Popular Products
Popular Products
Bangla Golpo
Tags Menu Widget
- 1080p Movies
- 300Mb Movies
- 720p HEVC Movies
- Bollywood Movies
- Bollywood Mp3 Songs
- Bollywood Video Songs
- Dual Audio
- English TV Shows
- Hindi Dubbed
- Hindi TV Shows
- Hollywood Movies
- Malayalam Movies
- Marathi Movies
- Mobile Movies
- Multi Audio
- Pakistani Movies
- Pc Games
- Pre Release
- Punjabi Movies
- Single Video Songs
- Tamil Movies
- Telugu Movies
- Trailers
- Uncategorized
- WEB Series
Css Options (Boxed and Snippet)
Default Variables
Link List
Menu Footer Widget
আমার সম্পর্কে
রহস্যময় সিরিজ (গল্প নিখোঁজ)
Bangla Golpo এজেন্ট রিশাদের ডেস্কে একটা নতুন ফাইল দেখা যাচ্ছে। ফোকাস লাইটেরআলোয় কেস ফাইলটি অদ্ভুত শাইনি একটা ভাব দেখাচ্ছে। হাতের মুঠি শ...
যোগাযোগ ফর্ম
অনুসরণকারী
এই ব্লগটি সন্ধান করুন
ব্লগ সংরক্ষাণাগার
- 02/11 - 02/18 (1)
- 04/23 - 04/30 (1)
- 01/09 - 01/16 (1)
- 01/02 - 01/09 (1)
- 11/28 - 12/05 (1)
- 11/21 - 11/28 (11)
- 10/17 - 10/24 (1)
Translate
About Us
Subscribe Us
Recent Products
Bangla Golpo এজেন্ট রিশাদের ডেস্কে একটা নতুন ফাইল দেখা যাচ্ছে। ফোকাস লাইটেরআলোয় কেস ফাইলটি অদ্ভুত শাইনি একটা ভাব দেখাচ্ছে। হাতের মুঠি শ...
রহস্যময় সিরিজ (গল্প নিখোঁজ)
Bangla Golpo
এজেন্ট রিশাদের ডেস্কে একটা নতুন ফাইল দেখা যাচ্ছে।
ফোকাস লাইটেরআলোয় কেস ফাইলটি অদ্ভুত শাইনি
একটা ভাব দেখাচ্ছে।
হাতের মুঠি শক্ত করে চিবুকের ঠিক সামনে চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রয়েছে।
পাশে এজেন্ট রণিন বসে আছে।
তাকিয়ে আছেরিশাদের দিকে।
-কি কেইস এইটা?
-একটা বড় চক্রের ব্যাপারে। সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলির মানুষগুলিকে জিম্মি করে পণ আদায় করে।
-সেকি! এই কান্ড কবে থেকে শুরু হলো?
-তাতো ঠিক জানি না। তবে ফাইল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গত বছরখানেক ধরে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ঢাকার নামিদামী সকল শিল্পপতি পরিবারকে টার্গেট করা হচ্ছে।
রণিনকে বাইরে যেয়ে এলিট কলোনিগুলা ম্যাপিং করতে বললো।
এরপর চিন্তায় ডুবে গেলো রিশাদ। জাহেদকে নিয়ে চক্কর লাগাতে হবে এসব এলাকায়।
জাদুর জুতোয় টাইট দিয়ে উঠে দাঁড়ালো রণিন ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার এর হেলিপ্যাড এর মাঝ বরাবর দাঁড়ালো, ফাইবার গ্লাসের সাথে ব্লুটুথ হেডফোনটা ঠিকমতো সাঁটালো।
একটা ভয়েস রিকগনাইজড ফোন করলো সাপোর্ট
সেন্টারে-
-সাপোর্ট এজেন্ট সুদীপ্ত বলছি। বলুন কিভাবে সহযোগীতা করতে পারি।
-এজেন্ট রণিন বলছি। ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরা, বনানী, বারিধারা, আশুলিয়া সহ সব এলিট কলোনির ঠিকানা চাই।
-এক মিনিট সময় দেবেন স্যার?
-যতো পারেন সময় নেন ব্যস্ত ভঙ্গিতে উড়ে চলেছে আশ্চর্য উড়ন্ত জুতোজোড়ার মালিক।
আজকে আবহাওয়া সুবিধার মনে হচ্ছে না। মেঘ ধেয়ে আসছে ঢাকা শহরের দিকে। মিনিট পার হতেই সাপোর্ট এজেন্ট জানালোঃ
-স্যার
-ইয়েস?
-ফাইবার গ্লাসের দিকে নজর দিন। থ্রিডি চশমাতে একটা চওড়া মতোন ম্যাপ এসে গেলো। পাঁচশ ফিট উপর থেকে ঢাকা শহরটার বিলাসি এলাকাগুলো ম্যাপে
রেড মার্কের ভেতর পড়ে গেলো।
-আই সি। দ্যাটস পারফেক্ট। এজেন্ট জাহেদ এর নাম ডিজিএফআইতে চেনেনা এমন সামরিক গোয়েন্দা কম আছে।
এর অন্য নাম ফাস্টম্যান বা গতি মানব। যে কোন আনআর্মড কমব্যাটে সে এতোই ক্ষিপ্র যে তুলনা মূলকভাবে অন্যরা অসহায় তার এ গুণের কাছে। বস্তুতঃ ডিজিএফআই দেশের আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোতেই নয়, অভ্যন্তরীণ অপরাধ ইনভেষ্টিগেশনেও এখন এগিয়ে যাচ্ছে।
এজেন্ট রিশাদ, জাহেদ এবং রণিনকে শুধুই জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে কাজ করতে পাঠানো হচ্ছে।
-রিশাদ ভাই ডেকেছেন?
-হ্যাঁ। একটা থ্রেট কেস ইনভেষ্টিগেশন করতে হবে। তুমি, আমি এবং রণিনকে এই টিমওয়ার্ক করতে হবে।।
-কি করতে হবে?
-আমার সাথে আসো।
-রাত নয়টা। বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। এজেন্ট রিশাদ এবং জাহেদ বেরিয়ে পড়েছে। ওদিকে রণিন বৃষ্টির কারণে হেডকোয়ার্টারে ফিরেছে। রিশাদের কাজ শুধু একটাই অপরাধী খুঁজে বের করা।
-একটা লাউঞ্জের খোঁজ পেয়েছি। ওখান থেকে কিছু নিখোঁজের খোঁজ পাচ্ছি।
-তার মানে গোড়ার খবর ওখানেই পাওয়া যাবে?
-তা তো বটেই।
-তাহলে চলুন।
গুলশানের একটা লাউঞ্জে ঢুকলো তারা। অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে কিংবা কাউচে, সোফাতে বসে আছে। একদিকে ডিজে মিউজিক। অন্যদিকে ব্যবসায়িক আলাপ চলছে।
হঠাৎ একটা চাপা গোঙানোর আওয়াজ এলো পাশের অন্ধকার করিডর থেকে। একটা মেয়ে বোধহয়।
-জাহেদ টেক কভার।
-ওকে ভাই। ধাম করে দরজাটা খুলে গেলো। চোখ
ছানাবড়া হয়ে গেলো রিশাদের। ফাইবার গ্লাস ওয়্যালেস সেট পড়ে নিলো।
-হ্যাঁ, রণিন।
-জ্বি রিশাদ ভাই।
-উড়াল দাও। সাথে একটা হেলিকপ্টার…
-এই কে আপনারা এখানে কি?
-হ্যান্ডস আপ। এজেন্টস অফ ডিজিএফআই।
-হাহাহা সে সুযোগ আর নাই। চারপাশ মাথা ঘুরে দেখো।
জাহেদ আর রিশাদ ধরা পড়ে গেছে জিম্মি চক্রের হাতে। আর এই জিম্মি চক্রের মূল হোতা তসলিম চৌধুরী।
-আপনি কি মনে করেছেন আমাদের দুজনকে বেঁধে ফেলেছেন বলে আপনি নিরাপদ?
-অবশ্যই। কারণ আমার এখানে ঢোকার সাথে সাথে তোমাদের শরীরে স্থাপিত ট্র্যাকার চিপ অকেজো হয়ে গেছে।
---হাহাহা।
ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার। রণিনকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। হঠাৎ করেই রিশাদ এবং জাহেদ ভাইয়ের জিপিএস ট্র্যাকারটা অকেজো হয়ে গেছে। এমনই যদি হয় তবে খুবই বিপদের কথা। তবে লাস্ট লোকেশনটা পরিপূর্ণভাবে এসেছে। এখন একটা হেলিকপ্টার নিয়ে গেলে হয়। ঘটনাস্থলে রণিন। যে বিল্ডিং থেকে ট্র্যাকিং হয়েছিলো তার পাশেই খোলা মাঠ। ওখানে ল্যান্ড করে থাকতে বললো পাইলট কে।
রিশাদ এবং জাহেদের মুখ-হাত-পা বন্দী। একটা চৌদ্দশো বর্গফুটের ফ্ল্যাটের স্টোর রুমে তাদের বন্দী করে রাখা হয়েছে।
ওদিকে তসলিম চৌধুরীর জিম্মি চক্রের সব কটি লোক আজ ব্যস্ত।
কারণআজকে কয়েকজন শিল্পপতির ছেলেমেয়েকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। কোনো অঘটন যাতে না ঘটে তার প্রটেকশনের খাতিরে এতো গভীর নিরাপত্তা।
কিন্তু বিপত্তি কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয় না। জিম্মি চক্রের পরবর্তী শিপমেন্টে যে মিনি কার্গো ভ্যানটা এসে থামলো তার ঠিক ওপাশেই রণিন দাঁড়িয়ে ছিলো। কার্গোতে কিছু আছে সন্দেহে দৌড়ে এলো এপাশে।
-এজেন্ট রণিন, ডিজিএফআই। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে জানতে চাই আপনাদের কার্গোতে কি আছে।
-হাত উপরে তোলো। তসলিম চৌধুরী গেটের বাইরে চলে এসেছে হাতে একটা .৩৩ ক্যালিবার নিয়ে।
রিশাদ আলগোছে হাতের বাঁধনটা কেটে মুখের বাঁধন কেটে দিলো।
এরপর জাহেদেরটা। ক্ষিপ্রমানব ওরফে জাহেদ রিশাদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো।
এরপর ধাঁই করে সেকেন্ডে দরজা ভেঙে সোজা লাউঞ্জের বড়ো মহলটাতে চলে এলো।
-সবাই অস্ত্র ফেলে দিন। এদিকে রণিন উপরে উঠে গেছে তার অলৌকিক জুতো জোড়ার কল্যাণে। প্রচন্ড গতিতে উড়ে তসলিম ও তার চক্রের যে কজন ছিলো তাদের কষে কয়টা হুক লাগালো।
তসলিম হাত থেকে তার গানটা ফেলেনি। উপর মুখে কয়টা ফাঁকা গুলি চালালো। রণিন লুকিয়ে পড়লো
গাড়ির আড়ালো।
-ওয়েল ওয়েল লিটল হিরো। তুমি আগে তো খুব হিরোগিরি দেখাচ্ছিলে। এখন কি হলো?
-মিঃ আপনি ভুল বুঝলেন আমাকে…বলেই রণিন সাহস করে উড়ে তসলিম চৌধুরীর উপর পড়ে সেফটি ক্যাচ
অন করে দিলো।
-এইটা তোর পাওনা, হারামী…বলেই ঘুঁষিয়ে দিলো। এদিকে রিশাদ সবাইকে মুক্ত করে ছেড়ে আনলো হেলিকপ্টারের দিকে।
তসলিম ও তার সঙ্গীরা বন্দী হলো। ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার।
তসলিম এবং তার সঙ্গীদের জেরা হচ্ছে সেলে।
এদিকে রিশাদ এর টেবিলে আরেকটি নতুন
ফাইল।
-কি এটা?
-আরেকটা কেস। কাল থেকে কাজ শুরু করতে হবে। তৈরি তোমরা?
-হ্যাঁ, তৈরি।
-সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো জাহেদ ও রণিন।
সমাপ্ত
গল্প নিখোঁজ
রহস্যময় সিরিজ
Bangla Golpo গল্প বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ অনু গল্প টুং করে একটা ম্যাসেজ ঢুকলো আদৃতার ফোনে। "উই আর ফ্রেন্ডস ফর এভার "সেখানে যোগ করেছে...
গল্প বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ অনু গল্প (গল্প নম্বর এক)
Bangla Golpo
গল্প বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ
অনু গল্প
Bangla Golpo মরগান সাহেবের প্রেতাত্মা তোর সাহস কেমন রে? আমি মুখ ঘুরিয়ে মন্টুদার দিকে তাকালাম। কেন বলো তো? জানা দরকার। আছে, মন্দ না। তার মা...
মরগান সাহেবের প্রেতাত্মা
মরগান সাহেবের প্রেতাত্মা
তোর সাহস কেমন রে?
আমি মুখ ঘুরিয়ে মন্টুদার দিকে তাকালাম। কেন বলো তো?
জানা দরকার।
আছে, মন্দ না।
তার মানে খুব বেশিও না।
খুব বেশি সাহস থাকা কি ভাল?
না তা না...
বাবা বলেন কোনও কিছুই খুব বেশি থাকা ভাল না।
তোর বাবা হলেন শিক্ষক মানুষ। শিক্ষকরা এভাবেই বলেন। সবই জ্ঞানের কথা।
এখন বিকেল প্রায় হয়ে আসছে। দুপুরের পর পর আমি মন্টুদার সঙ্গে বেরিয়েছি। মা ঘুমাচ্ছেন। বাবা দুপুরের খাবার খেয়েই বেরিয়ে গেছেন। আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। তারপরও দুপুরের পর স্কুল কমিটি মিটিং ডেকেছে। বাবাকে তো যেতেই হবে। বাবা স্কুলের হেডমাস্টার হয়ে এসেছেন।
আমরা ছিলাম সখিপুরে। ওখানকার একটা স্কুলের সিনিয়র টিচার ছিলেন বাবা। তাঁর বন্ধু মামুন আংকেল খুবই বড়লোক। গার্মেন্টসের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। নিজ এলাকায় একটা স্কুল করেছেন বহু টাকা খরচ করে। পঞ্চাশ ষাট বিঘা জমির ওপর তিনটা সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং। একেবারে আধুনিক ধরনের স্কুল। বাবাকে বললেন, হায়াত, সখিপুরের ওই স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে আমার স্কুলে হেডমাস্টার হয়ে আয়। স্কুলটা দাঁড় করা।
বন্ধুর কথা ফেলতে পারেননি বাবা। তাছাড়া যে কোনও চ্যালেঞ্জ নিতে বাবা খুবই পছন্দ করেন। বন্ধু স্কুল করেছেন, সেই স্কুল দাঁড় করানো তাঁরও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
সখিপুরের পাট চুকিয়ে এখানে চলে এলেন বাবা।
এটাও ‘পুর’। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মোশারফপুর গ্রাম। গ্রামটা ছবির মতো। মানুষজন কম। গাছপালা ফসলের মাঠ, একটা খাল চলে গেছে গ্রামের ভিতর দিয়ে। বাঁশবন আছে প্রচুর। সারাদিন শন শন করে হাওয়া বয় গাছপালায়। আর কত যে পাখি! সারাদিন পাখির ডাক। নির্জন দুপুরবেলাটা ঘুঘু পাখির ডাকে ভারি একটা ঘুম ঘুম পরিবেশ তৈরি হয়।
এই ঘুঘু পাখির ডাকেই কি দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করেই মা ঘুমিয়ে পড়েন! সখিপুরে তো এভাবে ঘুমাতে দেখিনি মাকে!
এখানে আমাদের ভারি সুন্দর একটা বাড়ি দিয়েছেন মামুন আংকেল। বিশাল বাড়ি। ছবির মতো একতলা একটা বিল্ডিং। অনেকগুলো রুম সেই বিল্ডিংয়ে। চওড়া সুন্দর বারান্দা দক্ষিণমুখি বিল্ডিংটার। একটা বাঁধানো ঘাটলার পুকুর আছে। পুকুরের পানিটা খুব স্বচ্ছ। বড় বড় মাছও নাকি আছে পুকুরে।
পুকুরের ওপারে গাছপালার বন। বাঁশঝাড় আছে অনেকগুলো। বাড়িটা দশ পনেরো বিঘার কম হবে না। সবুজ ঘাসের মাঠ আছে পিছন দিকে। নানা রকমের ঝোপঝাড়। ফলের গাছ আছে অনেক।
এতবড় বাড়িটায় মানুষ থাকতো মাত্র দুজন। কেয়ারটেকার হোসেন মিয়া আর তার বউ। মধ্য বয়সি নিঃসন্তান দম্পতি। বহু বছর ধরে মামুন আংকেলের সঙ্গে আছে। এই বাড়ির দেখভাল তো করেই, এলাকায় মামুন আংকেলের জমিজমা যা আছে সবই দেখে। হোসেন লেখাপড়া জানা লোক। ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছিল। বুদ্ধিমান সাহসী সৎ বিশ্বস্ত।
হোসেন মিয়ার থাকার জন্য আলাদা ঘর আছে। টিনের সুন্দর ঘর। একপাশে রান্নাচালা, পরিষ্কার ঝকঝকে উঠোন। উঠোনের পাশে জোড়া জামগাছ। অর্থাৎ গলাগলি করে থাকা দুটো জামগাছ।
বিল্ডিংটা সাজানো গোছানো। প্রতিটা রুমে সুন্দর ফার্নিচার। ড্রয়িংরুমে সুন্দর সোফা। ডাইনিং টেবিল আটজন মানুষের। কিচেন একেবারে আধুনিক ধরনের। বাথরুম খুব সুন্দর। ওয়াল কেবিনেটগুলোও সুন্দর। এক কথায় গ্রামের ভিতর একেবারে শহুরে কায়দার বিল্ডিং।
আমরা এখানে এলাম আজ সাতদিন হয়েছে। এসেই শুনেছি স্কুল বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করেই বাড়ির এই বিল্ডিংটা মামুন আংকেল করেছেন। বাবাকে বলেননি কিছুই কিন্তু তাঁর প্ল্যান ছিল বাবাকেই স্কুলের দায়িত্ব দেবেন। এই বাড়ি হবে আমাদের।
সেভাবেই সব হয়েছে।
বাড়ি দেখে বাবা মায়ের মতো আমিও মুগ্ধ। তবে আমি সবচাইতে বেশি মুগ্ধ মন্টুদাকে পেয়ে।
মন্টুদা আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। বাইশ তেইশ বছর বয়স হবে তাঁর। আমার তো মাত্র তেরো। ক্লাস সেভেনের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে এখানে চলে এসেছি। সখিপুরে বাবা যে স্কুলের টিচার ছিলেন ওই স্কুলেই পড়তাম। পড়ালেখায় খুবই ভাল আমি। প্রত্যেক বছর ফার্স্ট হতাম। বাবা এমনিতে আমাকে খুবই ভালবাসেন। যখন যা চাই তাই পাই। শুধু একটা ব্যাপারে কোনও ছাড় নেই। লেখাপড়া। আগে লেখাপড়া তারপর অন্য কিছু।
একবার ফার্স্ট হতে পারিনি। সেকেন্ড হয়েছিলাম। ইস সেবার যে কী রাগ বাবা আমার সঙ্গে করলেন! বেদম বকাঝকা, বেদম রাগারাগি। আমার ঘুম খাওয়া দাওয়া খেলাধুলা প্রায় হারাম করে দিয়েছিলেন। বাবার ওই রাগারাগির ভয়ে আমি আর সেকেন্ড হওয়ার সাহসই পাইনি। সবার আগে পড়ালেখা, বাবার এই কথা মনে রেখে চলছি।
এবার মন্টুদার কথা বলি।
নামের সঙ্গে ‘দা’ লাগাবার ফলে মনে হতে পারে মন্টুদা বুঝি হিন্দু পরিবারের ছেলে। আসলে তা না। এলাকার বনেদি মুসলমান পরিবারের ছেলে। চৌধুরী। মন্টুদার পুরো নাম মন্টু চৌধুরী। তাঁর বাবা জসিম চৌধুরী ছিলেন এলাকার প্রভাবশালি লোক। গ্রামের অর্ধেকের বেশি জায়গা জমি তাঁদেরই ছিল। জসিম চৌধুরী বেঁচে থাকতেই জায়গা সম্পত্তি অনেক বিক্রি করেছেন। সেই সব জমিই মামুন আংকেল কিনেছেন। তারপরও, এখনও মন্টুদাদের বাড়িঘর আর ফসলের জমি যা আছে, আরও এক দু’পুরুষ বসে খেতে পারবে।
মন্টুদার ভাই বোনরা সবাই উচ্চশিক্ষিত। মা বাবা বেঁচে নেই। ভাই বোনরা কেউ গ্রামে থাকে না। কেউ ঢাকায়, কেউ আমেরিকা কানাডায়। অস্ট্রেলিয়ায় আছেন একবোন। মন্টুদা সবার ছোট। লেখাপড়া তেমন করেননি। ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর আর লেখাপড়া করেননি। একটু ভবঘুরে টাইপ, পরোপকারি যুবক। এলাকার সবাই তাঁকে খুবই ভালবাসে। মানুষের বিপদ আপদে মন্টুদা আছেনই। গ্রামের যে কোনও কাজে যে তাঁকে ডাকে, মন্টুদা হাজির। কারও মেয়ের বিয়ে, না ডাকলেও মন্টুদা গিয়ে হাজির। বিয়ে বাড়ির কাজ যতটা সম্ভব করে দেবেন। কারও অসুখ করেছে, হাসপাতালে নিতে হবে, রাত দুপুরেও যদি সেই খবর পান, আর কেউ থাকুক না থাকুক মন্টুদা আছেন। কোনও গরিব মানুষের বাড়িতে রান্না হয়নি, মন্টুদা চাল ডাল মাছ তরকারি পৌঁছে দেবেন সেই বাড়িতে। চাঁদা তুলে গরিব মানুষের মেয়ের বিয়ে, টাকার অভাবে পড়তে পারছে না এমন ছেলেমেয়েকে পড়ানো, অর্থাৎ বিপদে পড়া মানুষের পাশে মন্টুদা আছেনই।
মন্টুদা থাকেন তাঁর একমাত্র চাচার কাছে। চাচার তিনমেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। গ্রামে চাচা চাচী একা। চাচা প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। তাঁর দেখাশোনার জন্য গ্রামে পড়ে আছেন মন্টুদা। একটা জিন্সের প্যান্ট আর টিশার্ট পরে ঘুরে বেড়ান। পায়ে পুরনো কেডস। মাথার চুল লম্বা, মুখে সাধুসন্তের মতো গোঁফ দাড়ি। আর চেহারা এত সুন্দর মন্টুদার! দেবদূতের মতো লাগে দেখতে। মুখে হাসিটা লেগেই আছে। কথা বলেন খুব সুন্দর করে। অত্যন্ত আলাপি মানুষ। যেদিন এই বাড়িতে এলাম সেদিনই বিকালবেলা মন্টুদা এসে হাজির। পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাবা মা আমি, আমরা তিনজনই তাঁর ভক্ত হয়ে গেলাম।
তারপর থেকে যখন তখন মন্টুদা আমাদের বাড়িতে আসেন, আমি মন্টুদাদের বাড়িতে যাই। তাঁর সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধান নয় দশ বছর। তারপরও এই এলাকায় এখন পর্যন্ত তিনিই আমার একমাত্র বন্ধু।
আজ দুপুরের পর মন্টুদা এসে বললেন, চল অভি, তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই।
কোথায়?
আরে চল না। গেলেই দেখতে পাবি।
চলো।
আমি মন্টুদার সঙ্গে বেরোলাম।
বাড়ির সামনের দিককার পথ মন্টুদা ধরলেন না। পিছন দিককার বাঁশঝাড় তেঁতুল আম জাম কাঁঠাল সফেদা এসব গাছপালায় ঘিরে থাকা জায়গাটা দিয়ে আমাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন।
আজকের আগে এদিকটায় সেভাবে আমার আসা হয়নি। এসে একটু অবাকই হলাম।
বাড়ির শেষ থেকেই শুরু হয়েছে ফসলের মাঠ। কিছু দূর গিয়ে একটা বনভূমি। অনেকটা জায়গা জুড়ে নানা রকম গাছপালা, বুনো ঝোপঝাড়। দুপুরের পর পরই কেমন নিঝুম হয়ে আছে জায়গাটা। শুধু হাওয়া বইছে, গাছপালায় পাখি ডাকছে। দুপুর শেষের রোদে হাওয়ার চলাচল, পাখির ডাক এসব থাকার পরও কেমন নির্জন, শব্দহীন লাগছে জায়গাটা।
মন্টুদা।
বল।
তুমি কি আমাকে এই বন দেখাতে আনলে?
না রে।
তবে?
এই বনের ওপারে, বেশ দূরে হচ্ছে আসল দেখার জিনিস।
কী সেটা?
আগে বলে দিলেই তো সব শেষ। চল, দেখ দূর থেকে।
আমরা বনের দিকটায় হাঁটতে লাগলাম।
মাঠ পেরিয়ে বনে ঢুকেছি, দেখি ঝোপঝাড়ে এমন অবস্থা, হাঁটা চলা বেশ কষ্টের। ঝোপঝাড় ভেঙে হাঁটতে হচ্ছে।
মামুন আংকেলের বাড়ির পিছনেই এমন বন কেন?
মন্টুদা বললেন, এগুলোও আমাদেরই জমি ছিল। এই পুরো এলাকাটাই এক সময় বন হয়ে গিয়েছিল। সাহেবরা যখন ছিল তখন এতটা বন জঙ্গল ছিল না। তারা সাফ সুতরা করেছিল।
সাহেব কারা?
পরে বলছি। বললাম না আমাদের জমি ছিল প্রায় সবই। মামুন আংকেলের মতো আরও কেউ কেউ কিনে নিয়েছেন। এই বনটাও এখন মামুন আংকেলেরই। শুনেছি এই এলাকায় তিনি বিশাল একটা কৃষি খামার করবেন। এজন্য শুধু জমি কিনছেন। চারশো বিঘার মতো কেনা হয়েছে। আরও কিনবেন। যে জায়গাটা তোকে এখন দেখাবো ওই পর্যন্ত তিনি কিনতে চান। এই বনের পর থেকে সব জমির মালিক এখন আমরা একা না, আরও কেউ কেউ আছে। তবে তারা একসময় আমাদের প্রজা মতো ছিল। আমাদের জমি চাষ করতো। পরবর্তীতে জমির মালিক হয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকেও কিনতে হবে। তবে আমি বা চাচা যা বলবো তাই হবে। আমাদের কথা ওরা শুনবে। মামুন আংকেলকে চাচা কথা দিয়েছেন, ওদিককার আমাদের জমিগুলো তো তাঁকে দেবেনই, অন্যদেরগুলোও কিনে দেবেন। এলাকায় মামুন আংকেল স্কুল করেছেন। গরিব মানুষের ছেলেমেয়েরা পড়বে। হায়াত স্যারের মতো স্যারকে হেডমাস্টার করে এনেছেন। এখন যদি হাজার দেড়হাজার বিঘার ওপর কৃষি খামার করেন তাহলে এলাকার বহুলোকের কর্ম সংস্থান হবে। গরিব মানুষরা কাজ পাবে।
কথা বলতে বলতে আমরা বনের উত্তর পাশটায় চলে এসেছি। এদিকে বনভূমির পরই আবার ফসলের মাঠ। কিলোমিটার খানেক দূরে এই বনভূমির মতোই গাছপালা ঘেরা একটা জায়গা। পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি বা ভাঙাচোরা বহু পুরনো দিনের দরদালান টাইপের কিছু যেন এই এতদূর থেকেও দেখা যায়।
মন্টুদা বললেন, ওই দেখ।
দেখছি তো। কী ওটা?
ওটাই তোকে দেখাতে আনলাম।
এই জিনিস দেখার কী আছে?
কিন্তু জিনিসটা কী, অনুমান করতো?
পুরনো কোনও জমিদার বাড়ি হবে। পরিত্যক্ত। এখন আর কেউ থাকে না।
না জমিদার বাড়ি না।
তবে?
নীলকুঠি।
আমি অবাক। নীলকুঠি?
হ্যাঁ। ওই যে সাহেবদের কথা বলছিলাম, ওই সাহেবদের নীলকুঠি। এই এলাকায় নীল চাষ করতে এসেছিল ব্রিটিশ সাহেবরা। তারা চলে যাওয়ার পর থেকে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। দিনে দিনে ধ্বংস হয়ে গেছে। সাহেবরা কয়েকজন মারা গিয়েছিল ওখানে। তখন তো খুব ম্যালেরিয়া হতো। ম্যালেরিয়ায় মরেছে। কয়েকজনের কবর আছে কুঠির অঙিনায়। ভয়ে কেউ যায় না।
ভয়ের কী আছে?
আছে, ভয়ের কারণ আছে।
কী কারণ বলো তো?
শেষ পর্যন্ত যে সাহেব বেঁচে ছিলেন তাঁর নাম মরগান সাহেব। বুড়ো থুত্থুরা হয়ে মারা গেছেন। কিন্তু আসলে নাকি মারা যাননি। এখনও বেঁচে আছেন। কোনও কোনও রাতে তাঁকে দেখা যায়। একটা লণ্ঠন হাতে বাড়ির এদিক ওদিক চলাফেরা করেন। বয়স হয়েছে আড়াই শো বছরের মতো।
আমি হেসে ফেললাম। ধুৎ। আড়াই শো বছর কোনও মানুষ বাঁচে নাকি?
এটাই তো আমি নিজ চোখে দেখতে চাই।
কীভাবে দেখবে?
নীলকুঠিতে যাবো।
যাও।
আমার সাহস খুব কম না। তারপরও একা যেতে ভয় লাগে। গ্রামের যাকেই বলেছি, চলো যাই, দেখি বুড়ো সাহেবটাকে সত্যি দেখা যায় কিনা। কেউ সাহস পায় না। শুনলেই ভয়ে পালায়। উরে বাপ রে বাপ! নীলকুঠি? মরে গেলেও যাবো না। বুড়ো সাহেবটা রাতেরবেলা কবর থেকে সবাইকে ডেকে তুলে চেয়ার টেবিল সাজিয়ে বসে গল্প গুজব করেন, খাওয়া দাওয়া করেন। কখনও কখনও দিনেরবেলাও দেখা যায় ওই দৃশ্য। ওরকম দৃশ্য দেখলে ভয়ে তখনই মারা যাবো।
কিন্তু আমি যেতে চাই, বুঝলি। দেখতে চাই ঘটনা কী! এজন্যই তোকে জিজ্ঞেস করেছি, তোর সাহস কেমন? যাবি আমার সঙ্গে?
নিজের বাহাদূরি জাহির করার জন্য সঙ্গে সঙ্গে বললাম, যাবো।
মন্টুদা লাফিয়ে উঠলেন, সত্যি?
সত্যি।
তখনও বুঝিনি, কী ভয়ংকর ঘটনা নীলকুঠিতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল
Bangla Golpo নাফিজা ঘুমাচ্ছে । গুটিসুটি হয়ে, ওপাশ ফিরে । ওর মুখটা দেখা যাচ্ছে না । আমার কেমন যেন অস্থির লাগছে । হয়তো ওর মুখটা দেখতে পারছি ...
#গল্পঃআমি_অথবা_সে
Bangla Golpo
নাফিজা ঘুমাচ্ছে । গুটিসুটি হয়ে, ওপাশ ফিরে । ওর
মুখটা দেখা যাচ্ছে না । আমার কেমন যেন অস্থির
লাগছে । হয়তো ওর মুখটা দেখতে পারছি না, তাই ।
আমি উঠে গিয়ে বিছানার ওপাশে দাঁড়াই । একটা
হাত মাথার নিচে দিয়ে আরেক হাত বুকের কাছে
নিয়ে শুয়ে আছে ও ।
কি নিষ্পাপ মুখটা ! আমি ওর
কপালে চুমু এঁকে দেই । নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোক ।
নাফিজা । আমার প্রিয়তমা স্ত্রী ।
এ ঘরে কোনো ঘড়ি নেই । আমি ঘর থেকে বেরিয়ে
নিচের রুমে যাই । সাতটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট ।
ডাইনিং টেবিলের পাশের বড় জানালাটা খুলে দেই
। ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখটা মার্ক করে
রাখতে হবে । আজ একটা বিশেষ দিন । এই দিনটা
ভুলে যাওয়া চলবে না ।
আচ্ছা মার্কার পেন কোনটা ব্যবহার করব ? কোন
রঙ ? কালো না লাল ?
সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না । মাথা ধরে যাচ্ছে ।
আজকাল এটা বেশী হচ্ছে । মার্কার পেন দুটো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ।
আচ্ছা...টস করলেই তো হয় ! এই সহজ ব্যাপারটা
মাথায় আসে নি কেন প্রথমে ! টস করলাম ।
কালো রঙ- এর মার্কার । হুমম...খারাপ
না । শোক দিবসের মত হবে । হা হা হা ।
ডাইনিং রুমে আসলাম আবার ।
ক্যালেন্ডারটাতে
২৭শে ফেব্রুয়ারি দিনটাতে মার্ক করতে গিয়ে
প্রচণ্ড অবাক হলাম । ঠিক ঐ দিনটাতেই লাল রঙ দিয়ে গোল মার্ক দেয়া ।
কে দিয়েছে এটা নাফিজা ? নাতো, ও কেন দিবে !
নাকি নাফিজা কিছু সন্দেহ করছে ? নাহ, মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না ।
হঠাৎই কথাটা মনে পড়ে যাওয়ায় হেসে উঠলাম আমি।
আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী । নাফিজা হয়তো
সেকারণেই মার্ক করে রেখেছে আজকের দিনটা ।
কিসব যা-তা ভাবছিলাম এতোক্ষণ !
আমি কালো মার্কারটা দিয়ে লাল দাগটার উপর
ঘুরিয়ে আঁকলাম ।
একটু বিদঘুটে দেখাচ্ছে দেখাক ।
মার্কার দুটো জায়গা মত ফেলে দিলেই চলবে । কেউ কোনোদিন খোঁজও পাবে না ।
নিচতলার বাথরুম থেকেই গোসল করে,ফ্রেশ হয়ে
বেরিয়ে দেখি সেই প্রিয় মুখ । নাফিজা জানালার
কাছের চেয়ারটাতে বসে আছে । শীতের সকাল ।
তবে আজ একটু রোদেলা । আবছা রোদের আলোয় নাফিজাকে আগের চেয়েও বেশী রূপবতী লাগছে ।
আনমনা হয়ে দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ও
।
“রাতে ঘুম ভালো হয়েছিল ?”
নাফিজা ঝট করে ফিরে তাকালো । মুখে ছোট
একটা হাসি ফুটে উঠল ওর । চেহারা সহজ হয়ে এলো ।
আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম ।
“হ্যাঁ...তোমার ?”
“ভালো ।”
কফি-মেকার থেকে দু’কাপ কফি বানিয়ে নাফিজার
হাতে এক কাপ ধরিয়ে দিয়ে ওর সামনের একটা
চেয়ারে বসলাম ।
বাচ্চা মেয়ের মত দু’হাত দিয়ে কাপ জড়িয়ে ধরে
অল্প অল্প করে তাতে চুমুক দিচ্ছে নাফিজা ।
আমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেই হয়তো
আমার দিকে মুখ ফেরালো ।
“কিছু হয়েছে ?”
আমি না-সূচক মাথা নাড়ি ।
“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে নাফিজা ।”
ও মাথা নামিয়ে ফেলল । লাজুক হাসি ফুটে উঠেছে ওর মুখে । আমি একইরকম মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকি ।
সেই একই চোখ,একই ঠোঁট, একই রকম নাক, চোখের সামনে এসে পড়া এক গাছি চুল প্রতিদিনই দেখি ।
শুধু আজ না, প্রতিদিনই মুগ্ধ হই । শ্যাম বর্ণের এই
মেয়েটাকে এইটুকুতেই এতো সুন্দর লাগে কেন ? অসহ্য রকমের সুন্দর !
আমি কফির কাপটা নামিয়ে রাখি । নাফিজার
কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ও যা বুঝার বুঝে ফেলে ।
“না...না...এখন না” বলে মৃদু বাঁধা দিতে চাইলেও
আমি রাজি হই না । ওকে কোলে তুলে নিই । এই
সময়টা শুধুই আমাদের । আমি একজন সুখী মানুষ । বেশ সুখী । অসুখী হবার মত
কোনো ব্যাপার আমার সাথে ঘটে না ।
হয়তো সেকারণেই মাঝে মাঝে আমার ভয়ংকর কিছু একটা করার খুব ইচ্ছা হয় ।
ভয়ংকর...খুব বেশী ভয়ংকর ।
আজ সেরকমই ভয়ংকর কিছু একটা করার মত দিন ।
***
জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমি নিজেকে আবিষ্কার
করেছিলাম আরও জনা পঞ্চাশেক ছেলেদের সাথে।
বড় একটা হলরুমে থাকতাম । একসাথে
খেতাম,ঘুমাতাম,পড়তাম,মারামারিও করতাম ।
জায়গাটাকে সবাই এতিমখানা বলে ।
আমি কি এতিম ছিলাম ?
যার বাবা-মা নেই তাকে এতিম বলে । আমার বাবা-মা ছিল ।
আমি ছিলাম তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান । আমার অবস্থা অনেকটা ‘থেকেও নেই’ এর
মত ।
হ্যাঁ, সেই অর্থে তাহলে আমি এতিমই ।
বাংলাদেশে এতিমখানা নিয়ে খুব খারাপ কিছু
ভাবা হয় । অনেকে ভাবে যে, এতিমখানার ভেতরে
কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই নেই । ভুল ভাবে ।
আমাদের বেশ কড়াকড়ি নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে
হত । খাবার-দাবারও ভালো ছিল । প্রতি শুক্রবারে
মাংসের ব্যবস্থা ছিল । শুক্রবারের দিনটাতেই
মারামারিটা বেশী হত আমাদের মধ্যে । খাবার
নিয়ে কাড়াকাড়ি ।
সেসময় নেয়ামত আলী হুজুর আমাদের সবাইকেই
জালি বেত দিয়ে পেটাতেন । কেউ বেশী ঝামেলা
করলে তাকে আলাদা করে নিয়ে শাস্তি দেয়া হত ।
ভয়াবহ শাস্তি ।
আমাদের এতিমখানা জীবনের বিভীষিকা ছিল এই
লোকটা ।
সেখানে থাকাকালে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু
ছিল আব্দুল্লাহ । একদিন নেয়ামত হুজুরের শাস্তির
পাল্লায় পড়ে ও । ফলাফল, রাতে প্রচণ্ড জ্বর ।
একসময় রক্তবমি । রাত পেরিয়ে ভোর হবার আগে
আগেই মৃত্যু । সারাক্ষণ আমি ওর পাশেই ছিলাম ।
আব্দুল্লাহ মারা যাবার সময় ওর হাত আমার হাতে
ধরা ছিল । কি শান্ত,চুপচাপ সে মৃত্যু । আমি টেরই
পাই নি বলতে গেলে ।
পরদিন হুজুর বয়ান দেন, “আব্দুল্লাহর মৃত্যু
স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে । আল্লাহ-পাক ওর মৃত্যু
এভাবে নির্ধারণ করে রেখেছিলেন । ওর সেটাই
হয়েছে । তা নিয়ে আমাদের কোনো দুঃখ করা উচিত নয় ।
মৃত্যু নিয়ে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে
এরশাদ করেছেন...”
আমি সেদিন চুপ করে ছিলাম । অন্যান্য দিনের মতই ।
এতিমখানায় আলিম পাস করা পর্যন্ত রাখা হয় ।
আমি আলিম পরীক্ষার ফলাফল দেয়া পর্যন্ত সেই
সেখানেই ছিলাম । এতিমখানাতে থাকার শেষ দিন
আমি হুজুরের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা পাই ।
আর চলে আসার আগে হুজুরের অতি প্রিয় কাপড়
ইস্ত্রির মেশিনটার তার আর প্লাগের লাইন ওলট-
পালট করে দিয়ে আসি ।
আমি এতিমখানা থেকে চলে আসার দিনই নেয়ামত আলী হুজুরের মৃত্যু হয় ।
আমি ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়েছিলাম ।
পজিশন শেষের দিকে ছিল । তারপরও ঢাকা
মেডিকেল তো !
সবার সুন্দর সুন্দর জামা-কাপড়,গাড় ি,বাড়ি দেখে আমার খুব লোভ লাগত ।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, আমি একদিন বড়লোক হব ।
বিশাল বড়লোক । মেডিকেলে পড়ার সময়েই আমি নেয়ামত আলী
হুজুরকে খুন করার ঘটনাটা নিখুঁতভাবে লিখে চরিত্র- নাম পালটে ছদ্মনামে পাঠিয়ে দেই একটা দৈনিক পত্রিকায় । ওরা সেটা ছাপায় । লেখাটা কেমন করে যেন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় । আমার ছদ্মনাম ছিল ‘খুনে লেখক’। এই নামটা তখন রটে যায় ভার্সিটির অনেক ছাত্র-ছাত্রীর মুখে। আমার শুনতে বেশ ভালোই লাগত ।
তবে, আমি কখনও আমার পরিচয় ফাঁস করিনি ।
এম বি বি এস শেষে প্র্যাকটিসের জন্য বিভিন্ন
হাসপাতালে যাওয়া লাগত । আমার পুরনো ইচ্ছাটা
মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইত । ভায়োলেন্স । আই লাভ ভায়োলেন্স ! কিন্তু আমি কিনা শেষমেশ হলাম চাইল্ড স্পেশালিষ্ট ।
ছোট ছোট বাচ্চা-কাচ্চাদে র সর্দি,কাশি,পেট ব্যথার ডাক্তার ! বছর দুই এর মাথায় আমি ডাক্তারী থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নেই ।
সাত বছর ধরে করা টিউশনির সব টাকা,পার্ট টাইম টিচার ছিলাম সেটার টাকা আর ডাক্তার হিসেবে দু’বছরে আয় করা জমানো সব টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম ! অনেক টাকা ! আমি সব টাকা দিয়ে একটা ঔষধের দোকান খুলে বসি ।
অখণ্ড অবসর পুরনো লেখালিখির ইচ্ছাও জেগে উঠল ।
কিন্তু খাতা,কলম নিয়ে বসে একটা লাইনও লিখতে পারলাম না ।
আমি খুনে লেখক । খুন ছাড়া আমার লেখা সম্ভব না ।
সেদিন রাতেই আমি বেরিয়ে পড়ি । অনেক হাঁটতে
হাঁটতে কাকরাইলের মোড়ের কাছে একটা বন্ধ হয়ে
যাওয়া রেস্টুরেন্টের সামনে ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট
একটা বিড়ালছানা পাই । বিড়ালটা সাদা রঙ এর ।
তবে চোখের পাশে আর পিঠে কালো রঙের ফুটকি
আছে ।
বেশ সুন্দর ! রাস্তার পাশে অর্ধেকটা থান ইট পড়ে ছিল ।
আমি সেটা তুলে নেই সন্তর্পণে । সম্পূর্ণ জোর না দিয়ে খানিকটা আস্তে বিড়ালটার মাথায় ইটটা দিয়ে আঘাত করলাম । বিড়ালটা ভয় পেয়ে,ব্যথায় অদ্ভুত স্বরে চেঁচিয়ে উঠে পালাতে চাইলো । সেই মুহূর্তে আমি ওটার একটা পা সম্পূর্ণ পিষে দিলাম ।
বিড়ালটার আর্ত-চিৎকার শুনতে বেশ ভালো লাগছে ।
ধীরে সুস্থে আমি বিড়ালটাকে মারতে থাকি
একেবারে থ্যাতলা করে দেই ।
আমি ফিরে গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় পুরো ঘটনাটা
গল্পের আকারে লিখে পাঠিয়ে দিলাম সেই
পত্রিকার সম্পাদকের ঠিকানায় ।
গল্পের নাম“আর্তনাদ” ।
সাত বছর পর আমার এই লেখা আবারো তুমুল জনপ্রিয় হল । আমি খুশিতে ফেটে পড়লাম । কিন্তু পরিচয় ফাঁস করিনি ।
আমি এরকম প্রায় প্রতিরাতেই একটা একটা করে খুন করতাম,কাউকে বিপদে ফেলে তারপর সেই
মানুষটাকে লক্ষ্য করতাম ।
তারপর সেই ঘটনাগুলোরপুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা লিখে দিতাম । দিন দিন আমার লেখা জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠতে লাগল ।
আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি না । তবে এরকম কোন
একটা ব্যাপার আমার মধ্যে খুব বেশী পরিমাণে ছিল ।
মাত্র দুই বছরের মধ্যেই আমার দোকান থেকে প্রচুর পরিমাণে লাভ আসলো ।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি একটা ফার্ম খুলে বসলাম ।
আমাকে যে বড়লোক হতে হবে !
আমি লেখা পাঠানোর সময় খুব সাবধান থাকতাম।
প্রাপকের জায়গায় কিছু লিখতাম না । হাতের লেখা স্পষ্টভাবে যাতে বোঝা না যায়, তাই ইচ্ছা করে ছোট,বড় করে লিখতাম । পত্রিকাওয়ালারা আমাকে সম্মানীসূচক টাকা দিতে চাইলেও আমি নেই নি কখনো । রাস্তায় চলতে,ফিরতে গিয়ে নিজের লেখার প্রশংসা যখন শুনতাম, খুশিতে মন ভরে যেত ।
কেমন যেন এক অদ্ভুত আত্মতৃপ্তির অনুভূতি ।
নাফিজার সাথে দেখা হয় এরকমই এক সময়ে । আমি কখনই রোমান্টিক কিছু ছিলাম না । ভার্সিটিতে পড়ার সময় অনেক মেয়েই আমার সাথে মিশতে চেয়েছে, আমিই তাদের সবসময় এড়িয়ে গিয়েছি ।
ওসব মেয়েরা আমার সঙ্গ চাইতো । সঙ্গটা সৎ ভাবে ছিল না ।
বোকা মেয়ের দল ! কিন্তু...কিন্তু নাফিজা অন্যরকম ছিল । ছিল মানে এখনো আছে ।
ওর মধ্যে কিছু একটা আছে যেটা সবার থেকে আলাদা ।
সেটা হল, এই মেয়েটার ভালোবাসার ক্ষমতা । এই
মেয়েটা ভালোবাসতে জানে । ও আমাকে ভালোবাসে ।
অনেক অনেক বেশী ভালোবাসে । আমিও নাফিজাকে ভালোবেসেছিলাম । এখনও বাসি । নাফিজার সাথে পরিচয়ের পর বিয়ে হয়ে
যেতেও খুব বেশী সময় লাগেনি । মধ্যবিত্ত ঘরের
মেয়ে ছিল । আমি ততদিনে বেশ বিত্তবান । ওর
বাবা-মাও বিয়েতে মত না দেয়ার কোনো কারণ
পান নি ।
লেখা নিয়ে আশেপাশের মানুষজনের কাছ থেকে
নানারকম মন্তব্য শুনে আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, বই
বার করব । এ বুক, ফুল অফ কমপ্লিট ভায়োলেন্স ! এমন গল্প, এমন ভয়ের অনুভূতি আগে কেউ কখনো পড়ে নি ।
আমার ফার্মের অবস্থা তখন বেশ ভালো ।
মাত্রাতিরিক্ত ভালো । উন্নতির দিকে এগিয়ে
যাচ্ছিলাম দ্রুত ।
প্রায় চার হাজার কর্মী রয়েছে আমার এখানে । আমার পরবর্তী গল্পের টার্গেট হল এই কর্মীদের মধ্যে প্রধান দুজন (সুমন এবং বশির) ।
আমি খুব সূক্ষ্ম চাল ফেললাম । প্রথমে এই দুজনের মধ্যে একটা ঝগড়া লাগানোর ব্যবস্থা করি রফিককে দিয়ে । রফিকও আমার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী ।
বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী । সেও আমার পরিকল্পনার একটা অংশ । ঝগড়া-কলহ থেকে একসময়
কোন্দল,আন্দোলন,ধর্মঘট । মোক্ষম সময় ।
আমি রফিককে ডেকে এনে পুরো জায়গাটায় আগুন লাগিয়ে দেয়ার জন্য বলি ।
রফিক অবাক হলেও দ্বিমত করে না ।
পুরো কারখানাটা যখন দাউ দাউ করে আগুনে
জ্বলছিল আমি তড়িঘড়ি করে পুলিশ ফোন দিয়ে
জানাই । তারপর ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেই ।
আমার কাঁচের দেয়ালের রুমটা থেকে আগুনের শিখা
দেখা যাচ্ছিল বেশ স্পষ্টভাবে । আমি ড্রয়ার থেকে
নতুন কেনা রিভলভারটা বের করে নিলাম । কেনার
পর থেকেই নিয়মিত প্র্যাকটিস করে হাত পাকিয়ে
ফেলেছি । গুলির চেম্বারটা চেক করে, ঠিকমত
পরিষ্কার করে নিয়ে হাতের কাছে রাখলাম ।
রফিক একটু পরেই আসবে ওর পাওনা টাকা নিতে।
মনে মনে হাসলাম আমি ।
আমি রফিককে গুলি করি ঠিক কপালের মাঝ বরাবর ।
টু শব্দ করার আগেই ওকে ধরে নিয়ে উপর থেকে
জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দেই । প্রমাণ খতম ।
রিভলভারটা আবার চেক করে নিলাম । ততক্ষণে এর মাথায় সাইলেন্সর শোভা পাচ্ছে ।
বীমা কোম্পানি তদন্ত চালিয়ে শেষ পর্যন্ত কিছুই
না পেয়ে আমাকে তাদের সন্দেহের তালিকা
থেকে অব্যাহতি দিয়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিল।
আর এর মাঝের ক’দিন আমি ঘুরে বেড়ালাম সেই
দুজনের বাসায় । (সুজন আর বশির) ।
দুজনকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে । আমিই অভিযোগ এনেছি তাদের বিরুদ্ধে ।
বশিরের বড় মেয়েটার বিয়ের কথা চলছিল । ভেঙ্গে
গেছে । সুমনের বড় ছেলেটা বাড়ি ছেড়ে গেছে
দু’তিন দিন আগে । সংসার কিভাবে চলবে তারা
সেটা জানে না । সব ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে
বসে এসেছে ।
এই যে,আমিই তাদের পরিবারের ভাঙ্গনের জন্য মূল দায়ী । একথাটা এখন তারা জানে না, তাই ধরে নিয়েছে নিয়তি, তারা শান্ত রয়েছে ।
কিন্তু যখন সব আসল কথা জানবে, তখন তারা নিয়তির হাতে সবকিছু দিয়ে বসে থাকতে পারবে না ।
তারা ছুটে আসবে আমাকে মেরে ফেলতে,প্রতিশোধ নিতে ।
রাতে ডিনারের ব্যবস্থা করলাম আমি নিজেই । প্রায়ই করি । আর কফির ব্যবস্থা করে নাফিজা । আজ কফিও আমি বানালাম । এই কফি দিয়েই হবে সব কাজ । সাদা শাড়ি পরা অবস্থায় নাফিজাকে আজকে সত্যিই অপ্সরীর মত লাগছে । কি সুন্দর, মায়াময় এই মুখটা ! কফি নিয়ে রুমে ঢোকার পর নাফিজাই দরজা লাগিয়ে দিল । ওর মুখে দুষ্ট হাসি । এটাই ওর শেষ হাসি হবে ।
গল্পে ঠিকঠাক ফুটিয়ে তুলতে হবে পুরো ব্যাপারটা।
আমি পূর্ণ মনোযোগে কাজ করতে লাগলাম । কফিতে অল্প করে পটাসিয়াম সায়ানাইড দেয়া আছে । ধীরে ধীরে কাজ করবে । আমার সেটাই চাই । কষ্ট দেয়ার পুরো প্রসেসটা সম্পূর্ণ তুলে ধরা যাবে তাহলে ।
কফির কাপটা রেখে আমি মৃদু হেসে নাফিজার হাতে হাত রাখতেই অদ্ভুত ক্ষিপ্রতায় ও আমার হাতে ইনজেকশন দিয়ে কিছু একটা পুশ করে দিল। প্রচণ্ড ব্যথায় চিৎকার করে উঠি আমি ।
“এটা কি নাফিজা !” নাফিজা হাসে । “তুমি কখনও ‘খুনে লেখক’ নামের লেখকের লেখা পড়েছ ?” আমি হা হয়ে যাই ।
ও একটু আগে আমার শরীরে কি দিয়েছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই আমার । আমার পুরো শরীর অবশ হয়ে যাওয়া শুরু করে । হাঁটু মুচড়ে বসে যাই আমি । “জানো, উনি না খুব সুন্দরভাবে মানুষের শারীরিক কষ্টের বর্ণনা লিখতে পারেন । লেখাগুলো পড়লে কেমন যেন মাদকতা ভর করে । খুন করতে ইচ্ছা করে ।
প্রচণ্ড কষ্টে মরে যাওয়ার সময় মানুষের মুখ কেমন হয়, সেটা জানতে ইচ্ছা করে । অ্যাই...তুমি কি মরে যাচ্ছ ? প্লিজ এখনই মরে যেওনা । তোমার মুখটা আর কিছুক্ষণ দেখি । খুব কষ্ট হচ্ছে, না ?
” নাফিজা আগেও বোকা ছিল, এখনও তাই রয়েছে । ও প্রচণ্ড তীব্র কোনো বিষ আমার শরীরে দিয়ে দিয়েছে । আর বেশীক্ষণ নেই । আমি বুঝতে পারছি, আর বেশীক্ষণ টিকব না আমি । আমার অস্ত্র আজ আমার উপরই প্রয়োগ করা হয়েছে । আমি ঘাড় ঘুরিয়ে নাফিজার মুখটা দেখার চেষ্টা করি । ইসস, এতো মায়া কেন মুখটায় ? ওর চোখের বিষণ্ণতাই কি এই মায়া ফেলেছে মুখে ? চকিতে আমার একটা ব্যাপার মনে পড়ে গেল । আমি হা করে দম নিতে থাকলাম । প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে । নাফিজা একমনে কথা বলে যাচ্ছে । কিছু বুঝতে পারছি, কিছু পারছি না । তবে আমাকে শেষ কাজটা করে যেতেই হবে । গায়ে যতটুকু শক্তি ছিল তার সাথে মনের পুরোটা জোর দিয়ে আমি সজোরে লাথি হাঁকাই টেবিলটার পায়ায় । কফির কাপটা উলটে পড়ে গেল মেঝেতে । আমি চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি । কাজ শেষ । আর মাত্র কিছুক্ষণ । নাফিজা আমাকে দেখুক,আমিও ওকে দেখি । শেষবারের মত । ওর চোখেমুখে কিশোরী মেয়ের মত আনন্দ ফুটে উঠেছে । আর খানিকটা উন্মাদনা । আমি কষ্ট সহ্য করে হাসিমুখে তাকিয়ে থাকি । আমার শেষ গল্পের শেষটা যে এমন হবে, সেটা আমি কখনও ভাবিনি ।
কি অদ্ভুত রকমের এই বিশ্বাস তাদের ! মরুক বোকা গাধার দল । এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা বই আমি প্রকাশ করি মাস ছয়েক পর । এটা তখনকার সময়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে বেস্ট সেলার হয়ে যায় । সবখানে শুধু একটাই নাম । ‘খুনে লেখক’ । এই কটা দিন নাফিজাকে আমি একদমই সঙ্গ দিতে পারছিলাম না । তবে ও আমার ব্যস্ততা বুঝতে পারছিল । ও ঠিক মানিয়ে নিয়েছিল । মেয়েটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়েই যাচ্ছিল দিন দিন । আমার প্রথম বই প্রকাশ হবার পর বেশ কিছু ঘটনা ঘটে যায় বেশ দ্রুত । সারা শহরে হঠাৎ করেই খুন, ডাকাতি, মারামারি বেড়ে গেল । একেবারেই সহজ-সরল মানুষজনও রাতের আঁধারে হয়ে উঠতে শুরু করল ভয়ংকর । পত্রিকায় এসব নিয়ে লেখা হল বেশ । সেসব মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা গেল, তারা এই আমার লেখা পড়েই হঠাৎ করে বর্বর দৃশ্যের অদ্ভুত সৌন্দর্যটা দেখার জন্য কৌতূহলী হয়ে উঠেছে । মৃদু হাসি আমি । যাক, আমি কিছুটা হলেও সফল । প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই অপরাধ প্রবণতা থাকে । তা নাহলে অপরাধ সমর্থন করে এতো এতো গল্প লেখা হত না । মুভি বানানো হত না । অথবা আমার মত লেখক এতো বিখ্যাত হতে পারত না । আমি বর্বরতার দৃশ্যগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ লিখতে পেরেছি বলেই মানুষজন আমার লেখা এতো বেশী পছন্দ করে । অনুকরণ করে । আমার লেখা নিষিদ্ধ করে দেয় সরকার । তাতে বরং আরও ভালোই হল । সাধারণ লেখকের চেয়ে নিষিদ্ধ লেখকের প্রতি সবার আকর্ষণ সবসময়েই বেশী থাকে । এর কিছুদিনের মধ্যেই আবার খবর পাওয়া গেল, আমার গল্পের কাহিনীর সাথে কারখানা পুড়িয়ে ফেলার ঘটনার মিল পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ । কিন্তু কোনো প্রমাণের অভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না । আর এসব খবরই পেলাম দৈনিক পত্রিকাগুলোতে । এই বোকা সাংবাদিকরা কি জানে না যে, তারা যেসব তথ্য প্রকাশ করে সেগুলো অপরাধীদের জন্য কতটা উপকারী ? আমি কিছুদিন গা ঢাকা দেওয়ার কথা ভাবলাম । অফিসে ছুটি ঘোষণা করে আমি আর নাফিজা ঘুরে বেড়াতে লাগলাম । ওকে এতোগুলো দিন একদম সময় দেয়া হয়নি । আমরা কক্সবাজার,সেইন্ট মার্টিন আইল্যান্ড,মংলা বীচ,পতেঙ্গা বীচ সব জায়গায় ঘুরে বেড়াই । বিদেশে কোথাও যেতে চাইনি, কারণ গোয়েন্দারা নিশ্চয়ই এয়ারপর্টের দিকে লক্ষ্য রাখছে । সন্দেহ করতে পারে, যে, আমি দেশ থেকে পালাতে চাচ্ছি কি না । আমি সন্দেহ বাড়াতে চাইলাম না আর । নাফিজার সাথে একান্তে সময় কাটাতে কাটাতেই আমি নতুন গল্পের প্লট খুঁজতে লাগলাম । নাফিজাকে কক্ষনো আমার লেখক পরিচয় দেই নি ।একদিন সী-হোটেলের নিজস্ব সমুদ্রের জায়গায় সাঁতার কাটতে গিয়ে খেয়াল করলাম নাফিজা ডুবে যাচ্ছে । ও সাঁতার জানে না । আমার হঠাৎ করেই ইচ্ছে হচ্ছিল ডুবন্ত মানুষের মৃত্যুর সময় দেখতে কেমন লাগে তা দেখতে । কিন্তু নাফিজা আমাকে সে সুযোগ না দিয়ে আমার হাত জড়িয়ে ধরে উঠে চলে আসল । নাফিজা বেঁচে যায় সেদিন । কিন্তু আমার মাথায় আটকে থাকে ব্যাপারটা । আমার পরবর্তী গল্পের জন্য উৎসর্গিত হবে আমার স্ত্রী, নাফিজা । বহুদিন ধরে চিন্তা-ভাবনা করে এইদিনের কথা ভেবেছি আমি । আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী । আর নাফিজার মৃত্যুদিন; এখনও হয়নি...তবে হবে ।
#সমাপ্ত_গল্প
Bangla Golpo [গল্পটা পুরোপুরি কাল্পনিক,এর সাথে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই] আমাদের পৃথিবী(Earth) ছাড়াও কি অন্য কোনো সৌরজগৎ বা গ্রহে প্রাণ থাক...
Stories _Unknown
Bangla Golpo
[গল্পটা পুরোপুরি কাল্পনিক,এর সাথে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই]
আমাদের পৃথিবী(Earth) ছাড়াও কি অন্য কোনো সৌরজগৎ বা গ্রহে প্রাণ থাকতে পারে? বা পৃথিবীর মতো অন্য কোন গ্রহ থাকতে পারে? অথবা আপনার বা আমার মতো একদম হুবহু দেখতে মানুষ কি অন্য কোন এক সৌর জগতে বসবাস করছে? এটাও কি সম্ভব? বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, এটা সম্ভব।আর এই ধারনা থেকেই আসে প্যারালাল ওয়ার্ল্ড বা প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরি।অবশ্য এই থিওরির বীপরিতে অনেকের মতবাদ আছে।
নির্দিষ্ট সংখ্যার প্যারালাল ইউনিভার্সকে মাল্টিভার্স বলা হয়।বিগ ব্যাং থিওরির পর থেকেই প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের জানার আগ্রহ বেড়ে যায়।অনেকের মতে,এই মহাবিশ্বে আমাদের সৌরজগৎ বা পৃথিবী গ্রহের মতো হুবহু আরও অনেক সৌরজগত এবং গ্রহ রয়েছে।প্যারালাল ইউনিভার্সের ধারণা অনুযায়ী, হয়তো এই গ্রহে আপনি একজন ডাক্তার হলে অন্য প্যারালাল বিশ্বের গ্রহে আপনি একজন ক্রিকেটার হতে পারেন।আবার আমারা যা কল্পনা করি তা হতে পারে অন্য কোন মাল্টিভার্স-এর রিয়ালিটি।
প্যারালাল ইউনভার্স সম্পর্কে অনেকর দ্বিমত পোষণ থাকলেও অনেকেই এটা নিয়ে গবেষণা করে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।তেমনি একজন সফল গবেষক বাংলাদেশের আনোয়ার হোসেন।আনোয়ার হোসেনের বয়স প্রায় ৬৫ ছুইছুই,পরিবার বলতে তার শুধু রয়েছে ছোট ৬ বছরের একটা নাতিন নাম হিমেল।আজ দাদু নাতিন মিলে আনোয়ার হোসেনের ল্যাবে এসছে।ল্যাবে আজ কেউ নেউ,ল্যাবের অন্যনো সহকর্মিকে আজ ছুটি দিয়েছেন আনোয়ার হোসেন।
ল্যাবে এসেই ছোট হিমেল হা করে আছে,তার দাদু আনোয়ার হোসেন তার নাতির এভাবে হা করা দেখে একহাত দিয়ে মুখটা বন্ধ করে দিল আর বলল...
দাদুভাই আমি জানি আজ তুমি এখানে প্রথম তবে এভাবে থাকলে যে মুখে মশা ডুকবে আর মশা পেটে গেলে আর মারতে পারবা না ভিতর থেকেই মশা কামরাবে (আনোয়ার হোসেন)
দাদুর কথা শুনে চোখ বড়বড় এবার নিজের মুখ নিজেই চাপ দিয়ে ধরল হিমেল আর আশপাশটা দেখতে লাগল।তার দাদু একটু মুচকি হাসল আর দেখতে লাগল কি করে তার নাতি।
হিমেল একটু পরপর একেকটা জিনিস তার দাদুর কাছে জিজ্ঞাস করছে আর তার দাদু খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিচ্ছে।যদিও প্রায় সব কিছুই হিমেলের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
একটু পর হিমেল ল্যাবের এক কোণে এসে পৌছায় আর দেখে একটা বৄত্তাকার মেশিনের মত কিছু একটা।কৌতহলী মনে দাদুর দিকে চাওয়ার পর দাদু বলে উঠে ...
এটাই সেই কাঙ্খিত জিনিস যার ফলে আমরা অন্য মাল্টিভার্সে যেতে পারব,তবে এটা এখনো সম্পূর্ণ নয় দাদুভাই(আনোয়ার হোসেন)
দাদুর কথা তেমন না বুঝলেও মেশিনটির দিকে তাকিয়ে হিমেলের চোখ ছলছল করে ওঠে।হঠাৎ হিমেল মেশিনটির একবারে কাছে চলে যায় আর কাছে থেকে মেশনটির বৃত্ত মত জিনিসটা ধরে দেখতে থাকে।তার দাদুও পিছে পিছে ধরতে আসে কিন্তু মেশিনের কাছে যাওয়ার আগে নিচে পরে থাকা একটা তারের সাথে হোচট খায়।তারটি ছিলো একটি লাইন বোর্ডের তার,হ্যাচকা তারে টান লাগতেই লাইনবোর্ডের ইলেকট্রিকাল সটসার্কিট হয়।লাইনবোর্ডের একটি লাইন সেই মেশিনটাতেও গেছে।কিন্তু মেশিনটা সর্টসাকিটে খারাপ হওয়ার বদলে মেশিনের সেই বৃত্তের মধ্যে কালো একটা কিছু তৈরি হয় পুরোটা জুরে।যা বৃত্তর উভয় পাশ থাকে প্রচন্ড গতিতে সব কিছু টানতে থাকে।মুহূতেই যেন ল্যাবের মধ্যে ঝর সৃষ্টি হয়।ছোট হিমেল কোন মত বৃত্তের বাইরে হাত দিয়ে আকড়ে ধরে কিন্তু এতে যেন কোন কাজ হচ্ছেনা।হিমেলের অর্ধেক শরীর বৃত্তের ভিতরে চলে গেছে ।তার দাদু কোনমতে একটা শক্ত টেবিল ধরে আর তার নাতির দিকে একনজর তাকিয়ে এই ঝড়ের মধ্যে ও চেষ্টা করতে থাকে মেইনসুইচ বন্ধ করার।ঠিক সেই মহূর্তে কোথাথেকে যেন একটা বক্স উরে আসে আর হিমেলের কাধে লেগে।ছোট শরির ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে আর হাত ছেড়ে দেয় ।মহূর্তে হারিয়ে যায় বৃত্তের দেই অন্ধকারে ছোট শরীর।
আনোয়ার হোসেন তার নাতির অবস্থা দেখে একটা জোরে চিৎকার দেয়,কিন্তু আনোয়ার হোসেনর চিৎকার শেষ হওয়ার আগেই একটা বিস্ফোরন হয় ল্যাবের মধ্যে।মহূর্তেই হারিয়ে যায় দুটি প্রাণ......
(এটা আমার লেখা সর্বপ্রথম গল্প,জানিনা কেমন হল।চেষ্টা করব প্রতিদিন পর্ব দেওয়ার,লেখায় ভুলগলো দয়া করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
#পার্ট:1
#writer:হিমেল
Unknown
Bangla Golpo পুত্র: বাবা, আমি বিয়ে করতে চাই।💏 পিতা: স্যরি বল্।🤨 পুত্র: কেন!🤔 পিতা: স্যরি বল্।🤨 পুত্র: কিন্তু কেন?🤔 পিতা: আগে স্যরি বল্।...
আমি বিয়ে করতে চাই