নভেম্বর ২২, ২০২১
কত করে বললাম যে, আমি এই কোচিং-এ যাবো না। তাও আব্বু আমাকে জোর করে ভর্তি করিয়েছেন। আব্বুর বন্ধুর কোচিং সেন্টার তাই আমি মানা করা সত্ত্বেও আমাকে জোর করে ভর্তি করলেন। কী আর করার? আব্বুর কথা তো আর অমান্য করতে পারবো না। তাই ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে লাগলাম।
Bangla Golpo #লেখনীতেঃ কথা চৌধুরী❤ কত করে বললাম যে, আমি এই কোচিং-এ যাবো না। তাও আব্বু আমাকে জোর করে ভর্তি করিয়েছেন। আব্বুর বন্ধুর কোচিং সেন্...
গল্প___আই লাভ ইউ টু❤❤
গল্প___আই লাভ ইউ টু❤❤
Bangla Golpo
গল্প___আই লাভ ইউ টু❤❤
8
10
99
#লেখনীতেঃ কথা চৌধুরী❤
কত করে বললাম যে, আমি এই কোচিং-এ যাবো না। তাও আব্বু আমাকে জোর করে ভর্তি করিয়েছেন। আব্বুর বন্ধুর কোচিং সেন্টার তাই আমি মানা করা সত্ত্বেও আমাকে জোর করে ভর্তি করলেন। কী আর করার? আব্বুর কথা তো আর অমান্য করতে পারবো না। তাই ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে লাগলাম।
এখন শীতকাল। অতিরিক্ত শীতে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি ক্লাসরুমে। শুনলাম আজকে না-কি আমাদের ট্রায়াল ক্লাস হবে। নতুন টিচার ক্লাস নিবেন। হঠাৎ ক্লাসে স্যার ঢুকলেন। আমি তো পুরো থ হয়ে গেলাম স্যারকে দেখে। পরনে একটা ইয়োলো কালারের জ্যাকেট আর জিন্স সেই সাথে চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। কী যে হ্যান্ডসাম লাগছে উনাকে সেটা প্রকাশ করার মতো ভাষা জানা নেই আমার। আর উনার এলোমেলো চুলগুলো আমার মনকেও খানিকটা এলোমেলো করে দিলো।
ক্লাসে এসে চোখ বুলিয়ে, নিজের সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন। উনার নাম ইয়াসির। উনার মতো উনার নামটাও বেশ সুন্দর। বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক উনি। নিজের পরিচয় দেওয়া শেষ করে পড়াতে লাগলেন। আমি অনেক মনোযোগ দিয়ে উনার ক্লাস করতে লাগলাম। শুধু ক্লাস করলাম বললে ভুল হবে, উনার দিকেও তাকিয়ে ছিলাম। দেখতে যেমন সুন্দর উনার পড়ানোর পদ্ধতিও অনেক সুন্দর। আমি তো পুরো ফিদা হয়ে গেলাম। অনেক ভালো পড়াতে পারেন উনি, একটা ক্লাস করে যা বুঝতে পারলাম।
অনেকদিন হলো উনার ক্লাস করছি। অন্যসব ক্লাসের জন্য একজন ক্যাপ্টেন আর শুধু মাত্র উনার ক্লাসে আমাকে ক্যাপ্টেন করলেন উনি। আমি কৌতুহল নিয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, "স্যার, একজন ক্যাপ্টেন থাকা সত্ত্বেও আপনার ক্লাসে আমাকে কেন ক্যাপ্টেন করলেন?"
একটা হাসি দিয়ে উনি বললেন, "সোনিয়া, তুমি ক্লাসে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। তাই আমার ক্লাসে তুমিই ক্যাপ্টেন।"
উনি যে আমাকে পছন্দ করেন বলে ক্যাপ্টেন করেছেন, সেটা আমি বুঝতেও পারলাম না। উনি যে সুযোগ খোঁজেন আমার সাথে কথা বলার জন্য এটাও আমি ধরতে পারলাম না।
তিন দিনের জন্য আমি নানুর বাসায় বেড়াতে এলাম। সবাই মিলে অনেক মজা করলাম তিন দিন। বেড়ানো শেষ করে বাসায় ফিরে এলাম। কারণ কালকে কোচিং-এ সাপ্তাহিক পরীক্ষা আছে।
পরীক্ষা চলছে আর হলে গার্ড দিচ্ছেন আমার মাস্টার মশাই। আমি মনে মনে উনাকে 'মাস্টার মশাই' বলে ডাকি। আমি আমার মতো পরীক্ষা দিচ্ছি কিন্তু উনি আমার সাথে আজকে একটা কথাও বলছেন না। অথচ যেইভাবেই হোক না কেন আমার সাথে কথা বলার সুযোগ খোঁজেন আর আজকে কোনো কথাই বলছেন না। অদ্ভুদ ব্যাপার? আমি আর কিছু না ভেবে পরীক্ষা দিতে লাগলাম। পরীক্ষা শেষ করতেই আমার বান্ধবীরা আমায় চেপে ধরে বলতে লাগলো, "ঐ সোনিয়া, ইয়াসির স্যারের সাথে তোর কি চলে রে ভাই?"
শয়তান গুলার কথা শুনে আমি তো পুরো হতবাক হয়ে গেলাম। অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কী বলছিস তোরা এসব?"
"আরে, তুই যে তিনদিন আসিসনি স্যার তোর কথা অনেক বার জিজ্ঞেস করেছেন। কেন আসিসনি? কোনো সমস্যা হয়েছে না কি? কবে আসবি? আবলাআবলা।"
ওদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম মাস্টার মশাইকে বলে যাইনি বলে আমার উপর অভিমান করেছেন। আর তাই আজকে কোনো কথাও বলেননি আমার সাথে। এসব ভাবতেই ঠোঁটে আমার লাজুক হাসি ফুটে উঠলো।
আমি তো এবার নবম শ্রেনীতে তারপর বিজ্ঞান শাখায় তাই আম্মুকে বলে উনাকে প্রাইভেট টিউটর করলাম। কারন উনি বিজ্ঞানের বিষয়গুলো অনেক ভালো পড়ান। কিন্তু একবারের জন্যও আমি বুঝতে পারলাম না যে আমার কাছাকাছি আসার সুযোগটা আমি নিজেই করে দিলাম উনাকে।
উনি আমাকে দুপুরের দিকে পড়াতে লাগলেন। আর আমার কোচিং বিকাল ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত। সব সময়ই উনি বই খাতার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাকে অংক করতে দিয়ে ঠিকই চুপিচুপি আমাকে তাকিয়ে দেখেন। আমি যেনো বুঝতে না পারি তাই অংক করতে দিয়ে তাকিয়ে থাকেন।
মাত্র একমাস পড়িয়ে তিনি আর পড়ালেন না আমাকে।কোনো একটা জরুরি কাজে ঢাকায় চলে গেলেন। উনি চলে যাওয়াতে অনেক কষ্ট লাগলো আমার। তবে উনার সাথে ফেইসবুকে কথা হয় মাঝে মাঝে। ইদানীং উনি ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে কী যেন বলতে চান আমায়। আমি সব না বুঝলেও একটু একটু বুঝতে পারলাম যে উনি আমায় পছন্দ করেন। আর মনের কথা সোজাসুজি বলতে পারছেন না। তাই ঘুড়িয়ে পেচিয়ে বলার চেষ্টা করছেন। আমি বুঝে বুঝে শুধু মুচকি মুচকি হাসি আর ভাবি আমার মাস্টার মশাই আমাকে পছন্দ করেন। ইশ, ভাবা যায় এটা? অনেক দিন হয়ে গেলো কিন্তু তাও উনি বলতে পারছেন না। আমার খুব রাগ লাগছে যে ভালোবাসে কিন্তু কেন বলে না?
শেষ মেশ আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পারলাম না। ভাবলাম উনার আশায় যদি বসে থাকি তাহলে এই জন্মেও আর মাস্টার মশাইকে ভালোবাসা হবে না। তাই আজকেই ফেইসবুকে প্রপোজ করবো বলে ঠিক করলাম। যেই ভাবা সেই কাজ, "আপনাকে একটা কথা বলবো?"
"হ্যাঁ, বলো।"
"আই লাভ ইউ।"
অপেক্ষা করছি ফোন হাতে নিয়ে কিন্তু উনার কোনো উত্তরই আসছে না। হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসলো, "আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও।"
"ঠিক আছে।"
আমাকে গুনে গুণে তেরোটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। আমিও সবগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারলাম। তারপর উনি আমাকে বললেন, "প্রশ্নের সঠিক উওর দেওয়ার জন্য পুরষ্কার স্বরূপ আই লাভ ইউ টু"
কী রকম সাংঘাতিক একটা লোক রে বাবা? এই জন্যই টিচারের প্রেমে পড়তে নেই। সবকিছুতেই শুধু প্রশ্ন করে। কিন্তু উনার উত্তর পেয়ে আমি যার পর নাই খুশি হয়েছি। আর লজ্জায় মুচকি মুচকি হাসছি। এভাবেই শুরু হলো আমার আর আমার মাস্টার মশাইয়ের নতুন পথচলা।
_________________ সমাপ্ত _______________________
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন