার সিদ্ধান্ত নেয়।
-- অবিশ্বাস্য।
-- ডিভোর্সের পরে আমি বাবার সঙ্গে ছিলাম, আর মা চলে গেল মামার বাসায়। এরপর বাবা হুট করে আবার বিয়ে করেন, আমি আর সেই বাসায় থাকার মতো স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। মামার বাসায় যাবার কোনো ইচ্ছে ছিল না তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে মেসে উঠতে হলো।
-- তারপর?
-- চিন্তা করতে পারেন? মা-বাবা সবাই আছে কিন্তু আমি কাউকে পাইনি। বাবা মাসে মাসে টাকা দিতেন, তবে আমিও এরমধ্যে টিউশনি খুঁজতে শুরু করি।
-- তখন কি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ?
-- হ্যাঁ, ভার্সিটি এডমিশন নেবো এরকম মুহূর্ত।
-- চান্স পেলে কোথায়?
-- ইডেন মহিলা কলেজ।
-- আন্টি এখন কোথায়?
-- মা'ও বিয়ে করে নিয়েছে। কি করবে? বলেন।
-- এতকিছু হয়ে গেল?
-- সদ্য ভার্সিটিতে ওঠা একটা মেয়ের মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায় তারপর তারা দুজনেই যদি আলাদা আলাদা বিয়ে করে। তাহলে সেই মেয়ের মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে স্যার?
-- আমি এমনটা আশা করিনি।
-- এরপর থেকে সবসময় ঘোরাফেরা করতাম। সুযোগ পেলেই যেকোনো গ্রুপের সঙ্গে ট্যুরে অংশ নিতাম৷ নতুন সংসারে গিয়ে মা নিজেও আমাকে টাকা দিতেন আর বাবা তো আগে থেকেই। তাই আর টিউশনি করতে হতো না। একসময় যে নাদিয়াকে আপনি পড়াতেন সেই নাদিয়া নিজেও বেশ কিছুদিন টিউশনি করিয়েছে।
-- পড়াশোনা তো এখনো শেষ হয়নি?
-- না।
-- আপনি চলে এসেছেন ছয় বছর হয়ে গেছে, বছর খানিক চলে গেছে এইচএসসি পাশ করে। আর বাকি পাঁচ বছর ভার্সিটিতে।
-- নতুন করে কাউকে ভালো লাগেনি?
-- একজনকেই ভালো করে ভালোবাসতে পারলাম না সেখানে আবার আরেকজন?
-- আমি একজনকে ভালোবাসতাম জানো?
-- আপনি চলে আসার পর আমি আপনার মেস খুঁজে বের করেছিলাম। বাবা বলেছিলেন লাভ হবে না কিন্তু মন মানতো না তাই খুঁজতাম। আপনার রুমে যে ছেলেটা ছিল তার কাছে জানতে পারি আফরিন নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতেন।
-- জানার পরে ভুলে যেতে ইচ্ছে করেনি?
-- না, যদি তার সঙ্গে বিয়ে হতো তাহলে নাহয় একটা কথা ছিল।
-- এখন তো খুঁজে পেলে, মন ভালো লাগছে?
এবার ভেজা চোখ নিয়ে নাদিয়া হাসলো। অনেক মিষ্টি সেই হাসিটা, হাসতে হাসতে বললো,
-- আপনি বলেছিলেন আমি জীবনে সফল হতে পারলে আপনি আমার সামনে যাবেন।
-- এখনো তো হওনি।
-- হলে বা কি হতো? আপনি তো আমার কোনো খবর রাখেননি।
-- আমি তোমার ভালো চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি এভাবে একা হয়ে যাবে ভাবিনি।
-- আমি কি আমার অপেক্ষার পুরষ্কার পাবো না?
-- কি চাও?
-- যাকে এতো কষ্ট করে খুঁজে বের করলাম।
-- ভেবে তারপর জানাবো।
ওর মুখটা কালো হয়ে গেল। আমি নাদিয়ার একটা হাত ধরে সামনে হাঁটতে লাগলাম। চারিদিকে তখন মাগরিবের আজান দিচ্ছে।
রাত এগারোটা।
নাদিয়াকে ঢাকার বাসে তুলে দেবার জন্য তাকে নিয়ে অলংকার বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছি। নাদিয়া এখনো মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কালো শাড়ির উপর নীল একটা চাদর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাদিয়া। একটু পরে সুপারভাইজার এসে ডাকতে লাগলো। আমি ওকে নিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। নাদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় অনেক কিছু বলতে চাইছে।
আমি ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললাম,
-- ঢাকায় গিয়ে তোমার ভার্সিটির আশেপাশে দুজনে থাকার মতো একটা ছোট্ট ফ্যামিলি বাসা খুঁজে বের করবে।
-- কেন?
-- আমাকে বছর খানিক ধরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হেড অফিসে বদলি করতে চায়। কিন্তু ঢাকায় যাবার কোনো ইচ্ছে ছিল না তাই রাজি হইনি। তবে এখন তো সেই উপায় নেই, আমি আগামীকাল অফিসে গিয়ে বদলির আবেদন করবো।
নাদিয়া এবার হাসলো। মাঝরাত তবুও ব্যস্ত এই শহরের ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে সবার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বাসের সুপারভাইজার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, আশেপাশের আরো অনেকেই হয়তো তাকিয়ে আছে। আমি সেভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-- সবাই দেখছে, এবার ছাড়ো।
-- ইচ্ছে করছে না।
-- তাহলে চলো আমিও সঙ্গে যাই।
-- সত্যি বলছেন?
-- একদম।
আরো একটা টিকিট কেটে আমিও বাসে উঠে গেলাম। নাদিয়ার পাশের সিটের ভদ্রলোককে একবার বলাতেই সে সিট ছেড়ে আমার টিকিটের সিটে চলে গেল।
বাস চলতে আরম্ভ করলো, জানালার পাশে বসা নাদিয়া আমার একটা হাত জড়িয়ে ধরে বসে আছে। অনেকক্ষণ পর সে বললো,
-- আমি ঢাকা থেকে আসার সময় কোনদিন ভাবিনি আপনাকে সারাজীবনের জন্য পাবো।
আমি কিছু বললাম না, ভাবতে লাগলাম কালকে সকালে অফিসে কল দিয়ে বলতে হবে আমি অফিসে যেতে পারবো না। একদিনের ছুটি নিতে হবে।
----- সমাপ্ত -----
Bangla Golpo লেখকঃ জহিরুল_ইসলাম পরিবারের ইচ্ছেতে দুই ভাই একত্রে বিয়ে করলাম। বড় ভাইয়ের বউটা একদমি অশিক্ষিত। আমার কাছে ক্ষ্যাত মার্কা লাগতো। ক...
ছোট_গল্প গল্পঃঅভিনয়
2021-11-21
Bangla Golpo
লেখকঃ জহিরুল_ইসলাম
পরিবারের ইচ্ছেতে দুই ভাই একত্রে বিয়ে করলাম। বড় ভাইয়ের বউটা একদমি অশিক্ষিত। আমার কাছে ক্ষ্যাত মার্কা লাগতো। কারো সাথে কথা বলতো না। ভাইয়ের থাকা বন্ধু গুলো ভাবিকে দেখতে চাইলেও তাদেরকে মুখ দেখাতো না। মাথার উপর বড় ঘোমটা দিয়ে চা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
আর এদিকে আমার বউ তুলনা স্বরুপ অনেক শিক্ষিত ভাবির চেয়ে। সারাক্ষন জীন্স টপ পড়ে থাকে। আমার বন্ধুরা আসলে তাদের সামনে গিয়ে হাসি ঠাট্টাই ব্যস্ত থাকতো। নিজের কাছে ব্যাপার গুলো খুবি ভালো লাগতো। বন্ধুরাও বউয়ের প্রশংসা করতে করতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলতো। এসব কান্ড দেখে রীতিমত রাগ চরম সীমায় পৌছায় আমার। কে শোনে কার কথা। কাজের বুয়ার সাথে সারাক্ষন চেঁচামেচি করে যেতেই থাকতো। বউয়ের কাছে মনেই হতো না যে কাজের বুয়াও মানুষ। কিভাবে ওর মানসিক পরিবর্তন করা যায় এটা ভেবে পাচ্ছিলাম না।
বউয়ের অত্যাচারে কাজের বুয়াটা অসুস্থ হয়ে যায়। তাই কিছুদিন কাজ করতে আসেনি। আর এদিকে বউটা আমার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে রাখছে।
একদিন রাত এগারোটার দিকে বউ বলছে-
--- এই শুননা! আমার নাটকে অভিনয় করার খুব ইচ্ছে। আর তুমি তো সারাক্ষন দেখি লেখালিখি নিয়ে ব্যস্ত থাকো। আমার জন্য একটা স্ক্রিপ্ট লিখো না?
বউয়ের কথা শোনে মুহূর্তেই মাথা বিগড়ে যায় আমার। যার নাকি ব্যবহারই ঠিক নেই সে করবে নাটক। ভাবছি আর একা একা হাসছি। আমার হাসি দেখে বউ বললো-
--- তুমি এভাবে হাসছো কেন কথা শোনে?
- তোমার মাঝে ধৈর্য বলতে কিছু আছে? তুমি করবে আবার নাটক! ব্যাপারটা কত হাস্যকর একবার ভাবোতো! যদি ধৈর্যই থাকতো তাহলে এখন এভাবে বলতে পারতে না।
--- জ্বী না! আমি পারবো। তুমি লিখবে কিনা তাই বলো?
- হ্যাঁ লিখবো।
বউয়ের কথা শোনে হাসিতে ঘুম আসছিল না। যার কোনো চরিত্র বলতে কিচ্ছু নেই তার মুখে অভিনয়ের কথা। আবার এটাও ভাবলাম, ও তো অভিনয় খুব ভালো ভাবে করতে জানে। ওকে দিয়েই কাজ হবে। দেখি বুঝিয়ে শুনিয়ে ওরে ঠিক করতে পারি কিনা। ব্যাপার গুলো বড় ভাই-ভাবি, মা-বাবার কাছে শেয়ার করলাম। শোনে সবাই হাসছে আমাকে নিয়ে। বলছে বউয়ের সাথে সাথে আমিও নাকি পাগল হয়েছি।
তার দুই দিন পর রাতে বউকে বললাম-
--- এই শুননা! তোমাকে নিয়ে অলরেডি আমার স্ক্রিপ্ট লেখা হয়ে গেছে। তুমি খুব শিগ্রই নাটকে অভিনয় করতে পারবে। তোমাকে পুরো দেশের মানুষ চিনবে। তখন তুমি তো আবার আমাকে চিনবে?
আমার কথা শোনে ও খুশিতে আত্মহারা প্রায়। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। শুধু হাত নাড়াচ্ছে।
- সত্যি লিখছো? এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে লিখছো? তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাইনা?
ওর মুখে ভালোবাসার কথা শোনে হাসছি আর ভাবছি " ভালোবাসা না ছাই" তোমারে সায়েস্তা করনের কৌশল অবলম্বন করতেছি।
--- কিন্তু একটা সর্ত আছে? সেটা হচ্ছে, তুমি তো নাটকে প্রথম অভিনয় করতে যাচ্ছো। তাই তোমাকে তারা ছোট-খাটো ক্যারেক্টার দিবে।
আমার কথা শোনে ও রেগে বললো-
- আমার চেহারা কি কোনো অংশে কারো চেয়ে কম? নাটকে দেখি কত কালো মেয়ে মেকাপ মেরে ফর্সা হয়ে অভিনয় করে। আর আমার তো মেকাপ করা লাগবে না। এমনিতেই পার্ফেক্ট আমি।
--- অাহ্ তুমি ব্যাপারটা বুঝছো না কেনো? তুমি তো নতুন। একবারেই তো নায়িকার চরিত্রে অভিনয় দিবে না তারা।
কিছুটা চুপ থাকার পর ও ভেবে বললো-
- আচ্ছা আমি রাজি। তবে কোন চরিত্রে অভিনয় করতে হবে আমাকে তাই বলো।
--- কাজের বুয়া হিসেবে। তবে নাটক করে বড় ক্যামেরা দিয়ে আর আমরা করবো মোবাইল দিয়ে।
এটা শোনে খুশির পরিবর্তে রাগে আগুন।
- কিহ্! কাজের বুয়ার অভিনয় করবো তাও আবার মোবাইল দিয়ে ভিডিও করবে তুমি?
--- আরে এতো রাগাচ্ছো কেনো তুমি? ক্যামেরার করা নাটক তো বেশি ভাইরাল হয়না। আর দেখো মোবাইল দিয়ে ভিডিও করলে কোটি কোটি মানুষ তোমাকে চিনবে জানবে।
কিছুটা রাগ কমিয়ে বললো-
- আচ্ছা আমি রাজি। কবে থেকে অভিনয় শুরু করতে হবে তাই বলো?
--- কাল থেকেই আমরা নাটক করা শুরু করতে পারি।
এদিকে মনের মধ্যে খুব ভয় হচ্ছে আমার। যদি ও কোনো ভাবে আমার করা প্লান বুঝতে পারে আমি শিউর ও আমাকে তালাক দিয়ে চলে যাবে। যা করার বুদ্ধি খাটিয়ে করতে হবে।
অভিনয় যেহেতু কাজের বুয়ার তাই কাজের বুয়াকে আমি ১৫ দিনের ছুটি দিলাম। কাজের বুয়া ছুটির কথা শোনে মন মরা হয়ে আছে। বুঝতে পারছি বুয়া কিসের জন্য মন মরা হয়ে আছে। ওর মন মরা দেখে বুয়াকে বললাম- খালা, আপনাকে ছুটি দিয়েছি ঠিকই তবে বেতন ঠিক ভাবে পাবেন। আপনি পনেরো দিন আরাম করেন। ছুটি পেয়ে খালা খুশি হয়ে আমার জন্য মঙ্গল কামনা করতে থাকে। গরিবের করা মঙ্গল কামনা একদিন ঠিকই সফল হবে এটা আমার বিশ্বাস। ব্যাপার গুলো বাড়ির সবাইকে ক্লিয়ার ভাবে বললাম। তারাও ভয় পাচ্ছে খানিকটা। তবুও মনের ভিতর সাহস নিয়ে কাজ করতে হবে। এদিকে কাজের বুয়া চলে যাওয়ার সময় তার যত ময়লা জামা-কাপড় সব আমি নিয়ে আসি বউয়ের জন্য।
আজ নাটকের প্রথম দিন। বউকে সোজা বলে দিলাম কোনো রকম সাজুগুজু করা যাবে না। তোমার ক্যারেক্টার কাজের বুয়া। কোনো জমিদারের মেয়ে না।
সাজুগুজু বাদ দিয়ে ময়লা জামা-কাপড় পরলো। বউ ময়লা কাপড় পড়ে বললো-
--- এরকম ময়লা কাপড় কেউ পড়বে?
ওর কথা শোনে খুব রাগ হচ্ছিল তখন আমার।
- কাজের বুয়া পড়তে পারলে তুমি পারবে না কেন? তুমি হীরার তৈরি নাকি? যদি পড়তে না পারো তাহলে নাটকে অভিনয় করতে হবে না।
--- না না! আমি পারবো। সব পারবো আমি।
এদিকে বাড়ির সদস্যদের সব ময়লা কাপড় একত্রে আমি গুছিয়ে রেখেছি বউয়ের জন্য। কাপড় গুলো ওর সামনে ছুড়ে মেরে বললাম-
- এই নে ফকিরের বাচ্চা। দশ মিনিটে কাপড় পরিষ্কার করে থালা-বাসন ধুয়ে দিস।
বউকে গালি দেয়াতে ও আমার সাথে রাগ দেখিয়ে বললো-
--- কিহ্ আমি ফকিরের বাচ্চা? এই বুয়ার অভিনয় আমি করতে পারবো না।
আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বললাম- তাহলে আমি নাটক বন্ধ করে দেই?
- না, আমি করবো।
এভাবে কিছুদিন কাজ করতে করতে দেখি বউটা আমার শুকিয়ে যাচ্ছে। আমার ঝারি, মা-বাবার গালি এগুলোও যেন মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে শুধু অভিনয়ের জন্য। কিছুতেই আর কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। তবুও আমি আরো বেশি বেশি চাপ দিচ্ছি শুধু বুঝানোর জন্য। কাজের বুয়াও আমাদের মত মানুষ। তাদেরও মন বলে কিছু আছে।
বারো দিন হতে চলছে নাটকের। বউয়ের মাঝে অনেক পরিবর্তন আসছে। সবার সাথে ফ্রি ভাবে এখন কথা বলছে। বাড়ির সব কাজ না বলাতেই একা একা করছে। কিছু ভুল হলেই আমি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছি। ও কাঁন্না করে দেই আমার গালি শুনে।
এক পর্যায়ে বলে উঠলো-
--- আমি আর বুয়ার অভিনয় করতে পারবো না। ক্ষমা চাচ্ছি।
- তাহলে বুঝতে পেরেছো সকল বুয়া গুলো কত কষ্ট করে অন্যের বাড়ি গিয়ে কাজ করে! এসব কিছু ছিল আমার সাজানো প্লান। যাতে তোমার বিবেক জাগ্রত হয়।
বউ আমার কথা শোনে কেঁদেই দিল। আমার কাছে সে মাথা নত করে ক্ষমা চাচ্ছে। সে নিজে গিয়ে বুয়ার কাছেও ক্ষমা চেয়ে আসে।
(সমাপ্ত)
Bangla Golpo #লেখিকাঃফাতেমা_তুজ ফেসবুকে হঠাৎ ই তার সাথে পরিচয়। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা অবশ্য সেই দিয়েছিলো । দেখতে ভালো ছিলো বলে চট করে একসেপ্ট ...
গল্পঃইচ্ছে
2021-11-21
Bangla Golpo
#লেখিকাঃফাতেমা_তুজ
ফেসবুকে হঠাৎ ই তার সাথে পরিচয়।
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা অবশ্য সেই দিয়েছিলো । দেখতে ভালো ছিলো বলে চট করে একসেপ্ট ও করে নিলাম।
সে ফাস্ট ম্যাসেজ দিয়েই সালাম দিয়েছিলো আমায়।
বেশ ভালোই লাগল , টুকটাক কথা ও হলো।
জানলাম আমার থেকে প্রায় শ কিলোমিটার দূরে তার বাস।
তার পর থেকে সে আমায় আর কখনো ম্যাসেজ দেয় নি।
কিন্তু আমার আগ্রহ টা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিলো।
তার প্রোফাইল চেইক করা , স্টোরি দেখা হয়ে গেল নিয়মিত একটা অভ্যাস।
অবশ্য সে ও আমার স্টোরি দেখতো । তবে কখনো রিয়েক্ট দেয় নি।
সময় যেতে লাগলো কর্ণপাতে।
হঠাৎ একটা সময় অনুভব করলাম তাকে আমি ভালোবাসি।
কি আশ্চর্য এতো তাড়াতাড়ি বুঝি ভালোবাসা হয় ?
দেখতে দেখতে কেঁটে গেল কিছু দিন সে ম্যাসেজ দিলো নাহ।
আমি দেখতে খুব সুন্দরী নই । উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙ, ছোট ছোট চোখ , নাক টা ও আবার বোচা চুল গুলো কোমর এ পৌছায় নি, খানিকটা স্বাস্থ্য ও ছিলো, লম্বায় 5'3।
হা হা কি অস্বাভাবিক বিষয়, আর সে দেখতে বিদেশীদের মতো ফর্সা , গাঢ় পার্সোনালিটি, রোগা পাতলা , লম্বায় 5'10, দেখতে নায়ক দের ই মতো ।
সব মিলিয়ে ভালোবাসার কথা টা বলবো কি করে ?
ভাবলাম সময় তো বহু আছে , আমি তার যোগ্য হয়েই বলব।
ইচ্ছে গুলো ডানা মেলে উড়তে লাগলো।
এক সাথে চন্দ্রবিলাশ করার ভয়ঙ্কর বাসনা ও হলো।
দিন চলছে কিন্তু আমার কদাচিত রূপের পরিবর্তন হচ্ছে না।
অন্য দিকে সে কখনো খোঁজ ও নেয় নাহহ।
আমার ও আবার খানিকটা ইগো আছে।
আমি ও খোঁজ নিলাম নাহহ।
তবে মনের সাথে পেরে না উঠতে পেরে ফেইক আইডিটি দিয়ে ওনাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম।
ঐ আইডিতে টুক টাক কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম।
বুঝলাম ওনি তেমন আগ্রহী নন।
আবার মন খারাপ শুরু হলো।
রাত ভর ঘুম হতো নাহহ , সারাক্ষণ তাকেই ভাবতাম।
রূপবতী নই বিধায় তাকে ভালোবাসি বলতে পাচ্ছি নাহ।
এ যন্ত্রণা রূপহীন নারীরাই বুঝে।
রূপের জন্য মাঝে সাঝে লোক মুখে টিটকারি ও শোনা যায়।
দিন যায় দিন আসে তাকে ভালোবাসি বলা আর হয় নাহ।
কেঁটে যায় কয়েকটা যন্ত্রণা ময় মাস।
এক সন্ধ্যায় হলুদ আলো ফেলে সূর্য যখন নিভু নিভু হচ্ছিলো তখনি আমার ছোট্ট হৃদয় টা থমকে গেল।
স্টোরি তে কোনো এক মেয়েলি নাম কে মেনশন দিয়েছে জিসান।
মেয়েটা যে তার গার্লফ্রেন্ড।
বুক টা ঝলসে যাচ্ছিলো আমার।
আম্মু যখন পেছন থেকে বলল
_ এই প্রিয়া কাঁপছিস কেন মা ?
শরীর খারাপ লাগছে ,
আম্মু কে কিছু বলতে পারলাম না আমি।
দু হাতে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলাম।
আম্মু টেনে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো।
অনুভূতি গুলো ফিকে হয়ে গেল।
আজ রূপ নেই বলে হেরে গেলাম আমি। ইচ্ছে রা সব ফিকে হয়ে গেল ।
অপেক্ষা প্রহর গুনলাম ঠিক ই। কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম রূপের মতো গুন না থাকার কারনে জীবনের বহু ইচ্ছে অপূর্ণ থেকে যায়।
দিন পেরুতে থাকে আর আমার কষ্ট গুলো ও বাড়তে থাকে।
শুরু হয় ফেসবুকে দীর্ঘশ্বাস মেশানো স্ট্যাটাস।
এক মধ্য রাতে স্টোরি চেইক করে দেখি জিসান হা হা দিয়েছে।
ম্যাসেজ দেওয়ার মতো কার্য আমি করতে পারলাম নাহহ।
মন খারাপ করে তাকে মেনশন দিয়ে স্টোরি তে দিলাম হা হা দেওয়ার কারন কি ?
কয়েক মুহূর্তের মাঝে ম্যাসেজ এলো
_আপনার আবেগ দেখে একটু হাসি পাইলো।
আমি কিছু বললাম নাহহ। শুধু বুক চিরে বের হয়ে আসলো দীর্ঘশ্বাস ঝলমলে মলিন হাসি ।
রূপবতী নই যে আমি , আমার মিষ্টি কথা গুলো ও সবার কাছে তেতো ।
আবেগ গুলো যাকে ঘিরে সে ও তা নিয়ে ঠাট্টা করছে।
কিছু ইচ্ছে বোধহয় বেড়াজালেই আটকে যায়।
আমার আর ইচ্ছে হয় না রূপবতী হওয়ার।
কারন আমার এ ইচ্ছের বেড়াজাল সৃষ্টিকর্তা জন্ম থেকেই দিয়েছেন।
_রূপহীন
সমাপ্ত
সকলের সুস্থতা কামনা করছি ।
Everyone join our group
https://www.facebook.com/groups/860375814763803/?ref=share
Bangla Golpo বাসর রাতে স্বামী জিজ্ঞেস করলো -তুমি আমার কাছে কি চাও বলো। -একটা কেঁচি। -কেঁচি! -হ্যাঁ কেঁচি। যাও নিয়ে আসো। ও আমার দিকে কতক্ষণ ...
গল্পঃবলো কি চাও
2021-11-21
Bangla Golpo
বাসর রাতে স্বামী জিজ্ঞেস করলো
-তুমি আমার কাছে কি চাও বলো।
-একটা কেঁচি।
-কেঁচি!
-হ্যাঁ কেঁচি। যাও নিয়ে আসো।
ও আমার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে তারপর টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা কেঁচি এনে এগিয়ে দিয়ে চুপ করে আমার পাশে বসলো। আমিও ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হেসে বললাম- পেছনে ফিরে বসো।
- মানে কি নেহা! পেছনে ফিরবো কেন?
- আমি বলছি যখন তখন কোনো কথা না বলে চুপচাপ পিছনে ফিরে বসো। মেয়েদের মতো চুলে ঝুঁটি করেছো কেন? ছেলেদের বড়ো চুল আমার পছন্দ না। তাই তোমার ঝুটিটা আমি এখন কাটবো।
-প্লিজ এরকম করো না, এক বছর ধরে কত্তো যত্ন করে চুলগুলো বড় করেছি।
আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম - তুমি কি পিছনে ফিরবে?
- ইয়ে মানে ই ইয়ে.........
-তুমি যদি না ফিরো তাহলে..
ও ভয়ে ভয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো - তাহলে কি হবে?
- তাহলে আমি আমার নিজের চুল কেটে ফলবো।
-মানে!
-হ্যাঁ, যদি তোমার চুল বড় থাকে তাহলে আমি আমার চুল কেটে ফেলবো। আর যদি আমার চুল বড় দেখতে চাও তাহলে তোমার ঝুঁটি কাটতে হবে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও জামাই আমার মুখ কালো করে পিছনে ফিরে বসলো। আমি চুলগুলো কুচকুচ করে কেঁচি দিয়ে কেটে ফেললাম। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
- ওলে আমার জামাইটা, রাগ করলা বুঝি। থাক শুনো, আমি তো আর নাপিত না যে অতো সুন্দর করে চুল কাটতে পারবো। কালকে সকালে সেলুনে গিয়ে সুন্দর করে চুলে একটা কাট দিয়ে আসবা।
সকালে ও রুম থকে বের হওয়ার পরে সবাই তো দেখে অবাক। আমার ছোট ননদটা ওর দিকে তাকিয়েই খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
- কিরে ভাইয়া, তোর ঝুঁটি কই?
শাশুড়ী মা তো একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে আর একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললো - কিরে রাশেদ, তোর মোরগঝুঁটি উধাও হলো কি করে।
ও আমার দিকে তাকিয়ে তারপর হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শাশুড়ী মা তো হাসতে হাসতে শেষ। আমাকে জিজ্ঞেস করলো - কি করে করলে এই মহৎ কাজ? যেটা আমরা কেউ পারিনি সেটা করে দেখিয়েছো দেখি বৌমা।
আমি কি আর বলবো, লজ্জায় লাল হয়ে গেছি। ইতিহাসে আমিই একমাত্র বউ যে কিনা বাসর ঘরে জামাইয়ের ঝুঁটি কেটে দিয়েছি।
শাশুড়ী মা খুশি হয়ে বললেন - যাক, অবশেষে মাথার মোরগঝুঁটি টা কাটতে পারলে। আজকালকার ছেলেমেয়ের কখন যে কি ভূত মাথায় চাপে কে যানে! তবে কখনো যদি তোমাকে ও এই ব্যাপারে কিছু বলে তাহলে আমাকে বলবে।
শাশুড়ী মায়ের সাপোর্ট পেয়ে আমার সাহসটা যেনো আরো বেড়ে গেলো। ছোট ননদ মাইশা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো - ভাবি এই খুশিতে বলো তুমি আমার কাছে কি চাও?
আমি হেসে উত্তর দিলাম - একটা নেইল কাটার চাই।
- ভাবি তুমি নেইলকাটার দিয়ে কি করবে?
-নখ কাটবো। যাও নিয়ে আসো।
ননদিনী আমার, রুমে গিয়ে সুন্দর একটা নেইল কাটার নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে বললো - নাও, এটা আমি তোমাকে গিফট হিসেবে দিলাম।
- আচ্ছা ঠিক আছে, এবার আমার সামনে চুপটি করে বসো।
- কেনো!
- নখ কাটবো।
- ইয়ে ভাবি, কার নখ কাটবে?
- তোমার নখ। এতো বড় নখ রাখা ভালো না, নখ বড় রাখলে পেটে জীবাণু যাবে। তারপর অসুখ হবে।
মাইশা কি করবে বুঝতে না পেরে যেই রুমের দিকে দৌড় দিবে ওমনি রাশেদ এসে ওকে খপ করে ধরে আমার সমনে বসিয়ে দিলো। আমি ওর নখ কাটছি আর রাশেদ ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। আমার শাশুড়ী মাও দেখছেন আর হাসছেন। আর আমি বলে যাচ্ছি - মাইশা, এতো নড়াচড়া করো না, হাত কেটে যাবে।
এমন সময় আমার দেবর আসলো। এই অবস্থা দেখে ও তো হেসেই গড়িয়ে পড়লো। ওর সাথে আমিও দাঁত কেলিয়ে বললাম - রাহাত, একটা সুই আর সুতা এনে দিতে পারবে?
-কেন ভাবি?
- তোমার ছেঁড়া প্যান্টগুলো সেলাই করবো।
- আরে ভাবি, এটা ছেঁড়া না। এটা হলো স্টাইল।
- হ্যাঁ স্টাইল। দেখছো না তোমার ভাইয়া আর মাইশার স্টাইল কেমন ফুসস হয়ে গেছে। এসব ফালতু স্টাইল বাদ দাও। আর যা বললাম নিয়ে এসো।
- আচ্ছা ঠিক আছে আনছি।
বলেই আমার দেবর প্রায় এক সপ্তাহ নিরুদ্দেশ। আর আমার স্বামী তো চুল এক ইঞ্চি লম্বা হলেই ভয়ে সেলুনে গিয়ে ছোট করে আসে। মাইশা যে নেইলকাটার টা আমাকে দিয়েছিলো ঐটা গোপনে আমার রুম থেকে লুকিয়ে ফেলেছে, যদিও আমি তা জানি।
।
।
বিয়ের প্রায় এক মাস পরে আমার বার্থডে তে ও আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। সারাদিন ঘুরাফেরা করলাম তারপর শপিং করতে গেলাম। আমি তো খুশিতে গদগদ হয়ে ওকে বললাম
- ওলে আমার জামাইটা,,কত্তো ভালো। আচ্ছা বলো তুমি আমার কাছে কি চাও।
- একটা টিস্যু।
টিস্যু, এ আর এমন কি! আমি ব্যাগ থেকে একটা টিস্যু বের করে ওকে দিলাম। আর ওমনেই ও আমার সাজগোজ, লিপস্টিক, আইলাইনার, মাসকারা, আইশেডো সব টিস্যু দিয়ে পুরো মুখ লেপ্টে পেত্নীর মতো করে দিলো। আর বললো - এতো সেজেছো কেন? এতো স্টাইল করা মোটেও ভালো না।
আমি শপিংমলে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ও তাহলে আমার কাছ থেকে চুল কাটার প্রতিশোধ টা নিয়েই নিলো!
সমাপ্ত
কেমন হয়েছে অবশ্য জানাবে
x
Bangla Golpo ____ প্লিজ একটু সময় করে পুড়ো গল্পটা পরেন । গল্পটা পড়ে না কেঁদে কেউ যেতে পাড়বেন না। - তোকে কতো বার বলবো আমার কাপড় গুলা একটু ভালো...
গল্প_শুধুই_অবহেলা
2021-11-21