বই সিরিজ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

Bangla Golpo গল্প বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ  অনু গল্প টুং করে একটা ম্যাসেজ ঢুকলো আদৃতার ফোনে। "উই আর ফ্রেন্ডস ফর এভার "সেখানে যোগ করেছে...

গল্প বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ অনু গল্প (গল্প নম্বর এক)

গল্প বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ অনু গল্প (গল্প নম্বর এক)

বই সিরিজ

8 10 99

Bangla Golpo



গল্প বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ 

অনু গল্প


টুং করে একটা ম্যাসেজ ঢুকলো আদৃতার ফোনে। "উই আর ফ্রেন্ডস ফর এভার "সেখানে যোগ করেছে আদৃতাকে।  হোয়াটসঅ্যাপে একটা গ্রুপের মেসেজ।  ক্লাস ফাইভ থেকে টেন পর্যন্ত একটা গার্লস স্কুলে আর তারপর উচ্চমাধ্যমিকে কোএডে পড়তো আদৃতা। টিউশন পড়তে গিয়েও বন্ধুত্ব হয়েছে অনেকের সঙ্গে।  গ্রুপে বন্ধুদের নাম দেখতে দেখতে অতীতে ফিরে যায় আদৃতা । কতোদিন  পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।  আদৃতা মেসেজ করে  তোরা তোদের সবার ফটো পোস্ট কর্ ।  কতোদিন দেখিনি তোদের !  বন্ধুরা যে যে মেসেজটা দেখেছে তারা সবাই ফটো পোস্ট করেছে । আদৃতা নিজেরও একটা ফটো পোস্ট করেছে।  এখন বড্ড কর্মব্যস্ত সবাই।  আদৃতার বান্ধবীদের প্রায় প্রত্যেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে । বন্ধুদের মধ্যেও ফটোতে দেখছে অনেক জনের ফ্যামিলি সহ ছবি পোস্ট করেছে।  বেশ অবাক হয়ে যায়।  তা কলেজ,  ইউনিভার্সিটি, পি এইচ ডি,নেট দিয়ে ' এখন কলেজে জয়েন করেছে।  এসব করতে করতে বয়স এখন  প্রায় বত্রিশ প্লাস। বান্ধবীদের মধ্যে শুধু নীতার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ আছে। গতমাসে উলুবেড়িয়া যাবার পথে  ট্রেনে দেখা হয়েছিল সোমার সঙ্গে। এতো গল্প হয়েছিল সেদিন। সোমা তখন  বলেছিল আমার কয়েকজনের  সঙ্গে যোগাযোগ আছে আবার তাদের সঙ্গে কয়েকজনের যোগাযোগ থাকবে । একটা হোয়াটস্অ্যাপে গ্ৰুপ  খুললে সবার খোঁজ খবর পাওয়া যাবে।

 
 

আদৃতা বলেছিল গুড আইডিয়া ।আমাকে অ্যাড  করিস । আজকে  দেখে সেটা করেছে ওরা।  " উই আর ফ্রেন্ডস ফর এভার" গ্ৰুপের নামটাও বেশ সুন্দর।

সোমার  কাছেই আদৃতা খবর পেয়েছিলো অনির্বাণ, সৈকত টিচার।  সুফল ইঞ্জিনীয়ারিং করে বিদেশে চাকরি করছে । সুজাতা হেল্থ ডিপার্টমেন্টে  আছে।

  সোমা বলে এই দেখ্ !  চিনতে পারছিস? আমরা ওকে "হেবলি" বলতাম ,  কেমন দেখতে হয়েছে দেখ্।
  একটা ফটো দেখায়  সোমা 
  
 আরেব্বাস!! এতো হেবলি অদিতি ! বাপরে,  কি দেখতে হয়েছে রে ! 

  হ্যাঁ । দারুন সুন্দরী । অপ্সরা  নামে একটা বিউটি পার্লার আছে অদিতির।

 বাহ। শুনে কি ভালো লাগলো। 
সোমার  সঙ্গে গল্প করে সেদিন মনটা ভালো হয়ে গেছিল  আদৃতার। জীবনের অনেকগুলো বছর দিতে হয়েছে তার এই লক্ষ্য পূরণের জন্য। এই সময়টুকুতে অনেক বন্ধু বান্ধবী এসেছে কিন্তু স্কুলের জীবনের মতো এতো হৃদ্যতা  তৈরি হয়নি কারো সঙ্গে । স্কুল জীবনের বন্ধুদের মধ্যে যে নিবিড়বন্ধন ,আবেগ, একে অপরের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছিল এটা কিন্তু কলেজ ইউনিভার্সিটি'তে দেখতে পায়নি আদৃতা।

হঠাৎ ফোনে মেসেজ ঢুকলো একটা আদৃতার,  আননোন নম্বর থেকে একটা মেসেজ, ডিপিতে গিয়ে দেখে অনিরুদ্ধ । বাবা ,কত স্মার্ট হয়ে গেছে , কে বলবে কতো মোটু, আর হাঁদারাম ছিলো। ওকে সবাই মোটু বলেই ডাকতো। 

খুব মনে পড়েছে সরস্বতী পুজোতে একটা হলুদ শাড়িতে স্কুল গেলে অনিরুদ্ধ এমন হাঁ করে ওরদিকে দেখছিল যে,  ওর মুখের মধ্যে  সৈকত একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দিয়ে বলেছিল মোটু তাকিয়ে থেকে লাভ নেই,  এমন চেহারা হলে কেউ প্রেমে পড়বে না।

কথাটা মনে পড়তেই হেসে ফেলে আদৃতা।  আর এখন কি হ্যান্ডসাম দেখতে হয়ে গেছে। অনিরুদ্ধ লিখেছে "কিরে চিনতে পারছিস ? আমি স্কুলের মোটু, হাঁদারাম,  তুই দিয়েছিলে নামটা মনে আছে? "

আদৃতা লেখে হ্যাঁরে,  অনিরুদ্ধ প্লিজ !  লজ্জা দিস না। অনেক দিনের কথা।  তখন তো তুই ঐরকমই  ছিলিস।

  কবে  কলেজে জয়েন করেছিস?

 কি করে জানলি ? আমার সঙ্গে তো কারো যোগাযোগ নেই তেমন! 

 আমি তোর খবরাখবর রাখি একটু । নীতার সঙ্গে ফেসবুকে তোর যোগাযোগ আছে ,ওই খবর দেয় আমাকে । আমি মাঝে মাঝে ফেসবুকে তোর প্রোফাইলে গিয়ে তোর খবর পেয়ে যায়।

  কেনরে ? হঠাৎ আমার খবর নিয়ে তোর কি লাভ? 

  বন্ধুদের খোঁজ নেওয়াটা সামাজিকতা বলে । এতে কেউ লাভ-ক্ষতি দেখেনা ।তোর মতো শুধু পড়াশোনা নিয়ে থাকি না । "বইপোকা" কোথাকার!!

 বাজে বকবি  না তুই ! তোর মতো একবারেই বুঝতে পারতাম না তখন। কি করবো বল্। জেদ,আর অধ্যাবসায়ে এতোটা পথ আসতে হয়েছে।  
কোথায় থাকিস এখন ?

 যাদবপুরে একটা ফ্ল্যাট কিনেছি। কাছাকাছি আমার চেম্বার।  তুই তো কলকাতায় আছিস । সানডে আয়, একটু বসে কফি খাওয়া যাবে আর গল্প করা যাবে। কতোদিন সামনাসামনি দেখিনি।

 গ্রুপে তোর ফ্যামিলির ফটো দিলিনা তো!  দেখতাম।

 আচ্ছা দিচ্ছি।
অনিরুদ্ধ রিসেন্ট বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা ছবি পোস্ট করেছে গ্ৰুপে।

 
আদৃতাকেও  দুটো ছবি পোস্ট করেছে অনিরুদ্ধ। অবাক হয়ে যাচ্ছে আদৃতা। সেই মোটুরাম, হাঁদারাম এখন হট, হ্যান্ডসাম।
 
 ফেসবুকে তোর কয়েকটা ফটো দেখেছি। আগের থেকে অনেক সুন্দরী হয়েছিস ।

 থ্যাঙ্ক ইউ । থ্যাঙ্ক ইউ। কেউ সুন্দরী বললে মন ভরে যায়।  কিন্তু তুই কি আমার সাথে ফ্লার্ট করছিস ?

  সে তুই যা মনে করিস ! ভালো লাগে দেখতে তাই বললাম । পরের সানডে আসবি তো?

 আজ তো বৃহস্পতিবার। আপাতত কোনো কাজ নেই রবিবার,  যাওয়া যেতে পারে । যদি কোন কাজ এসে  যায় মাঝে  তবে তোকে জানিয়ে দেবো। আচ্ছা এবার অফলাইন হতে হবে ট্রেন ঢুকছে হাওড়ায়।

 ওকে বাই।
 
  হাতে  দুদিন সময় আছে । অনিরুদ্ধ কি এখনো ওর প্রতি দুর্বল? কি জানি না হতেও পারে ! স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে হাসি পেয়ে যায় আদৃতার।  অনেক বছর পর সাক্ষাৎ হবে।   দুজনে সাইন্স পড়েছে।   মেডিকেলে চান্স পেয়ে অনিরুদ্ধ পড়তে চলে যায়। আর আদৃতা  ফিজিক্স অনার্সে ভর্তি হয়। তারপর অনেক পথ পেরিয়ে আজ একটি কলেজের অধ্যাপিকা। অনিরুদ্ধর বাবা-মা  শিক্ষকতা করতেন। বোন  অন্তরা ওদের দুই বছরের জুনিয়র ছিল।

 

আদৃতার বাবা সরকারি অফিসে চাকরি করতেন রিটায়ার করেছেন । কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট কিনেছেন ।সেখানেই থাকে বাবা-মা আর মেয়ে।
মাঝেমধ্যে উলুবেরিয়া ঘুরে আসে আদৃতা।  ওখানে কাকু ,কাকিমা , ও কাকুর ছেলে রজত থাকে। মাঝে মাঝে রজতও এখানে এসে থাকে। উলুবেরিয়া থেকে ফিরছিল কলকাতা তখনই হোয়াটস্অ্যাপে চ্যাট করতে থাকে অনিরুদ্ধর সাথে।
ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে নির্মলবাবু চাকরিতে অবসরকালীন প্রাপ্ত টাকা ,ও জমানো টাকা দিয়ে এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিলেন।  খুব কাজে লেগে গেছে আদৃতা ও রজতের । পড়াশোনা করতে রজতকেও মাঝে মাঝে কলকাতাতেও আসতে হয়।

মাঝে   দুদিন খুব ব্যস্ততায় কাটে।  আজ রবিবার।
হলুদ একটা মটকা শাড়ি,  কালো বোট নেক ব্লাউজ,  চুল খোলা,  ছোট্ট একটা কালো টিপ,  লিপস্টিক,  অক্সিডাইসের ঝোলা কানের দুল।
মা অর্পিতাদেবী মেয়ের সাজ অনেকক্ষণ দেখছিলেন  এরপর কমেন্ট করেন।

 কিরে ! কতোদিন পর শাড়ি পরলি। খুব সুন্দর লাগছে । মাঝে মধ্যে শাড়ি পরতে পারিস তো ! কিন্তু কোথায় যাবি?  আজ তো মনে হচ্ছে  বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে মিট করতে যাচ্ছিস ! তা কে  সেই অভাগা ? যাকে ভবিষ্যতে কষ্ট পেতে হবে!

 মা  তুমি কি ঘুরে ফিরে এক টপিকে আটকে যাও ! সে সব কিছু না । স্কুলের বন্ধু অনিরুদ্ধর  সঙ্গে কফির  নিয়ন্ত্রণ রয়েছে । কতোদিন পর দেখা হবে তাই একটু চমকে দিতে সাজলাম।
 
 চমকে দিতে ইচ্ছা হল কেন? ভালোবাসা আছে বলেই তো।  ঐদিন আমরাও পেরিয়ে এসেছি  । তাইনা বলো! বলেই নির্মল বাবুর দিকে তাকান।

 বাপি দেখ, মা কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে জ্বালাচ্ছে । অনিরুদ্ধর অন্য কোনো গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে বুঝেছো?  তাই আমি ওইসব কিছু ভাবি নি।  ছোটবেলার মোটু, হাঁদারাম এখন  হ্যান্ডসাম ডঃ অনিরুদ্ধ সামন্ত।

 বাহ!  বাহ!  ডাক্তার আর অধ্যাপিকা জুটিটা ভালোই হবে তাইনা বলো।

 মা তুমি আবার শুরু করলে ।

  আচ্ছা , শোন্ অনিরুদ্ধ সঙ্গে একটা সেলফি অন্তত তুলিস।  দেখবো কেমন মানিয়েছে দুজনকে।

 উফফ্!  তুমি চুপ করো তো!একবার শুরু করলে হলো। ওর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানিনা আর তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে দিলে! তুমি পারোও বটে!!

একটা উবের বুক করেছে । নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে মিনিট পঁচিশ সময় লাগলো। আদৃতা পৌঁছে দেখে ওর জন্য ওয়েট করছে অনিরুদ্ধ।
অনেক বছর পর আদৃতা অনিরুদ্ধ সামনাসামনি। দুজন দুজনকে দেখছে মুগ্ধ হয়ে। অনিরুদ্ধের পোশাক,অ্যাপিয়ারেন্স, স্মার্টনেস সবকিছু দারুণ।
অনিরুদ্ধ আদৃতার হাতটা ধরে নিয়ে যায় ওর বুক করা টেবিলে। দুটো কোল্ড কফির অর্ডার দিয়েছে অনিরুদ্ধ।
কেমন যেন একটা অস্বস্তি হয় আদৃতার । কি বলবে বুঝতে পারে না । দুজন দুজনকে দেখছে।
হঠাৎই অনিরুদ্ধ বলে তোকে এতো সুন্দর লাগছে, একটা ফটো তুলব? 
 

আমার একার না, আয়  দুজনেই তুলি বলে আদৃতা।
আচ্ছা বলে উঠে  গিয়ে আদৃতার একেবারে ক্লোজ দাঁড়িয়েছে অনিরুদ্ধ। অদ্ভুত একটা অনুভূতি বুকের মধ্যে আদৃতার। অনিরুদ্ধের শ্বাস ওর কাঁধে পড়ছে।
আচমকা অনিরুদ্ধ ওর মাথা ঠেকায়  আদৃতার মাথায়, বাঁ হাত রাখে কোমরে। আদৃতার শরীরে কেমন  কাঁপন ধরে সেটা চোখে মুখে প্রকাশ পেয়ে যায়।  রাঙা হয়ে গেছে মুখ। আদৃতা যে  কারো এতো কাছে আসে নি। অনিরুদ্ধ কেমন একটা অধিকারবোধে ওকে ধরে রেখেছে। ভালো লাগছে আদৃতারও।কয়েকটা ফটো তোলে অনিরুদ্ধ।

এবার আমার কোমর ছাড়। সবাই দেখছে । তুই  কি মেয়েদের সঙ্গে ফটো তুললে এই ভাবে তাদের কোমর ধরিস? 

 পারমিশন নেওয়া উচিত ছিল। তবে
ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন একেবারেই না।  এই প্রথমবার আমি কারো কোমর ধরলাম ,খুব ইচ্ছা করলো তাই । যে ছোটবেলায় আমাকে পাত্তা দেয়নি তার।

 আচ্ছা ! প্রতিশোধ।

 না,  ডিয়ার । ভালোবাসা । বন্ধুত্বের ভালোবাসা । বন্ধুত্বের দাবিতে ধরলাম তোর কোমর। তুই ভুলে গেলেও আমি তোকে ভুলিনি । তোর মুখে মোটু,  হাঁদারাম বলা শব্দ দুটো আজও আমার কানে বাজে।

 সেদিনই তো সরি বললাম। প্লিজ আর লজ্জা দিস না।

তুইও লজ্জা পাস ? সেই ডাকাবুকো মেয়েটার এমন মিষ্টি লাজুক মুখ দেখলে প্রেমে পড়ে যাবো তো! 

 তুই না !  আচ্ছা এবার উঠবো।

এতো তাড়াতাড়ি কেন?

 কফি খাওয়ার অফার দিয়েছিলে ওটা তো হয়ে গেছে আবার কি? 

 এই তো সবে শুরু । আজ সন্ধ্যে সাতটা অব্দি আমার সঙ্গে থাকতে হবে যে!

 কেন রে ! কি করব এতোক্ষণ?  মা-বাবা চিন্তা করবে।

 ফোন করে দে না প্লিজ । কতোদিন পর একসাথে হলাম । এতো তাড়াতাড়ি চলে যাস না।
আচ্ছা চল আমার গাড়িতে  একটু প্রিন্সেপ ঘাট ঘুরে আসি।
গাড়িতে সুন্দর গান চালিয়েছে অনিরুদ্ধ। প্রেমের গান।
 দুজনে পৌঁছে পাশাপাশি বসেছে।
 
 তোর কি  বয়-ফ্রেন্ড আছে আদৃতা?

  হ্যাঁ, আছে ।
 চমকে ওঠে অনিরুদ্ধ
কতদিনের সম্পর্ক?

 বছর চারেক হবে।

 কখনো ফেসবুকে একসঙ্গে দেখিনিতো!

প্রেম করি সেটা  ঢাকঢোল পিটিয়ে দেখাতে হবে নাকি !

অনিরুদ্ধর মুখটা দেখে আদৃতার  মনে মনে খুব হাসি পেয়েছে । কেমন যেন এক লহমায় মুখটা চুপসে গেছে । পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরিয়ে জলের দিকে তাকিয়ে আছে।

 কি করে তোর বয়ফ্রেন্ড?

  অধ্যাপক।
 
 কোন কলেজের? 

সব তোকে  জানতে হবে কেন ? তোর গার্লফ্রেন্ড এর কথা আমি কি জানতে চাইছি !

 আমার সবাই এমনি ফ্রেন্ড।  স্পেশাল কেউ নেই।

 সেকি ! এতো বছরেও কাউকে ভালোবাসিসনি?

  না ।  কেউ ছিল একজন। এখন নেই।

ওহঃ,  সরি রে। এই দেখ্ দেখ্।কেমন জলের উপরটা। অস্তগামী সূর্যের আলো পড়েছে।  কি সুন্দর! 

  বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আসিস নি আগে?  কোথাও যাসনি ঘুরতে?

 না। তার সময় হয় না।
অনিরুদ্ধ ফোন বেজে ওঠে । মায়ের সঙ্গে কথা বলে অনিরুদ্ধ।
 চল্  আমাদের ফ্ল্যাটে।

   কেন ? এখন  এইভাবে ?

 মা বললো তোর বন্ধুকে নিয়ে আয়।  মাকে বলেছিলাম স্কুলের বন্ধুর সঙ্গে মিট করতে যাচ্ছি তাই। চল্ চল্।

অনিরুদ্ধ আবার একটা সিগারেট ধরায়।
  তুই এতো সিগারেট কেন খাস অনিরুদ্ধ!  নিজে ডাক্তার হয়েও।

 আমি বেশি খাই না । তবে যখন ডিপ্রেসড আর টেনশড থাকি তখন একটু বেশি খেয়ে ফেলি।

 এখন কোন্  চিন্তা মাথায়! 

 ও কিছু না চল্।
আদৃতা  গাড়িতে বসে। অনিরুদ্ধ একমনে গাড়ি চালাচ্ছে।

 অন্তরা কেমন আছে রে ! 

  ভালো আছে।  আমার একটা ভাগ্নাও হয়েছে । গোগোল দু বছরের এখন। ওরা এসেছে। 

আদৃতা কথা বলছে  অনিরুদ্ধ  শুনছে মাঝেমধ্যে কমেন্ট করছে।
অনিরুদ্ধ ওকে নিয়ে  পৌঁছালে মাসীমা বলে ওঠেন "আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। এতোদিন পর বাবুর ইচ্ছা পূরণ হলো । তুমি এলে বাড়িতে।"

মা। তুমি না!! বলে অনিরুদ্ধ।

অন্তরা আদৃতাদি  বলে  জড়িয়ে ধরে । 
 কত সুন্দর হয়েছে তুমি।  আগের থেকেও সুন্দর।
 
 তোর গোগোল কোথায় ? দেখছি নাতো!
 
ওর বাবার সঙ্গে  খেলতে গেছে । এক্ষুনি এসে যাবে। ফোন করে দিচ্ছি।
একটু পরেই গোগল,দীপ চলে আসে।
সোফাতে বসে আছে অন্তরা,  আদৃতা , দীপ, গোগোল , মেসোমশাই । গল্প করছে সবাই।

মাসীমা  ঘরে বানানো মিষ্টি, স্ন্যাক্স,  টেবিলে দিয়েছেন। 
খাবার দেখে গোগোল স্ন‍্যাক্স খেতে দৌড়ালে অন্তরা ওকে ধরে রেখেছে।  এক্ষুনি সব ফেলে দেবে।  বড্ড দামাল হয়েছে ।
দাদাকে ডেকে আন । ঠান্ডা হয়ে যাবে। বলেন অসীমা দেবী।
মা আমি গোগোলকে খাওয়াচ্ছি । আদৃতাদি তুমি একটু যাবে গো!

আদৃতা গিয়ে অনিরুদ্ধর ঘরের দরজা কয়েকবার নক করলে অনিরুদ্ধ দরজা খোলে।  চোখে মুখে জলের ছিটে ।
চোখটা একটু লাল হয়ে আছে।

 তোকে ডাকছিলাম।  মাসীমা কফি দিয়েছেন ঠান্ডা হয়ে যাবে।
 
ওহ। আচ্ছা। চল্ ।
তোর রুম  দেখাবি না?
 ভীষনভাবে অগোছালো কিন্তু।
আদৃতা দেখে বেশ বড় বেডরুম । একটা ডিভান। পাশে একটা ছোট বেড টেবিল । একটা বড় আলমারী।  একটা কম্পিউটার টেবিল। উপরে ল্যাপটপ রাখা। বুকস্লেফে কয়েকটা মোটা মোটা বই। এটাচ্ড বাথরুম । মেঝেতে পাতা কার্পেট। দুটো ইনডোর প্ল্যান্ট । একটা লাকি বাম্বু ।অন্যটা আদৃতা চেনে না।
বেশ গোছানো।  একটুও অগোছালো নয় , বলে আদৃতা।

 
সবাই মিলে কফি খাচ্ছে আদৃতার ফোন বেজে ওঠে।
হ্যাঁ মা । বলো।

কোথায় ?  কখন ফিরবি?
 
এইতো অনিরুদ্ধদের ফ্ল্যাটে । মিনিট দশেকের মধ্যে বেরুচ্ছি।

একেবারে বাড়িতে ! কি ব্যাপার?ইসিলিয়ে মাম্মি নে তুঝে চায়ে পে বুলায়া হ্যায়।

উফ্।  মা।  উঠে দূরে যায় আদৃতা। পাশে সবাই আছে শুনতে পাবে যে। মা তুমি না বড্ড জ্বালাও।

মাসীমা  বলেন আদৃতা ,  মা কি বলছেন?

কখন ফিরবো জানতে চাইছে। 

দে না।  একবার‌  দেখি বেয়ানের সঙ্গে  কথা বলি।

মা তুমি বাড়াবাড়ি করবে না কিন্তু। তবে দেব।

আরে বাবা তুই দেনা। 

মাসীমা,  মা কথা বলবে।

   কেমন আছেন?আমার আদৃতা জ্বালাইনি তো আপনাদের? 
 
 কি যে বলেন!  কি মিষ্টি মেয়ে আপনার! 

 না না । একেবারে মিষ্টি নয় কিন্তু।  আগেই বলে রাখলাম । খুব বিচ্ছু।

 আচ্ছা।  সে বুঝে নেব।

  একটা ভিডিও কল করতে বলুন তো আদৃতাকে । আপনাদের দেখি।

  ভিডিও কল করো তো আদৃতা। মা দেখবেন আমাদের।

মা ওইরকমই । কিছু মনে করবেন না মাসীমা। 

  আমিও ওইরকমই।  মায়েরা তাই হয়।

ভিডিও কলে সবার সঙ্গে কথা হয় অর্পিতাদেবীর।

সোমবার থেকে কলেজ । সেদিন সকালে মেসেজ পাইনি অনিরুদ্ধর। বেশ অনেক পরে মেসেজ আসে আদৃতার ফোনে। আদৃতা লেখে..

 কি ব্যাপার?  এত লেট কেন?
 
অপেক্ষায় আছিস বুঝলে আগে দিতাম।

আসলে সকালেই  পেয়ে যায় তো ! তাই।আচ্ছা রাখি রে।  কলেজে বেরুতে হবে রেডি হচ্ছি।

দুদিন প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস,  সেমিস্টারের চাপে গ্রুপটা খোলা হয়নি আদৃতার।  আজ খুলেছে। কতো মেসেজ। গরম কফি নিয়ে বসেছে।  কফিশপে ওর একার  একটা ফটো দিয়েছে গ্রুপে অনিরুদ্ধ।
 বান্ধবীদের কমেন্ট এই হট এন্ড হ্যান্ডসাম ! কবে বিয়ে করছিস ? ইত্যাদি ইত্যাদি।
অনিরুদ্ধ ওর সঙ্গে তোলা ছবিগুলো  আলাদা করে পাঠিয়েছে  আদৃতাকে। দুজনকে বেশ লাগছে।

অর্পিতাদেবী নিজের কফি নিয়ে এসে বেশ গম্ভীর মুখে আদৃতার সামনে বসেন।

কি ব্যাপার ! গম্ভীর কেন? এনি প্রবলেম?

না । ভাবছি আর তো কোন অজুহাত নেই ।  এবার বিয়েটা দিয়ে দেব। 

কার বিয়ে?  

কার মানে কি? তোর।  বুড়ি হয়ে গেলি তো!  কবে করবি বিয়ে! 

করবো তো  মা। আরো কিছুদিন পরে।

না । আর পরে না।অনিরুদ্ধের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

 শুনে গলায় কফি  আটকে যায় আদৃতার। কাশতে থাকে।  
 অর্পিতাদেবী উঠে গিয়ে আস্তে আস্তে পিঠ চাপতে থাকলে  ঠিক হয় আদৃতা।মুখে বলেন সাবধানে খাবি তো!
 
কে বলল তোমাকে? 

অসীমাদি ফোন করেছিলেন আজ।অসীমাদির বান্ধবীর মেয়ে । কলকাতায় থাকে । অনিরুদ্ধ ঠিক রাজি হয়নি । তবে আপত্তিও করেনি । দুই সপ্তাহ পর এনগেজমেন্ট  ।ঐদিন রবিবার নেমন্তন্ন করেছেন আমাদের।

তুমি যেও । আমি যাব না।

মানে ? তোর বন্ধুর এনগেজমেন্ট তুই না গেলে হয় ! এতো অসামাজিক কেন তুই ? সেদিন তো দিব্যি খেয়ে এলি। যেতেই হবে তোকে ।আমি শুনবো না।

আদৃতা উঠে  নিজের ঘরে গিয়ে কেঁদে ফেলে।  এই কদিন  ধরে কত স্বপ্ন দেখেছে অনিরুদ্ধকে নিয়ে।  কতো আনন্দ পেয়েছে।  কেন হলো এমন, ওর সঙ্গে।
কেন এমন করলো অনিরুদ্ধ!

সেদিন আর রাতে খেতে ওঠে না । মাথা ধরেছে বলে মাকে।
এই কদিন অনিরুদ্ধের মর্নিং মেসেজ ছাড়া আর কিছু মেসেজ আসে না ।

একদিন আদৃতা   লেখে তোর গার্লফ্রেন্ড ছিল বলিস নি তো সেদিন। 

উত্তরে অনিরুদ্ধ "আমার কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল না, এখনও নেই । মা ঠিক করেছে আমার বিয়ে। আমাদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হবে।  বিয়ের আগে আমার হবু বউয়ের সঙ্গে মিটও  করবো না ।একেবারে এনগেজমেন্ট , তারপর বিয়ে।  ফটোতে দেখেছি।"

আমাকে পাঠাবি তোর হবু বউয়ের ফটো?

মায়ের কাছে আছে । মাকে বলবো পাঠিয়ে দিতে।

নারে থাক।

সেই।  একেবারে এনগেজমেন্টের দিন দেখবি। বেশি দেরি তো নেই।  আমাদের গ্রুপের সবাইকে ইনভাইট করবো । সবাই আসবে ।আনন্দ হবে বেশ।

লেখাটা পড়ে আদৃতার চোখের জল বাধ মানে না । ওর ভালোবাসার মানুষের আশীর্বাদ হবে আর সেখানে আনন্দ করতে হবে ভেবে আবার কেঁদে ফেলে।ওর মনে হয় সময় যেন থমকে যায়। ঐ দিন না আসে।  কিছু ভালো লাগে না আর । এতো কষ্ট কেন হচ্ছে ওর ? অনিরুদ্ধের  সাথে আগে যোগাযোগ ছিল না। তাহলে এই কদিনে এতো ভালোবাসলো কেন?  নিজের মনকে শক্ত করতে চাইলেও পারছে না।  সেই নোনা জলের ধারা গড়িয়ে যাচ্ছে।

রাতে অর্পিতাদেবী, নির্মলবাবু ,আদৃতা খেতে বসেছে।
নির্মলবাবু বলেন  কি রে  মা ! খুব চাপ যাচ্ছে এখন?  চোখমুখ বসে গেছে আর খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে কদিন ধরেই দেখছি।

 হ্যাঁ বাবা।  সেমিস্টার চলছে। 

  হ্যাঁরে!  মনে হচ্ছে রাতে যেন ঘুমাচ্ছিস না । চোখ মুখ বসে গেছে ।এতো চাপ নিস না ।

 আচ্ছা মা ।তারপর খেয়ে উঠে যায়।
অর্পিতাদেবী  নির্মলবাবু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে ফেলেন।

পনেরো তারিখ সকাল থেকেই বাড়িতে যেন ব্যস্ততা। তাড়াতাড়ি জলখাবার খেয়ে নিতে বলেন অর্পিতাদেবী।  পার্লারের মেয়েটা আসবে।  মা ডেকেছে । চুল বেঁধে দেবে আর হালকা মেকআপ হবে মায়ের।

 অর্পিতাদেবী পার্লারের মেয়েটাকে বলেন আদৃতাকে একটু ঠিক করে দাও তো।  আমার মেয়েকে অনিরুদ্ধের হবু বৌয়ের থেকে যেন  সুন্দরী লাগে,  সেটা আমি দেখাতে চাই। নতুন কিনে আনা একটা সুন্দর শাড়ি , ব্লাউজ দেন ।
 
গাড়ি ভাড়া করে বেলা বারোটা নাগাদ পৌঁছে যায় ওরা।  গাড়িতে যেতে যেতে সমানে আদৃতা চোখ মোছে মা বাবার চোখ এড়িয়ে। একটা লজের সামনে দাঁড়িয়েছে গাড়ি।   খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে।  গেটটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো আশীর্বাদ লেখা আছে। ভিতরে ঢুকে একটা রুম। দুটো সিংহাসনের রাখা। দেওয়ালে ফুল দিয়ে সাজিয়ে নাম দুটোর ওপর সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। আশীর্বাদের মুহূর্তে খুলবে ঢাকাটা।

 গাড়ি থেকে নামতেই দেখে মাসীমা, মেসোমশাই ,অন্তরা ,অনিরুদ্ধ।
 
অনিরুদ্ধ আদৃতার  কানের কাছে গিয়ে বলে দারুন লাগছে তোকে।  ভয় হচ্ছে।  তোকে না মালা দিয়ে ফেলি।
আদৃতার বুকটা হু হু করে ওঠে । মনে হচ্ছে মুখে বলে দেয় কেন এমন করলি অনিরুদ্ধ ? আমি কোথায় কম  ছিলাম তোর কাছে?  কিন্তু বলতে পারেনা।  গলায় কষ্টটা দলা পাকিয়ে আছে।

চল্ আমাদের গ্রুপের সবাই এবার আসবে। দুপুরে একসঙ্গে খাবো সবাই।

তোর হবু বৌ কখন আসবে?

এসে যাবে।  তোর চোখটা লাল কেন রে?

কাজল পড়াতে গিয়ে চোখে লেগেছিল তাই।

দুপুরে হইহই করে সকলে খেতে খেতে।
শুধু আদৃতা চুপচাপ থাকে। আদৃতা দেখছে ওর মা-বাবা  অনিরুদ্ধর বাবা-মার সঙ্গে  হেসে হেসে কথা বলছে আর  ওর রাগে  গা জ্বালা করছে।

অনিরুদ্ধ ঠিক আদৃতার কাছে  বসেছে।  বন্ধুরা ফটো তুললে অনিরুদ্ধ আরো  আদৃতার কাছে সরে আসছে। মনের আরো কষ্ট বাড়ছে আদৃতার।

আদৃতা উঠে পড়েছে।  না আর সহ্য হচ্ছে না।
হলের মধ্যে  এখন জনা পনেরো  আছে।  কয়েকজন বন্ধু বান্ধবী । আর আছে দুজনের বাড়ির লোকজন। বাকিরা অনেকে রুমের বাইরের দিকে।

আদৃতা অনিরুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বলে,
আমি কি খুব খারাপ ?  তোর যে অপছন্দ  তা তো মনে হয়না । তোর এনগেজমেন্টের আগেও আমার সঙ্গে এমন করে মিশছিস যেন আমি তোর প্রেমিকা।  তাহলে কেন তুই আমাকে বিয়ে করবি না?
 ও মাসীমা  আমার মধ্যে কি ছিল না, যে আপনি বান্ধবীর মেয়েকে বৌমা করবেন?
 বলেই আর সামলাতে পারে না নিজেকে, কেঁদে ফেলে আদৃতা।

অর্পিতাদেবী বলেন  কি বলেছিলাম দিদি!
দেখুন ভেবে এখনো,  সামলাতে পারবেন তো!  স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করে বলে দেবে কিন্তু।
সবাই হাততালি দিয়ে হেসে ওঠে।

অনিরুদ্ধ আদৃতাকে আনন্দে কোলে তুলে নিয়েছে। 

অন্তরা বলে  দাদাভাই আমরা বাইরে চলে যাই।দাঁড়া একটু।
ফাঁকা রুমে  অনিরুদ্ধ আদৃতাকে  কোলে নিয়ে গিয়ে সাজানো চেয়ারে বসায় । সাদা কাপড়ে মোড়া নামদুটো সরিয়ে দেয়।
এনগেজমেন্টের  দুটো নাম জ্বলজ্বল করছে অনিরুদ্ধ আদৃতা।
আবার কাঁদতে কাঁদতে কিল চড় ঘুষি মারতে থাকে অনিরুদ্ধকে।
আদৃতার দুটো হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে অনিরুদ্ধ। গভীর চুম্বনে দুজন। বাইরে থেকে  হইহই করে ছুটে এসেছে বন্ধুরা।  সাদা পাঞ্জাবিতে লিপস্টিকের দাগ অনিরুদ্ধর। আদৃতার  ঠোঁট একটু  ফুলে উঠেছে। বন্ধুরা বলে সবে তো আশীর্বাদ । এখনই এমন ‌ ।  ফুলশয্যার রাতে আদৃতার  ঠোঁট থেকে রক্ত বেরোবে রে অনিরুদ্ধ। লজ্জা পেয়ে গেছে দু'জন।

 
 আমাকে এমন সারপ্রাইজ দেবার মানে কি ?কতো কেঁদেছি জানিস তুই!
 
সব জানি।  আর তুমিও যে  সোনা আমাকে কাঁদিয়েছিলে।  এটা আন্টি আর  মায়ের প্ল্যান।
তোর বয়ফ্রেন্ড আছে মাকে বললে , অর্পিতাআন্টিকে ফোন করে জানে এসব কিছু না । তুই আমাকে জ্বালানোর জন্য মিথ্যা বলেছিস।  আমার প্রতি তোর একটা টান আছে ‌ , তুই যে আমাকে ভালোবাসিস আর সেটা সত্যি কিনা দেখার জন্যএই প্ল্যান করা হয়। তারপর তোকে খুব পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায় আমার বিয়ের কথা শুনে তোর পাগলপ্রায় অবস্থা।
আমার খুব কষ্ট হতো রে, মনে হতো তোকে বলে দিই। কিন্তু অন্তরা আর মা বলতে দেয়নি। তোর এই বিস্ফোরণটা দেখতে চেয়েছিলাম সবাই।
অর্পিতাআন্টি বলেছিলেন ওর নিজের মুখে স্বীকার করবে । যদি ভালোবাসে  আর সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম আমরা।
আই লাভ ইউ টু সোনা । সেই উচ্চমাধ্যমিক থেকে। যখন সৈকত  বলেছিল তাকিয়ে লাভ নেই , এমন মোটু হলে মেয়েরা  কেউ পাত্তা দেবে না । তখন থেকেই ভালোবেসেছি । তোর খোঁজখবর রেখেছি। বাড়িতে বলেছি বিয়ে করবো তো তোকেই।

সেই মুহূর্তে আদৃতার কাকু কাকিমা রজত এসে পৌঁছায় । সবাই জানতো। শুধু আমি জানতাম না।
নিজেকে খুব হাঁদা মনে হয় আদৃতার‌ ।  মনে হয় ওই সবথেকে বোকা‌ । ওর বোঝা উচিত ছিল ব্যাপারটা। 
মাকে তো চেনে নিশ্চয়ই কোনো প্ল্যান করেছে এটা আগে ভাবা উচিত ছিল।

অনিরুদ্ধ বলে সৈকতের আসার অপেক্ষায় আছি। ওর জন্য এটা সারপ্রাইজ।
একটু পরে বউ মেয়ে নিয়ে সৈকত আসে।
আদৃতা অনিরুদ্ধ কে একসাথে দেখে সৈকত বলে শালা সেই আদৃতাকেই। ধন্য তুই অনিরুদ্ধ।
তারপর সৈকতের হাঁ হয়ে যাওয়া মুখে একটা রসগোল্লা দিয়ে অনিরুদ্ধ বলে শোধ বোধ।
বন্ধুরা সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।

___________________সমাপ্ত_গল্প_________________