বাংলা গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

Bangla Golpo #লেখনীতেঃ কথা চৌধুরী❤ কত করে বললাম যে, আমি এই কোচিং-এ যাবো না। তাও আব্বু আমাকে জোর করে ভর্তি করিয়েছেন। আব্বুর বন্ধুর কোচিং সেন্...

গল্প___আই লাভ ইউ টু❤❤

গল্প___আই লাভ ইউ টু❤❤

বাংলা গল্প

8 10 99
Bangla Golpo





#লেখনীতেঃ কথা চৌধুরী❤




কত করে বললাম যে, আমি এই কোচিং-এ যাবো না। তাও আব্বু আমাকে জোর করে ভর্তি করিয়েছেন। আব্বুর বন্ধুর কোচিং সেন্টার তাই আমি মানা করা সত্ত্বেও আমাকে জোর করে ভর্তি করলেন। কী আর করার? আব্বুর কথা তো আর অমান্য করতে পারবো না। তাই ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে লাগলাম।
এখন শীতকাল। অতিরিক্ত শীতে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি ক্লাসরুমে। শুনলাম আজকে না-কি আমাদের ট্রায়াল ক্লাস হবে। নতুন টিচার ক্লাস নিবেন। হঠাৎ ক্লাসে স্যার ঢুকলেন। আমি তো পুরো থ হয়ে গেলাম স্যারকে দেখে। পরনে একটা ইয়োলো কালারের জ্যাকেট আর জিন্স সেই সাথে চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। কী যে হ্যান্ডসাম লাগছে উনাকে সেটা প্রকাশ করার মতো ভাষা জানা নেই আমার। আর উনার এলোমেলো চুলগুলো আমার মনকেও খানিকটা এলোমেলো করে দিলো। 
ক্লাসে এসে চোখ বুলিয়ে, নিজের সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন। উনার নাম ইয়াসির। উনার মতো উনার নামটাও বেশ সুন্দর। বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক উনি। নিজের পরিচয় দেওয়া শেষ করে পড়াতে লাগলেন। আমি অনেক মনোযোগ দিয়ে উনার ক্লাস করতে লাগলাম। শুধু ক্লাস করলাম বললে ভুল হবে, উনার দিকেও তাকিয়ে ছিলাম। দেখতে যেমন সুন্দর উনার পড়ানোর পদ্ধতিও অনেক সুন্দর। আমি তো পুরো ফিদা হয়ে গেলাম। অনেক ভালো পড়াতে পারেন উনি, একটা ক্লাস করে যা বুঝতে পারলাম।
অনেকদিন হলো উনার ক্লাস করছি। অন্যসব ক্লাসের জন্য একজন ক্যাপ্টেন আর শুধু মাত্র উনার ক্লাসে আমাকে ক্যাপ্টেন করলেন উনি। আমি কৌতুহল নিয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, "স্যার, একজন ক্যাপ্টেন থাকা সত্ত্বেও আপনার ক্লাসে আমাকে কেন ক্যাপ্টেন করলেন?"
একটা হাসি দিয়ে উনি বললেন, "সোনিয়া, তুমি ক্লাসে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। তাই আমার ক্লাসে তুমিই ক্যাপ্টেন।"
উনি যে আমাকে পছন্দ করেন বলে ক্যাপ্টেন করেছেন, সেটা আমি বুঝতেও পারলাম না। উনি যে সুযোগ খোঁজেন আমার সাথে কথা বলার জন্য এটাও আমি ধরতে পারলাম না।
তিন দিনের জন্য আমি নানুর বাসায় বেড়াতে এলাম। সবাই মিলে অনেক মজা করলাম তিন দিন। বেড়ানো শেষ করে বাসায় ফিরে এলাম। কারণ কালকে কোচিং-এ সাপ্তাহিক পরীক্ষা আছে।
পরীক্ষা চলছে আর হলে গার্ড দিচ্ছেন আমার মাস্টার মশাই। আমি মনে মনে উনাকে 'মাস্টার মশাই' বলে ডাকি। আমি আমার মতো পরীক্ষা দিচ্ছি কিন্তু উনি আমার সাথে আজকে একটা কথাও বলছেন না। অথচ যেইভাবেই হোক না কেন আমার সাথে কথা বলার সুযোগ খোঁজেন আর আজকে কোনো কথাই বলছেন না। অদ্ভুদ ব্যাপার? আমি আর কিছু না ভেবে পরীক্ষা দিতে লাগলাম। পরীক্ষা শেষ করতেই আমার বান্ধবীরা আমায় চেপে ধরে বলতে লাগলো, "ঐ সোনিয়া, ইয়াসির স্যারের সাথে তোর কি চলে রে ভাই?"
শয়তান গুলার কথা শুনে আমি তো পুরো হতবাক হয়ে গেলাম। অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কী বলছিস তোরা এসব?"
"আরে, তুই যে তিনদিন আসিসনি স্যার তোর কথা অনেক বার জিজ্ঞেস করেছেন। কেন আসিসনি? কোনো সমস্যা হয়েছে না কি? কবে আসবি? আবলাআবলা।"
ওদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম মাস্টার মশাইকে বলে যাইনি বলে আমার উপর অভিমান করেছেন। আর তাই আজকে কোনো কথাও বলেননি আমার সাথে। এসব ভাবতেই ঠোঁটে আমার লাজুক হাসি ফুটে উঠলো। 
আমি তো এবার নবম শ্রেনীতে তারপর বিজ্ঞান শাখায় তাই আম্মুকে বলে উনাকে প্রাইভেট টিউটর করলাম। কারন উনি বিজ্ঞানের বিষয়গুলো অনেক ভালো পড়ান। কিন্তু একবারের জন্যও আমি বুঝতে পারলাম না যে আমার কাছাকাছি আসার সুযোগটা আমি নিজেই করে দিলাম উনাকে। 
উনি আমাকে দুপুরের দিকে পড়াতে লাগলেন। আর আমার কোচিং বিকাল ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত। সব সময়ই উনি বই খাতার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাকে অংক করতে দিয়ে ঠিকই চুপিচুপি আমাকে তাকিয়ে দেখেন। আমি যেনো বুঝতে না পারি তাই অংক করতে দিয়ে তাকিয়ে থাকেন।
মাত্র একমাস পড়িয়ে তিনি আর পড়ালেন না আমাকে।কোনো একটা জরুরি কাজে  ঢাকায় চলে গেলেন। উনি চলে যাওয়াতে অনেক কষ্ট লাগলো আমার। তবে উনার সাথে ফেইসবুকে কথা হয় মাঝে মাঝে।  ইদানীং উনি ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে কী যেন বলতে চান আমায়। আমি সব না বুঝলেও একটু একটু বুঝতে পারলাম যে উনি আমায় পছন্দ করেন। আর মনের কথা সোজাসুজি বলতে পারছেন না। তাই ঘুড়িয়ে পেচিয়ে বলার চেষ্টা করছেন। আমি বুঝে বুঝে শুধু মুচকি মুচকি হাসি আর ভাবি আমার মাস্টার মশাই আমাকে পছন্দ করেন। ইশ, ভাবা যায় এটা? অনেক দিন হয়ে গেলো কিন্তু তাও উনি বলতে পারছেন না। আমার খুব রাগ লাগছে যে ভালোবাসে কিন্তু কেন বলে না?
শেষ মেশ  আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পারলাম না। ভাবলাম উনার আশায় যদি বসে থাকি তাহলে এই জন্মেও আর মাস্টার মশাইকে ভালোবাসা হবে না। তাই আজকেই ফেইসবুকে প্রপোজ করবো বলে ঠিক করলাম। যেই ভাবা সেই কাজ, "আপনাকে একটা কথা বলবো?"
"হ্যাঁ, বলো।"
"আই লাভ ইউ।"
অপেক্ষা করছি ফোন হাতে নিয়ে কিন্তু উনার কোনো উত্তরই আসছে না। হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসলো, "আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও।"
"ঠিক আছে।"
আমাকে গুনে গুণে তেরোটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। আমিও সবগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারলাম। তারপর উনি আমাকে বললেন, "প্রশ্নের সঠিক উওর দেওয়ার জন্য পুরষ্কার স্বরূপ আই লাভ ইউ টু"
কী রকম সাংঘাতিক একটা লোক রে বাবা? এই জন্যই টিচারের প্রেমে পড়তে নেই। সবকিছুতেই শুধু প্রশ্ন করে। কিন্তু উনার উত্তর পেয়ে আমি যার পর নাই খুশি হয়েছি। আর লজ্জায় মুচকি মুচকি হাসছি। এভাবেই শুরু হলো আমার আর আমার মাস্টার মশাইয়ের নতুন পথচলা।

_________________ সমাপ্ত _______________________


(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)


Bangla Golpo #লেখনীতে_কথা_চৌধুরী❤ অন্য সবার মতো আমারও অনেক ইচ্ছে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করবো। আর ইচ্ছে পূরণ করতে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগও প...

Stories__ Don't Judge A Book By It's cover🙂

Stories__ Don't Judge A Book By It's cover🙂

বাংলা গল্প

8 10 99

Bangla Golpo


#লেখনীতে_কথা_চৌধুরী❤


অন্য সবার মতো আমারও অনেক ইচ্ছে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করবো। আর ইচ্ছে পূরণ করতে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগও পেয়ে গেলাম। আজকে ভার্সিটিতে আমার প্রথম ক্লাস। তাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে ভার্সিটিতে চলে এলাম। 

ভার্সিটিতে ঢুকতেই অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করলো সাথে একটা চাপা ভয়ও লাগছে। কারণ আধুনিক এই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই বাহারি বাহারি পোশাক আর সাজসজ্জা করে এসেছে। এদিকে আমি সামান্য সুতি কাপড়ের থ্রিপিস, মাথায় হিজাব, চোখে কালো ফ্রেমের চমশা আর পায়ে নরমাল জুতো ছাড়া তেমন কিছুই পড়িনি। এছাড়া সাজসজ্জা থেকে আমি সবসময় দূরেই থেকেছি।
ক্লাস কোথায় খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু কাউকে জিজ্ঞেস করারও সাহস হচ্ছে না। গুটিগুটি পায়ে হেঁটে অনেক কষ্টে ক্লাস খুঁজে পেলাম। ক্লাসে ঢুকতেই কয়েকজন আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো। আমি বুঝতে পেরেছি আমার পোশাক-আশাকের জন্যই তারা আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে। আমি চুপচাপ দ্বিতীয় সারির তৃতীয় চেয়ারে বসে পড়লাম। 
ক্লাস শুরু হয়ে গেল। সবাই ক্লাসে এসে পছন্দ মতো জায়গায় বসলো। কিন্তু আমার পাশে কেউ বসলো না। পুরো সারিতে আমি একাই বসে আছি। এটা আমার জন্য নতুন কিছু না। এসবে আমি অভ্যস্ত তাই একটু খারাপ লাগলেও তেমন কিছু মনে হয়নি আমার। এভাবেই একা একা দিন পার করতে লাগলাম। 
ক্লাস টেস্ট নেওয়ার সময় চলে ঘনিয়ে এলো। ক্লাস টেস্ট দিয়ে দিলাম। তিনদিন পর স্যার ফলাফল জানালেন। যখন আমার ফলাফল জানানো হলো, তখন সবাই কিছুটা অবাক হলো। কারণ ক্লাস টেস্টে আমি প্রথম হয়েছি। এরপর থেকে দুই একজন আমার সাথে কথা বললেও আমার পাশে কেউ বসতে চাইতো না। আমি অবশ্য কাউকে আমার পাশে বসার জন্য কখনও বলতাম না। কারণ জানি বলেও কোনো লাভ হবে না। কিন্তু যখন মিড টার্ম পরীক্ষা দেওয়ার পর ফল প্রকাশ হলো, তখন তারা আরও অবাক হলো। কারণ এই পরীক্ষায়ও আমি প্রথম হয়েছি তাও সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে। এরপর থেকে অনেকেই আমার সাথে কথা বলতে লাগলো এবং আমার পাশে এসেও বসতে লাগলো। 
ফাইনাল পরীক্ষার সময় তো সবাই মিলে আমাকে ডাকাডাকি করতে শুরু করলো। আমি যেন তাদের পাশে গিয়ে বসি। আমি ওদের কিছুই বললাম না শুধু চুপচাপ ওদের কথা শুনছি আর ভাবছি যে, একদিন কেউই আমার পাশে বসতে চায়নি আর আজ ওরা নিজে থেকেই আমাকে ডাকছে ওদের পাশে বসার জন্য। ওরা কখনও জানতেই পারেনি যে, আমি কোটিপতি বাবার একমাত্র মেয়ে। আমি আমার এই সাধারণ পোশাকের আড়ালে নিজের আসল পরিচয়টা সবসময় লুকিয়ে রাখতাম। কারণ আমি সবসময় চাইতাম সবাই আমাকে ভালোবাসুক আমার যোগ্যতায় আমার গুণে। আমার বাবার অর্থের জোরে নয়। আর পোশাক-আশাক দিয়ে মানুষকে যাচাই করা যায় না বা যাচাই করা উচিতও না।
সমাপ্ত 


(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

Bangla Golpo লেখাঃ- মোঃ আবীদ আবরার। নাদিয়া আমার ছাত্রী। আজকে পড়ানোর সময় দেখি তার বইয়ের ভাঁজে রঙিন একটা চিরকুটে লেখা " বড্ড বেশি ভালোবাস...

গল্পঃ- নাদিয়া

গল্পঃ- নাদিয়া

বাংলা গল্প

8 10 99

Bangla Golpo


লেখাঃ- মোঃ আবীদ আবরার।



নাদিয়া আমার ছাত্রী। আজকে পড়ানোর সময় দেখি তার বইয়ের ভাঁজে রঙিন একটা চিরকুটে লেখা " বড্ড বেশি ভালোবাসি স্যার "। 

আমি তো রীতিমতো অবাক হবার চরম পর্যায়ে, তবে এমন কিছু একটা আগেই ভেবেছিলাম। কিছুদিন ধরে নাদিয়ার আচরণ একটু অস্বাভাবিক মনে হতো।

 
চিরকুটটা নিজের কাছে রেখে স্বাভাবিক ভাবেই পড়ানো শেষ করলাম। তারপর নির্দিষ্ট সময় শেষে যখন ওর রুম থেকে বের হচ্ছিলাম তখন নাদিয়া বললো, 

-- স্যার কিছু বললেন না? 
-- কোন বিষয়? 
-- আপনাকে যে চিরকুট দিলাম। 
-- সেখানে তো কোনো উত্তর দেবার মতো কিছু পেলাম না। তুমি তোমার নিজের কিছু কথা লিখে দিয়েছ, সবসময় সব জিনিসের উত্তর হয় না। 
-- কিন্তু আমার তো উত্তর চাই। 
- অপেক্ষা করো, পেয়ে যাবে। 
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম, এটাই হয়তো আমার শেষ যাওয়া। আর এ বাড়িতে পা রাখা যাবে না, সদ্য বেড়ে ওঠা নাদিয়ার আচরণ প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। 
নাদিয়াদের বাসা থেকে বেরিয়ে আমি সরাসরি আঙ্কেলের অফিসে চলে এলাম। আঙ্কেল আমাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়েছে নিশ্চয়ই কেননা এখনো মাস শেষ হয়নি। 
মাস শেষে টিউশনির বেতনটা আঙ্কেলের অফিসে এসে আমাকে নিতে হয়। প্রতি মাসের এক তারিখ টিউশনি শেষ করে অফিসে যাবার নিয়ম সেই শুরু থেকে। 
-- কি ব্যাপার রাফসান? কেমন আছো? 
-- আলহামদুলিল্লাহ আঙ্কেল, আপনি কেমন আছেন? 
-- এইতো চলছে। 
-- আমি একটা কথা বলতে এসেছি আঙ্কেল। 
-- বলো। 
-- আমি নাদিয়াকে আর পড়াতে পারবো না। তাই ওর জন্য নতুন শিক্ষক রাখার ব্যবস্থা করেন। 
-- চাকরি হয়ে গেছে? 
-- না আঙ্কেল, অন্য কারণ। 
-- আমাকে বলা যাবে? 
-- আঙ্কেল, নাদিয়া আমাকে প্রপোজ করেছে। সে হয়তো আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে তাই আমি চাইনা এটা আর সামনে বাড়ুক। 
-- হুম বুঝলাম। 
- আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি চাই নাদিয়া অনেক বড় হোক। নাদিয়া বেশ মেধাবী, তার মতো ছাত্রী আমি কখনো পাইনি। তাই তার সেই মেধাকে আমি প্রেমের ফাঁদে ফেলতে চাই না। 
-- তুমি তার থেকে আলাদা হলে সে কি স্বাভাবিক থাকবে বলে মনে হয়? 
-- নাদিয়া সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে, এটা তার ভুল করার সময়। আপনি আজকে বাসায় গিয়ে তাকে যথেষ্ট বোঝাবেন। তাকে আমার কথা বলবেন। 
-- কি বলবো? 
-- বলবেন যে আমি বলেছি, তাকে ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে দেশের ভালো কোনো ভার্সিটিতে তাকে ভর্তি হতে হবে। যদি সে পারে তাহলে একদিন আমি তার সামনে আসবো। তার সফলতা একদিন আমাকে তার কাছে নিয়ে আসবে। 
-- সত্যি সত্যি যদি সে অপেক্ষা করে? 
-- করবে না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ, মানুষ, প্রকৃতি, সবকিছু বদলে যায়। ২/১ বছর গেলে সে এমনিতেই আমাকে ভুলে যাবে। 
-- ঠিক আছে আমি তাই বলবো। 
-- আজকে থেকে আপনি একটু বেশি সময় দিবেন তাকে। তবে আমাকে প্রপোজ করার জন্য তাকে মোটেই বকাবকি করার দরকার নেই। তাকে ভালোবাসা দিয়ে বোঝাবেন, সে বুঝতে পারবে। 
-- চা খাবে? 
-- না আঙ্কেল। 
-- একটা প্রশ্ন করি? 
-- জ্বি আঙ্কেল, করেন। 
-- নাদিয়া আমার একমাত্র সন্তান, যথেষ্ট মেধাবী শিক্ষার্থী সেটা তুমি নিজেই স্বীকার করেছো। 
-- হ্যাঁ সত্যি বলছি। 
-- সৌন্দর্যের দিক থেকেও নাদিয়া কিন্তু কোনো অংশে কম নয়, তাই না রাফসান? 
-- জ্বি এটাও সত্যি, নাদিয়া অনেক সুন্দরী। 
-- একটা মেয়ের এতগুলো ভালো দিক থাকার পরও সে নিজে থেকে তোমাকে প্রপোজ করেছে। কিন্তু তুমি তাকে গ্রহণ না করে, রিজেক্ট করে কেন এড়িয়ে যেতে চাইছো? নাদিয়াকে তোমার পছন্দ নয় তাই না? 
-- আঙ্কেল আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। অনেক বেশি সেই ভালোবাসা, তাই আমার কাছে পৃথিবীতে সে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। 
-- সে মেয়ে কি করে? পড়াশোনা? 
-- আমার চেয়ে এক বছরের জুনিয়র ছিল, গত তিনমাস আগে তার বিয়ে হয়ে গেছে। 
-- মানে? 
-- জ্বি, পরিবার থেকে ভালো পাত্র পেয়ে তাকে বিয়ে দিয়েছে। চাইলে পালিয়ে বিয়ে করতে পারতাম কিন্তু সে আমি দুজনের কেউ সেটা চাইনি এটা। 
-- মাঝে মাঝে অফিসে এসো, দেখা করে যেও। 
-- কথা দিতে পারছি না, তবে আপনার দাওয়াত আমার স্মরণ থাকবে। 
এটাই আঙ্কেলের সঙ্গে আমার শেষ দেখা। 
রাত দশটার মতো বেজে গেল তবুও মেসে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। দুই মাসের বাসা ভাড়া বাকি হয়ে গেছে, গত মাসে যেদিন আঙ্কেলের অফিস থেকে টাকা নিয়ে বের হলাম। তার ঠিক ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে পকেট ফাঁকা করে রাজধানীর কোনো এক পকেটমার তার পকেট ভারি করেছে। 
আজকে দুপুরে মেস থেকে বের হবার সময় মেসের ম্যানেজার কড়া করে কথা বলে দিয়েছে। দরকার হলে মোবাইল বিক্রি করে দিয়ে তারপর যেন বাসা ভাড়া দেই এমন কথা বলেছে। 
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্লান্ত হয়ে সাড়ে দশটার দিকে মেসে ফিরে গেলাম। আমার একমাত্র রুমমেট সাদ্দাম, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, পোশাক পাল্টাতে ইচ্ছে করছে না। 
একটু পরে সাদ্দাম বললো, 
-- সন্ধ্যা থেকে কোই ছিলেন রাফসান ভাই? আর মোবাইল বন্ধ কেন? আফরিন আপু এসেছিল। 
আমি চমকে উঠলাম। বিয়ের পরে আফরিনের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি আমার। আজকে হঠাৎ করে মেসে চলে এসেছে, ঘটনা কি? 
-- কখন এসেছিল? 
-- বিকেলে এসেছিল, ঘন্টা দুই অপেক্ষা করে চলে গেছে।
-- ওহ্। 
-- আপনার দু মাসের বাসা ভাড়া দিয়ে গেছে আর একটা চিঠি রেখে গেছে। চিঠিটা আপনার টেবিলে "আরণ্যক" উপন্যাসের মধ্যে আছে। 
-- আচ্ছা ঠিক আছে। 
ক্লান্ত শরীরে সেভাবেই ঘুমিয়ে গেছিলাম। রাত তিনটার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল, সাদ্দাম বই পড়ছে এখনো। এই ছেলেটা অনেক মেধাবী, ঠিক নাদিয়ার মতো বলা যায়। নাদিয়া যেকোনো পড়া সহজেই আয়ত্ত করতে পারে। আর সবসময়ই সে নতুন করে প্রশ্নের উত্তর সাজিয়ে বের করে। এতে করে শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ বেশি হবে বলেই আমার ধারণা। 
মাথা নাড়া দিলাম, মাথার মধ্যে নাদিয়া ঘুরঘুর করতে শুরু করেছে। তার চিন্তা মাথা থেকে বের করে দিতে হবে, আর সেজন্য এখন আফরিনের রেখে যাওয়া চিঠিটা পড়া যেতে পারে। 
আমি বিভূতিভূষণের "আরণ্যক" উপন্যাসের মধ্য থেকে চিঠিটা বের করলাম। আফরিন জানে এটা আমার প্রিয় একটা উপন্যাস। 
কেমন আছো? 
তোমার কথা মতো মা-বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করলাম। সত্যি বলছি, হাসবেন্ড হিসেবে সে অনেক ভালো। আমি তোমার সঙ্গে কাউকে তুলনা করতে চাই না তাই করলাম না। নাহলে সবদিক দিয়ে সে প্রায় তোমার মতো। 
সপ্তাহ খানিকের মধ্যে আমরা দেশ ছাড়ছি। চলে যাবো ইউরোপের কোনো এক উন্নত ব্যস্ত শহরে। তোমার সঙ্গে দেখা করার অনেক ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তোমার মোবাইল বন্ধ। বাসা ভাড়া দিয়ে গেলাম, তবে আমার মন বলছে আগামী মাসের মধ্যে তুমি ভালো একটা চাকরি পাবে। তুমি তো জানো আমি মাঝে মাঝে যা বলি তাই হয়ে যায়, এবার যদি হয় তাহলে আমি হ্যাপি। 
ভালো থাকার চেষ্টা করবে, কত বছর পরে আর দেশে ফিরবো জানি না। তবে বাংলাদেশে ফিরে আমি তোমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করবো। আশা করি সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করবে না। 
আফরিন... 
তিনবার পড়লাম। তারপর ভাজ করে সেভাবেই রেখে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে হলাম। রাতে কিছু খাওয়া হয়নি তাই ক্ষুধাটা বড্ড জ্বালাতন শুরু করেছে। 
★★
ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। অফিসে বসে বসে সেই চিঠিটা একটু আগে আবার পড়লাম। আফরিন কিংবা নাদিয়ার পরিবারের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। অবশ্য ঢাকা শহর ছেড়ে আমি সেই সময়ই চট্টগ্রামে চলে এসেছিলাম। এরপর আর কোনদিন ঢাকা শহরে যাইনি তাই কারো সঙ্গে যোগাযোগ হবার সুযোগ ছিল না। 
ব্যবহৃত সিম আর ফেসবুক আইডি সবকিছু শেষ করে দিয়ে নতুন জগৎ তৈরি করলাম। এখনো ব্যাচেলর বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করি, সকাল বেলা অফিসে নাস্তা করি। দুপুরে অফিস থেকেই লাঞ্চ করা হয়, আর রাতে হালকা কিছু খাওয়া। 
এইতো জীবন। 
সপ্তাহ খানিক পরের ঘটনা। অফিস স্টাফদের নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঘুরে এলাম গতকাল। চট্টগ্রাম থেকে খুব কাছেই, বৃহস্পতিবার রাতে গিয়ে আবার শুক্রবার রাতে ফিরে এসেছি। তার পরে গতকাল শনিবার পেরিয়ে আজ রোববার। 
রিসিপশন থেকে কল দিয়ে বললো আমার সঙ্গে একটা মেয়ে দেখা করতে এসেছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই সে বললো মেয়েটার নাম নাদিয়া। 
আমি চমকে গেলাম, সরাসরি নিজেই ওয়েটিং রুমের মধ্যে গিয়ে দেখি সোফায় কালো শাড়ি পরে বসে আছে এক তরুণী। মেয়েটা সেই নাদিয়া এটা চিনতে একটুও ভুল হলো না, আমাকে দেখে সে নিজেও তাকিয়ে আছে। 
আমি নাদিয়াকে নিয়ে অফিস থেকে বের হলাম। আগ্রাবাদের কাছেই একটা পার্ক আছে সেখানে চলে গেলাম দুজনেই। এরমধ্যে আমাদের কোনো কথা হলো না। পার্কে গিয়ে আমিই প্রথম জিজ্ঞেস করলাম, 
-- বাদাম খাবে? 
-- হুম। 
-- কেমন আছো তুমি? 
-- ভালো, আপনি কেমন আছেন স্যার? 
-- আমিও ভালো আছি, এতদিন পরে কীভাবে খুঁজে পেলে আমাকে? সরাসরি অফিসে। 
-- আপনি কি বিরক্ত হয়েছেন? 
-- না তবে অবাক হয়েছি। আমি ধরেই নিয়েছি আমাদের আর কোনদিন দেখা হবে না। আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে? 
-- তারাও ভালো আছে। 
-- কীভাবে জানলে আমি এই অফিসে চাকরি করি? 
-- আপনারা দুদিন আগে কক্সবাজার গিয়েছেন তাই না? 
-- হ্যাঁ। 
-- আপনারা যে গ্রুপের সঙ্গে গেছেন সেই গ্রুপের সঙ্গে আমি বেশ কয়েকবার ভ্রমণ করেছি। সাজেক বান্দরবান, রাঙামাটি, এমনকি কক্সবাজারও তাই ওই গ্রুপের সঙ্গে আমার এড আছে। কক্সবাজারে তোলা আপনাদের সবার কিছু গ্রুপ পিকচার সেই গ্রুপের মধ্যে আপলোড করা হয়েছে। আমি প্রথমে সেখানেই দেখেছি আপনাকে, এ ক'বছরে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি আপনার। 
-- হুম বুঝলাম। 
-- ওদের সঙ্গে অনেকবার ভ্রমণ করার কারণে তাদের সঙ্গে হালকা কথাবার্তার পরিচয় ছিল। তাই সেখানে জিজ্ঞেস করলাম, তারপর তারা বললো আপনারা একই অফিসের কিছু স্টাফ। 
-- এতো কষ্ট করে খোঁজার কি দরকার ছিল? 
নাদিয়া এবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর বললো, 
-- দরকার নেই তাই না স্যার? 
-- না মানে, এতদিনে তোমার বিয়ে সংসার সব হবার কথা। পরিবার থেকে নিশ্চয়ই ভালো কোনো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েছে। 
-- যেখানে পরিবার নেই, সেখানে আমার বিয়ে? 
-- মানে? 
-- আপনি চলে আসার পরে তিনমাসের মধ্যে মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। দোষটা সম্পুর্ণ বাবা করেছেন, সেই কারণে মা ও তাড়াহুড়ো করে আলাদা হবার সিদ্ধান্ত নেয়। 
-- অবিশ্বাস্য। 
-- ডিভোর্সের পরে আমি বাবার সঙ্গে ছিলাম, আর মা চলে গেল মামার বাসায়। এরপর বাবা হুট করে আবার বিয়ে করেন, আমি আর সেই বাসায় থাকার মতো স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। মামার বাসায় যাবার কোনো ইচ্ছে ছিল না তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে মেসে উঠতে হলো। 
-- তারপর? 
-- চিন্তা করতে পারেন? মা-বাবা সবাই আছে কিন্তু আমি কাউকে পাইনি। বাবা মাসে মাসে টাকা দিতেন, তবে আমিও এরমধ্যে টিউশনি খুঁজতে শুরু করি।
-- তখন কি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ? 
-- হ্যাঁ, ভার্সিটি এডমিশন নেবো এরকম মুহূর্ত। 
-- চান্স পেলে কোথায়? 
-- ইডেন মহিলা কলেজ। 
-- আন্টি এখন কোথায়? 
-- মা'ও বিয়ে করে নিয়েছে। কি করবে? বলেন। 
-- এতকিছু হয়ে গেল? 
-- সদ্য ভার্সিটিতে ওঠা একটা মেয়ের মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায় তারপর তারা দুজনেই যদি আলাদা আলাদা বিয়ে করে। তাহলে সেই মেয়ের মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে স্যার? 
-- আমি এমনটা আশা করিনি। 
-- এরপর থেকে সবসময় ঘোরাফেরা করতাম। সুযোগ পেলেই যেকোনো গ্রুপের সঙ্গে ট্যুরে অংশ নিতাম৷ নতুন সংসারে গিয়ে মা নিজেও আমাকে টাকা দিতেন আর বাবা তো আগে থেকেই। তাই আর টিউশনি করতে হতো না। একসময় যে নাদিয়াকে আপনি পড়াতেন সেই নাদিয়া নিজেও বেশ কিছুদিন টিউশনি করিয়েছে। 
-- পড়াশোনা তো এখনো শেষ হয়নি? 
-- না। 
-- আপনি চলে এসেছেন ছয় বছর হয়ে গেছে, বছর খানিক চলে গেছে এইচএসসি পাশ করে। আর বাকি পাঁচ বছর ভার্সিটিতে। 
-- নতুন করে কাউকে ভালো লাগেনি? 
-- একজনকেই ভালো করে ভালোবাসতে পারলাম না সেখানে আবার আরেকজন? 
-- আমি একজনকে ভালোবাসতাম জানো? 
-- আপনি চলে আসার পর আমি আপনার মেস খুঁজে বের করেছিলাম। বাবা বলেছিলেন লাভ হবে না কিন্তু মন মানতো না তাই খুঁজতাম। আপনার রুমে যে ছেলেটা ছিল তার কাছে জানতে পারি আফরিন নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতেন। 
-- জানার পরে ভুলে যেতে ইচ্ছে করেনি? 
-- না, যদি তার সঙ্গে বিয়ে হতো তাহলে নাহয় একটা কথা ছিল। 
-- এখন তো খুঁজে পেলে, মন ভালো লাগছে? 
এবার ভেজা চোখ নিয়ে নাদিয়া হাসলো। অনেক মিষ্টি সেই হাসিটা, হাসতে হাসতে বললো, 
-- আপনি বলেছিলেন আমি জীবনে সফল হতে পারলে আপনি আমার সামনে যাবেন। 
-- এখনো তো হওনি। 
-- হলে বা কি হতো? আপনি তো আমার কোনো খবর রাখেননি। 
-- আমি তোমার ভালো চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি এভাবে একা হয়ে যাবে ভাবিনি। 
-- আমি কি আমার অপেক্ষার পুরষ্কার পাবো না? 
-- কি চাও? 
-- যাকে এতো কষ্ট করে খুঁজে বের করলাম। 
-- ভেবে তারপর জানাবো। 
ওর মুখটা কালো হয়ে গেল। আমি নাদিয়ার একটা হাত ধরে সামনে হাঁটতে লাগলাম। চারিদিকে তখন মাগরিবের আজান দিচ্ছে। 
রাত এগারোটা। 
নাদিয়াকে ঢাকার বাসে তুলে দেবার জন্য তাকে নিয়ে অলংকার বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছি। নাদিয়া এখনো মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কালো শাড়ির উপর নীল একটা চাদর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাদিয়া। একটু পরে সুপারভাইজার এসে ডাকতে লাগলো। আমি ওকে নিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। নাদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় অনেক কিছু বলতে চাইছে। 
আমি ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললাম, 
-- ঢাকায় গিয়ে তোমার ভার্সিটির আশেপাশে দুজনে থাকার মতো একটা ছোট্ট ফ্যামিলি বাসা খুঁজে বের করবে। 
-- কেন? 
-- আমাকে বছর খানিক ধরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হেড অফিসে বদলি করতে চায়। কিন্তু ঢাকায় যাবার কোনো ইচ্ছে ছিল না তাই রাজি হইনি। তবে এখন তো সেই উপায় নেই, আমি আগামীকাল অফিসে গিয়ে বদলির আবেদন করবো। 
নাদিয়া এবার হাসলো। মাঝরাত তবুও ব্যস্ত এই শহরের ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে সবার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বাসের সুপারভাইজার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, আশেপাশের আরো অনেকেই হয়তো তাকিয়ে আছে। আমি সেভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম, 
-- সবাই দেখছে, এবার ছাড়ো। 
-- ইচ্ছে করছে না। 
-- তাহলে চলো আমিও সঙ্গে যাই। 
-- সত্যি বলছেন? 
-- একদম। 
আরো একটা টিকিট কেটে আমিও বাসে উঠে গেলাম। নাদিয়ার পাশের সিটের ভদ্রলোককে একবার বলাতেই সে সিট ছেড়ে আমার টিকিটের সিটে চলে গেল। 
বাস চলতে আরম্ভ করলো, জানালার পাশে বসা নাদিয়া আমার একটা হাত জড়িয়ে ধরে বসে আছে। অনেকক্ষণ পর সে বললো, 
-- আমি ঢাকা থেকে আসার সময় কোনদিন ভাবিনি আপনাকে সারাজীবনের জন্য পাবো। 
আমি কিছু বললাম না, ভাবতে লাগলাম কালকে সকালে অফিসে কল দিয়ে বলতে হবে আমি অফিসে যেতে পারবো না। একদিনের ছুটি নিতে হবে। 
----- সমাপ্ত -----


Bangla Golpo লেখকঃ জহিরুল_ইসলাম পরিবারের ইচ্ছেতে দুই ভাই একত্রে বিয়ে করলাম। বড় ভাইয়ের বউটা একদমি অশিক্ষিত। আমার কাছে ক্ষ্যাত মার্কা লাগতো। ক...

ছোট_গল্প গল্পঃঅভিনয়

ছোট_গল্প গল্পঃঅভিনয়

বাংলা গল্প

8 10 99

Bangla Golpo

লেখকঃ জহিরুল_ইসলাম



পরিবারের ইচ্ছেতে দুই ভাই একত্রে বিয়ে করলাম। বড় ভাইয়ের বউটা একদমি অশিক্ষিত। আমার কাছে ক্ষ্যাত মার্কা লাগতো। কারো সাথে কথা বলতো না। ভাইয়ের থাকা বন্ধু গুলো ভাবিকে দেখতে চাইলেও তাদেরকে মুখ দেখাতো না। মাথার উপর বড় ঘোমটা দিয়ে চা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।

আর এদিকে আমার বউ তুলনা স্বরুপ অনেক শিক্ষিত ভাবির চেয়ে। সারাক্ষন জীন্স টপ পড়ে থাকে। আমার বন্ধুরা আসলে তাদের সামনে গিয়ে হাসি ঠাট্টাই ব্যস্ত থাকতো। নিজের কাছে ব্যাপার গুলো খুবি ভালো লাগতো। বন্ধুরাও বউয়ের প্রশংসা করতে করতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলতো। এসব কান্ড দেখে রীতিমত রাগ চরম সীমায় পৌছায় আমার। কে শোনে কার কথা। কাজের বুয়ার সাথে সারাক্ষন চেঁচামেচি করে যেতেই থাকতো। বউয়ের কাছে মনেই হতো না যে কাজের বুয়াও মানুষ। কিভাবে ওর মানসিক পরিবর্তন করা যায় এটা ভেবে পাচ্ছিলাম না।

বউয়ের অত্যাচারে কাজের বুয়াটা অসুস্থ হয়ে যায়। তাই কিছুদিন কাজ করতে আসেনি। আর এদিকে বউটা আমার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে রাখছে।
একদিন রাত এগারোটার দিকে বউ বলছে-
--- এই শুননা! আমার নাটকে অভিনয় করার খুব ইচ্ছে। আর তুমি তো সারাক্ষন দেখি লেখালিখি নিয়ে ব্যস্ত থাকো। আমার জন্য একটা স্ক্রিপ্ট লিখো না?
বউয়ের কথা শোনে মুহূর্তেই মাথা বিগড়ে যায় আমার। যার নাকি ব্যবহারই ঠিক নেই সে করবে নাটক। ভাবছি আর একা একা হাসছি। আমার হাসি দেখে বউ বললো-
--- তুমি এভাবে হাসছো কেন কথা শোনে?
- তোমার মাঝে ধৈর্য বলতে কিছু আছে? তুমি করবে আবার নাটক! ব্যাপারটা কত হাস্যকর একবার ভাবোতো! যদি ধৈর্যই থাকতো তাহলে এখন এভাবে বলতে পারতে না।
--- জ্বী না! আমি পারবো। তুমি লিখবে কিনা তাই বলো?
- হ্যাঁ লিখবো।
বউয়ের কথা শোনে হাসিতে ঘুম আসছিল না। যার কোনো চরিত্র বলতে কিচ্ছু নেই তার মুখে অভিনয়ের কথা। আবার এটাও ভাবলাম, ও তো অভিনয় খুব ভালো ভাবে করতে জানে। ওকে দিয়েই কাজ হবে। দেখি বুঝিয়ে শুনিয়ে ওরে ঠিক করতে পারি কিনা। ব্যাপার গুলো বড় ভাই-ভাবি, মা-বাবার কাছে শেয়ার করলাম। শোনে সবাই হাসছে আমাকে নিয়ে। বলছে বউয়ের সাথে সাথে আমিও নাকি পাগল হয়েছি।
তার দুই দিন পর রাতে বউকে বললাম-
--- এই শুননা! তোমাকে নিয়ে অলরেডি আমার স্ক্রিপ্ট লেখা হয়ে গেছে। তুমি খুব শিগ্রই নাটকে অভিনয় করতে পারবে। তোমাকে পুরো দেশের মানুষ চিনবে। তখন তুমি তো আবার আমাকে চিনবে?
আমার কথা শোনে ও খুশিতে আত্মহারা প্রায়। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। শুধু হাত নাড়াচ্ছে।
 
- সত্যি লিখছো? এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে লিখছো? তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাইনা?
 
ওর মুখে ভালোবাসার কথা শোনে হাসছি আর ভাবছি " ভালোবাসা না ছাই" তোমারে সায়েস্তা করনের কৌশল অবলম্বন করতেছি।
--- কিন্তু একটা সর্ত আছে? সেটা হচ্ছে, তুমি তো নাটকে প্রথম অভিনয় করতে যাচ্ছো। তাই তোমাকে তারা ছোট-খাটো ক্যারেক্টার দিবে।
আমার কথা শোনে ও রেগে বললো-
- আমার চেহারা কি কোনো অংশে কারো চেয়ে কম? নাটকে দেখি কত কালো মেয়ে মেকাপ মেরে ফর্সা হয়ে অভিনয় করে। আর আমার তো মেকাপ করা লাগবে না। এমনিতেই পার্ফেক্ট আমি।
--- অাহ্ তুমি ব্যাপারটা বুঝছো না কেনো? তুমি তো নতুন। একবারেই তো নায়িকার চরিত্রে অভিনয় দিবে না তারা।
কিছুটা চুপ থাকার পর ও ভেবে বললো-
- আচ্ছা আমি রাজি। তবে কোন চরিত্রে অভিনয় করতে হবে আমাকে তাই বলো।
--- কাজের বুয়া হিসেবে। তবে নাটক করে বড় ক্যামেরা দিয়ে আর আমরা করবো মোবাইল দিয়ে।
এটা শোনে খুশির পরিবর্তে রাগে আগুন।
- কিহ্! কাজের বুয়ার অভিনয় করবো তাও আবার মোবাইল দিয়ে ভিডিও করবে তুমি?
--- আরে এতো রাগাচ্ছো কেনো তুমি? ক্যামেরার করা নাটক তো বেশি ভাইরাল হয়না। আর দেখো মোবাইল দিয়ে ভিডিও করলে কোটি কোটি মানুষ তোমাকে চিনবে জানবে।
কিছুটা রাগ কমিয়ে বললো-
- আচ্ছা আমি রাজি। কবে থেকে অভিনয় শুরু করতে হবে তাই বলো?
--- কাল থেকেই আমরা নাটক করা শুরু করতে পারি।
এদিকে মনের মধ্যে খুব ভয় হচ্ছে আমার। যদি ও কোনো ভাবে আমার করা প্লান বুঝতে পারে আমি শিউর ও আমাকে তালাক দিয়ে চলে যাবে। যা করার বুদ্ধি খাটিয়ে করতে হবে।
অভিনয় যেহেতু কাজের বুয়ার তাই কাজের বুয়াকে আমি ১৫ দিনের ছুটি দিলাম। কাজের বুয়া ছুটির কথা শোনে মন মরা হয়ে আছে। বুঝতে পারছি বুয়া কিসের জন্য মন মরা হয়ে আছে। ওর মন মরা দেখে বুয়াকে বললাম- খালা, আপনাকে ছুটি দিয়েছি ঠিকই তবে বেতন ঠিক ভাবে পাবেন। আপনি পনেরো দিন আরাম করেন। ছুটি পেয়ে খালা খুশি হয়ে আমার জন্য মঙ্গল কামনা করতে থাকে। গরিবের করা মঙ্গল কামনা একদিন ঠিকই সফল হবে এটা আমার বিশ্বাস। ব্যাপার গুলো বাড়ির সবাইকে ক্লিয়ার ভাবে বললাম। তারাও ভয় পাচ্ছে খানিকটা। তবুও মনের ভিতর সাহস নিয়ে কাজ করতে হবে। এদিকে কাজের বুয়া চলে যাওয়ার সময় তার যত ময়লা জামা-কাপড় সব আমি নিয়ে আসি বউয়ের জন্য।
আজ নাটকের প্রথম দিন। বউকে সোজা বলে দিলাম কোনো রকম সাজুগুজু করা যাবে না। তোমার ক্যারেক্টার কাজের বুয়া। কোনো জমিদারের মেয়ে না।
সাজুগুজু বাদ দিয়ে ময়লা জামা-কাপড় পরলো। বউ ময়লা কাপড় পড়ে বললো-
--- এরকম ময়লা কাপড় কেউ পড়বে?
ওর কথা শোনে খুব রাগ হচ্ছিল তখন আমার।
- কাজের বুয়া পড়তে পারলে তুমি পারবে না কেন? তুমি হীরার তৈরি নাকি? যদি পড়তে না পারো তাহলে নাটকে অভিনয় করতে হবে না।
--- না না! আমি পারবো। সব পারবো আমি।
এদিকে বাড়ির সদস্যদের সব ময়লা কাপড় একত্রে আমি গুছিয়ে রেখেছি বউয়ের জন্য। কাপড় গুলো ওর সামনে ছুড়ে মেরে বললাম-
- এই নে ফকিরের বাচ্চা। দশ মিনিটে কাপড় পরিষ্কার করে থালা-বাসন ধুয়ে দিস।
বউকে গালি দেয়াতে ও আমার সাথে রাগ দেখিয়ে বললো-
--- কিহ্ আমি ফকিরের বাচ্চা? এই বুয়ার অভিনয় আমি করতে পারবো না।
আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বললাম- তাহলে আমি নাটক বন্ধ করে দেই?
- না, আমি করবো।
এভাবে কিছুদিন কাজ করতে করতে দেখি বউটা আমার শুকিয়ে যাচ্ছে। আমার ঝারি, মা-বাবার গালি এগুলোও যেন মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে শুধু অভিনয়ের জন্য। কিছুতেই আর কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। তবুও আমি আরো বেশি বেশি চাপ দিচ্ছি শুধু বুঝানোর জন্য। কাজের বুয়াও আমাদের মত মানুষ। তাদেরও মন বলে কিছু আছে।
বারো দিন হতে চলছে নাটকের। বউয়ের মাঝে অনেক পরিবর্তন আসছে। সবার সাথে ফ্রি ভাবে এখন কথা বলছে। বাড়ির সব কাজ না বলাতেই একা একা করছে। কিছু ভুল হলেই আমি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছি। ও কাঁন্না করে দেই আমার গালি শুনে।
এক পর্যায়ে বলে উঠলো-
--- আমি আর বুয়ার অভিনয় করতে পারবো না। ক্ষমা চাচ্ছি।
- তাহলে বুঝতে পেরেছো সকল বুয়া গুলো কত কষ্ট করে অন্যের বাড়ি গিয়ে কাজ করে! এসব কিছু ছিল আমার সাজানো প্লান। যাতে তোমার বিবেক জাগ্রত হয়।
বউ আমার কথা শোনে কেঁদেই দিল। আমার কাছে সে মাথা নত করে ক্ষমা চাচ্ছে। সে নিজে গিয়ে বুয়ার কাছেও ক্ষমা চেয়ে আসে।
(সমাপ্ত)